পড়ন্ত বিকেলে সূর্যের লাল আলো এসে পড়েছে বিশাল জলরাশিতে। আর সেই জলরাশিতে আনন্দে মেতেছে শত শত পরিযায়ী পাখির দল। শীতের বিকেলে কলকাকলিতে মুখর নীলফামারীর নীলসাগর দিঘির চারদিক। শীতের শুরু থেকেই এখানে শীতপ্রধান দেশগুলো থেকে আসে পরিযায়ী পাখি।
Advertisement
জানা গেছে, সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া ও নেপালে বছরের এই সময়ে প্রচুর তুষারপাত হয়। জীবন বাঁচাতে খাদ্যের খোঁজে এ অঞ্চলে আসে পরিযায়ী পাখি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বেছে নেয় উত্তরাঞ্চলের নিরাপদ এই স্থানটি।
পরিযায়ী পাখির আগমনে নান্দনিকতার পাশাপাশি বেড়েছে নীলসাগর দিঘির সৌন্দর্য। দিনভর সেখানে খুনসুটিতে মেতে থাকে পাখিরা। কখনো ঝাঁক বেঁধে নান্দনিক কসরতে ডানা মেলে নীল আকাশে ওড়াউড়ি করছে আবার কখনো দিঘির পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে। সেই সৌন্দর্য ও নান্দনিকতা দেখতে প্রতিদিন এখানে ভিড় করছে বিভিন্ন পেশার মানুষ। বাড়ছে নীলসাগরে পর্যটকদের আনাগোনা।
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানো গেলে নীলসাগর হবে উত্তরের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। তাই দোকান, খাবার ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানান দর্শনার্থীরা।
Advertisement
নাটোর থেকে সপরিবারে নীলসাগরে ঘুরতে এসেছেন রেখা আগারওয়াল। নীলসাগরের সৌন্দর্যের প্রশংসা করে তিনি বলেন, আসলে উত্তরে এমন একটি পর্যটন আছে এখানে না আসলে বুঝতে পারতাম না। অনেক সুন্দর পরিবেশ, পরিষ্কার-পরিছন্নতা সব মিলিয়ে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসার মতো একটি জায়গা। আর পরিযায়ী পাখির জন্যই মূলত এখানে আসা। পাখির কলকাকলিতে চারদিক মুখর।
ডোমার থেকে আসা কাজল আগারওয়াল বলেন, নীলসাগরের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছি। পরিযায়ী পাখির কিচিরমিচির আমাকে বারবার টানছে। আমার মনে হয় সবারই এখানে একবার আসা উচিত।
ঠাকুরগাঁওয়ের সৈকত ইসলাম ১০ বছর আগে একবার এসেছিলেন নীলসাগর দিঘিতে ঘুরতে। এত বছর পর আবারও এসেছেন এখানে। পরিযায়ী পাখির আগমন দেখে মুগ্ধ তিনি।
সৈকত ইসলাম বলেন, অনেক বছর আগে এসেছিলাম। চারদিক ফাঁকা ছিল। তবে এখন অনেকটা সুন্দর হয়েছে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়েছে। পরিযায়ী পাখি সৌন্দর্য আরও বাড়িয়েছে। তবে এখানে আরও নিরাপত্তা বাড়ালে হয়তো ভালো হতো৷ যেহেতু দিন দিন এখানে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ছে সেদিক বিবেচনায় নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি।
Advertisement
নীলসাগর নিয়ে নানা পরিকল্পনার কথা জানিয়ে নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, নীলসাগর ঘিরে কয়েকটি পরিকল্পনা করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের মাধ্যমে এর পাশে একটি ক্যানেল নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও এখানে বিভিন্ন আয়োজন করা হবে, যাতে এর প্রচার হয়। চারদিকে দেওয়াল নির্মাণের কাজ তো চলছেই। সব মিলিয়ে নীলসাগরের ঘুরতে আসা মানুষদের জন্য আরও ভালো কিছু অপেক্ষা করছে।
এই নীলসাগর দিঘি ঘিরে রয়েছে নানা রূপকথা। অষ্টম শতাব্দীতে গরুর পাল পানি খাওয়াতে জলাশয়টি খনন করেন বিরাট রাজা। রাজার নাম অনুসারে প্রথমে এর নামকরণ করা হয় বিরাট দিঘি। পরে রাজার মেয়ে বিন্যাবতীর নামে বিন্যা দিঘি নামেও পরিচিতি পায় এটি।
১৯৮৯ সালে নীলফামারীর তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক এই দিঘিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত করতে আধুনিকায়ন করার পরিকল্পনা নেন। পরে ১৯৯৯ সালে নীলফামারীর নাম অনুসারে এই দিঘির নাম রাখা হয় নীলসাগর।
এফএ/জিকেএস