ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এখন নির্বাচনের আমেজ বইছে। এবার দ্বিতীয় বারের মত হতে যাচ্ছে ডিমিউচুয়ালাইজেশন স্টক এক্সচেঞ্জে পরিচালক নির্বাচন। এর আগে স্টক এক্সচেঞ্জে ডিমিউচুয়ালাইজড হয়ে যাওয়ার পর একবার নির্বাচন হয়েছে। আগামী ১৫ মার্চ এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। পুঁজিবাজারে ডিমিউচুয়ালাইজেড স্টক এক্সচেঞ্জে দায়িত্বশীল পরিচালক পাওয়া বিনিয়োগকারীদের কাছে অভিভাবকের মত। এর আগে সিএসইর পরিচালকদের দায়িত্বহীন আচরণের কারণে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক পদত্যাগ করেছেন। বিএসইসির তদন্তের পর সিএসইর এমডির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও সিআরও অভিযুক্ত থাকার কারণে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের কাছে ঢাকা স্টক এক্সচেনজের পরিচালক পদের নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ। ডিএসই নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক নির্বাচনের জন্য দুই ট্রেকহোল্ডার মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। একটি আসনের বিপরীতে মিডওয়ে সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রকিবুর রহমান ও বিএলআই সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন এমন কোনো পরিচালক পুঁজিবাজারে আসা উচিৎ নয় যারা অতীতে বিভিন্ন কারসাজির সাথে জড়িত ছিল। যা বিনিয়োগকারীদের জন্য আরো আতঙ্কের কারণ হতে পারে। তাই পুঁজিবাজারে বর্তমানে যারা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে তাদের সাথে নতুন যোগ্য ও দায়িত্বশীল পরিচালক পুঁজিবাজারে প্রয়োজন।নির্বাচনের প্রার্থিতা বাতিল বা প্রত্যাহার করতে চাইলে আগামী ৭ মার্চ বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে। ওই দিন বিকেল ৫টায় যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। স্টক এক্সচেঞ্জ ভবনে আগামী ১৫ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। গণনা শেষে ফলাফল প্রকাশ করা হবে। তবে ডিএসইর ৫৪তম বার্ষিক সাধারণ সভায় আনুষ্ঠানিক ফল প্রকাশ করা হবে। ডিএসইর নির্বাচন বিষয়ে ৩ সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিটি প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আব্দুস সামাদ। নির্বাচন কমিশনের অন্য দুই সদস্য হলেন- হারুন সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হারুন-উর-রশিদ এবং এম অ্যান্ড জেড সিকিউরিটিজ লিমিডেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. মনজুর উদ্দিন আহমেদ। নির্বাচনের পর নতুন ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ও ডিমিউচুয়ালাইজেশন স্টক এক্সচেঞ্জে স্ট্রাটেজিক পার্টনার খুঁজে পাওয়া আরো বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। এদিকে বুক বিল্ডিং সিস্টেম সফটওয়্যার চালু করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। ডিএসইর এমআইএস বিভাগের উদ্যোগে নিজস্ব প্রকৌশলী দ্বারা এই সফটওয়্যার উদ্বোধন করা হয়েছে। নতুন এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে একটি নতুন কোম্পানির প্রথম বিডিং কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়। এছাড়াও পাবলিক ইস্যু রুলস ২০১৫-এর আইন অনুযায়ী সিস্টেমটির পুননির্মাণের কাজ চলছে। এদিকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন কর্তৃক তিতাসের ট্যারিফ পুননির্ধারণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করছে । বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে সরকারী পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি- তিতাসের স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তের খেসারত দিচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের জন্য তিতাস গ্যাস এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন শেয়ার প্রতি আয় ৯ টাকা হওয়ার পরেও কোম্পানিটি ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। যেখানে আগের বছর কোম্পানিটি ৩৮ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে তিতাসের দর কমে ৬১ শতাংশ। ২০০৮ সালে কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরে কোম্পানির লভ্যাংশে এত বড় ব্যবধান এই প্রথম। যা বিনিয়োগকারীদের ভোগান্তি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।তিতাসের এ ধরনের সিদ্ধান্তের পরে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে সরকারী শেয়ারগুলোর উপরে বিনিয়োগকারীদের আস্থা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। অভিজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন কর্তৃক তিতাসের ট্যারিফ পুননির্ধারণ সংক্রান্ত এ ধরনের সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারণার সামিল। তিতাস একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হওয়া সত্বেও এ ধরনের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে গোপন রাখা যুক্তি সংগত ছিল না। এতে স্টক এক্সচেঞ্জে লিস্টিং রেগুলেশনকে লংঘন করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে তিতাসের দরে ব্যাপক ধস নেমে আসলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্রোকার এসোসিয়েশন তাদের ক্ষুব্ধ মতামত প্রকাশ করে। বাজারের ব্যাপক দরপতনের অন্যতম কারণ হিসেবে তিতাসের দরপতন উল্লেখযোগ্য। ৯৮৯ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে সরকারী এই শেয়ার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে। যেখানে এই কোম্পানির বিদেশী বিনিয়োগকারী ৪ শতাংশ থাকলেও বর্তমানে বিদেশীদের কাছে কোনো শেয়ার নেই। সাধারণ জনগণের কাছে আছে ৭.১৫ শতাংশ শেয়ার। পুঁজিবাজারে তিতাস ছাড়াও এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের ট্যারিফ কমানোর কারণে আরো ৬টি কোম্পানিসহ ৭টি কোম্পানির শেয়ারে ব্যাপক দরপতন হয়। তিতাস গ্যাস এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ৬ মাসের তথ্য ঘাটলে দেখা যায়- ২০১৫ সালের আগস্টে কোম্পানিটির দর ৭৬ টাকা থাকলেও গত ৬ মাসে কোম্পানিটি দর হারিয়ে ৪২ টাকা ২০ পয়সায় নেমে আসে। যা বিনিয়োগকারীদের বাজারের প্রতি আরো বেশি আস্থাহীন করে তোলে।তিতাসের লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা তৈরি করলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বিএসইসি তিতাসের শেয়ারের দর পতনের কারণ অনুসন্ধানের জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের ২ জন কর্মকর্তার সমন্বয়ে ১১ নভেম্বর ২০১৫ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং ৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট কমিশনে দাখিল করতে বলা হয় । ডিএসইর তদন্ত রিপোর্ট কমিশনে দাখিল হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থার গাফিলতি বিনিয়োগকারীদের ভোগান্তি আরো বাড়িয়ে দেয়। দীর্ঘ তিন মাসে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ না করলেও এব্যাপারে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কোনো সিদ্ধান্ত নেয় নি। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ ধরনের খামখেয়ালী আচরণে ক্ষুব্ধ সাধারণ বিনিয়োগকারীরা । ৩০ আগস্ট ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী তিতাসের বাজার মূলধন হারিয়েছে ৩,১০৬ কোটি টাকা । এই একটি মাত্র কোম্পানির সিদ্ধান্তের কারণে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত সরকারী শেয়ারগুলোর বাজার মূলধন হারিয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে নেতিবাচক প্রভাব পুরো বাজারকে প্রভাবিত করেছে। এদিকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন, বিদ্যুৎ বিভাগ খুব দ্রুত বাংলাদেশ ব্রোকার এসোসিয়েশনের সাথে বৈঠকে বসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তবে তিতাসের ব্যাপারে বিএসইসির সঠিক সিদ্ধান্ত না নেয়া হলে পরবর্তীতে অন্যান্য সরকারী শেয়ারে এধরনের প্রতারণা বিনিয়োগকারীদের আরো ক্ষতিগ্রস্থ করবে। বিএসইসির উচিৎ আর কালক্ষেপণ না করে দ্রুত সময়ের মধ্যে এধরনের ঘটনা কেন ঘটলো তা বের করা এবং দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যাবস্থা করা। আর বাজারের স্বার্থে এধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যনে না ঘটে তার ব্যবস্থা করা।লেখক : বিজনেস এডিটর, এটিএন বাংলাএইচআর/পিআর
Advertisement