অনেক প্রত্যাশা ছিল বাংলাদেশ দল নিয়ে। টি-টোয়েন্টিতে তাদের নিয়ে যে অপবাদ রয়েছে যে, এখনও এই ফরম্যাটে সেভাবে একটি দল হয়ে উঠতে পারেনি, সেটা এই এশিয়া কাপে ঘোচাতে পারবে মাশরাফিরা। বিপিএল, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ এবং এরপর দলের নিবিড় অনুশীলন- সব কিছু মিলিয়ে অন্য সবারমত আশা জুগিয়েছিল আমার মনেও; কিন্তু মাঠের খেলাটাই তো আসল। দিন শেষে সেরা দলটিই জয় ঘরে তুলবে- এটাই স্বাভাবিক। দুর্ভাগ্যক্রমে দিনটা বাংলাদেশের ছিল না। যে কারণে সেরাও হতে পারলো না তারা, জয়ও পেলো না।ম্যাচের শুরুতে বাংলাদেশ দল যেভাবে শুরু করেছিল, তাতে আশার বেলুন আমিও ফোলাতে শুরু করে দিয়েছিলাম। উইকেটে প্রচুর ঘাস দেখেই মনে হয়েছিল, এই ম্যাচেও চার পেসার নিয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেখলাম সেটাই ঠিক। টস জিতে এই উইকেটে ফিল্ডিং নিয়ে কন্ডিশনের সুবিধা আদায় করে নিতে চাইবে যে কোন অধিনায়কই। মাশরাফিও একই কারণে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এমনকি বোলিংয়ে এসে শুরুতে তাসকিনের বলে যেভাবে ইনসুইং দেখছিলাম, তাতে দিনটা বাংলাদেশের বলেই মনে হলো; কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখলাম, ধারণা আর বাস্তবতার মধ্যে বিশাল ফারাক তৈরী হয়ে গেছে।ঠিক কী কারণে এই ম্যাচটিতে বাংলাদেশ হারলো, তার সঠিক কারণ যদি বিশ্লেষণ করতে বসি, তাহলে তিনটি বিষয়কেই প্রাধান্য দেবো। ভালো অবস্থানে থাকার পরও যে তিনটি কারণে বাংলাদেশের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠলো। এর মধ্যে অবশ্যই আসবে রোহিত শর্মার ইনিংসটার কথা। অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছেন ভারতের এ ওপেনার। মূলতঃ তার এই ইনিংসের (৫৫ বলে ৮৩) কাছেই হেরেছে বাংলাদেশ। রোহিত এমনিতেই ভালো ব্যাটসম্যান। ভারতের নির্ভরতার প্রতীকও হয়ে উঠেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, ওয়ানডে কয়েকটি বিগ ইনিংসের কারণে তাকে সবসময়ই সবাই স্মরণে রাখবে। আজও (বুধবার) বাংলাদেশ আর ভারতের মধ্যে পার্থক্যটা তৈরী করে দিয়েছেন তিনি।একপাশে যখন বাংলাদেশের পেসারদের বল মোকাবেলা করতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে ভারতের ব্যাটসম্যানরা, তখন অন্যপাশে দায়িত্বটা নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে ব্যাট করে গেছেন তিনি। টি-টোয়েন্টিতে একজন ব্যাটসম্যানই যখন এতবড় একটা ইনিংস খেলে ফেলেন, তখন প্রতিপক্ষের ম্যাচের জয়ের আশা আর থাকে না। বাংলাদেশের পরাজয়ের পেছনে অবশ্যই রোহিতের এই ইনিংসটা সবচেয়ে বড় কারণ।তবে রোহিতের এই ইনিংসটা খেলার পেছনে আমাদের অবদানও কম নয়। ...রানে থাকতে সাকিব আল হাসান তার যে ক্যাচটা মিস করেছে, সেটা যদি মিস না হতো, তাহলে ম্যাচের ফল ভিন্নও হতে পারতো। হয়তো বা তখন বাংলাদেশ জয়ের আরও ভালো সুযোগ তৈরী করতে পারতো। কথায় বলে, ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস। আজ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেটাই হয়তো সত্যি হয়েছে। টি-টেয়েন্টি সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের খেলা। এখানে ছোট-খাট একটা-দু’টা ভুলও অনেক বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ, ছোট ভুল হলেও, সেটা পুষিয়ে আনা যায় না আর।দ্বিতীয় যে কারণটা পরাজয়ের পেছনে দায়ী, সেটা হলো খুব ভালো শুরুর পর ধারাবাহিকতাটা ধরে রাখতে না পারা। প্রথম ৫-৬ ওভারে দেখা গেছে তাদেরকে আমাদের বোলাররা ভালোই চেপে ধরতে পেরেছিল; কিন্তু শেষ দিকে এসে কেন যেন সেই চেপে ধারাটা আর থাকেনি। ফসকে গেছে। ফলে, ভারত উইকেট হারালেও রানের চাকা কিন্তু ঠিকই ছিল তাদের। ১৩-১৪ ওভারের পরই ম্যাচের চিত্র পাল্টে যায়। আমি মনে করি, বাংলাদেশের হাতের মুঠো থেকে তখনই ম্যাচটা বের হতে শুরু করে। এ সময় কেন যেন বোলাররাও বেশ কিছু লুজ বল দিয়েছিল। ভারতও নিজেদের ইনিংসটাকে বড় করার সুযোগ হাতছাড়া করেনি। এই উইকেটে ১৩০ থেকে ১৪০ও আদর্শ রান। সে জায়গায় ভারত করে ফেলেছে ১৬৬ রান। এটাই হয়ে গেছে বড় পার্থক্য। অনেকেই হয়তো বলবেন, মুস্তাফিজকে সত্যি পড়ে ফেলেছে কি না ভারত? আমি বলবো, মুস্তাফিজ অবশ্যই একজন বিশ্বমানের বোলার। তবে সব দিন তো আর সবার একরকম থাকবে না। সে এখনও অনেক কম বয়সী। তার পরিণত হওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে।বাংলাদেশের হারের তৃতীয় কারণ হিসেবে আমি চিহ্নিত করবো ভারতের তরুণ অলরাউন্ডার হার্দিক পাণ্ডেকে। ইনিংসের শেষ দিকে এসে সে যে ফিনিশিংটা দিয়েছিল, তা অসাধারণ। বাংলাদেশের সঙ্গে পার্থক্য গড়ে দিয়েছিল সে। শেষ দিকে ৩১ রান করেছে ঠিক। কিন্তু ওটাই ভারতকে বড় স্কোর গড়তে সহায়তা করেছে। বল হাতেও দারুন বোলিং করেছে ভারতের এই তরুণ।বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে কিছু বলার নাই। এটা টিম ম্যানেজমেন্টের ব্যাপার। তবে খুব অবাক লেগেছে ইমরুল কায়েসকে চার নম্বরে ব্যাটিং করতে নামতে দেখে। সে একজন ওপেনার। তাকে চার নম্বরে পাঠানোর কোনো যৌক্তিকতা দেখি না। তাতে অন্যদেরও ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তণ হয়ে যায়। যেটা পুরো দলের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলে। ওপেনিংয়ে তামিমের অভাব খুব বোধ হয়েছে। তামিম বাংলাদেশের সেরা পারফরমার। অভিজ্ঞও। পারিবারিক কারণে সে এশিয়া কাপ খেলতে পারছে না। সে খেলতে পারলে পরিস্থিতি ভিন্নও হতে পারতো।তবুও শুভ কামনা রইল টিম বাংলাদেশের প্রতি। এই ম্যাচে লব্ধ অভিজ্ঞতা, ভুল-ভ্রান্তিগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী ম্যাচে আরও ভালো করতে পারবে বাংলাদেশ।লেখক: বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার।আইএইচএস/বিএ
Advertisement