ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কিছু কৃষক পেঁয়াজের খোলা বীজ কিনে বীজতলা দেন। পরে বীজতলা থেকে উঠিয়ে জমিতে রোপণের কিছু দিন পর দেখেন, গাছ লাল হয়ে গেছে। আবার অনেক ক্ষেতে গাছ নেই বললেই চলে। গাছ মরে অনেকটা খালি হয়ে গেছে মাঠ।
Advertisement
এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পেঁয়াজ চাষিরা বীজ ব্যবসায়ীদের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন উপজেলা কৃষি অফিসের সামনে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার সারুটিয়া, বগুড়া, মনোহরপুর, আউশিয়া, হরিহরা, সাতগাছিয়া, মৌকুড়ি, ভাটই, দুধস্বর, তামিনগর, ধাওড়া, পাইকপাড়া, বিজুলিয়া, দামুকদিয়া, মহিষাডাঙ্গাসহ বেশকিছু এলাকায় মাঠে কয়েক হাজার বিঘা জমিতে এই অবস্থা হয়েছে।
কৃষি বিভাগ বলছে, শৈলকুপা উপজেলায় এবছর ৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এরই মধ্যে ৮ হাজার ৭৪০ হেক্টরে চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ১০০ হেক্টর জমির চারা মারা গেছে বলে ধারণা করছেন তারা।
Advertisement
আরও পড়ুন: প্রতি কেজি পেঁয়াজে কৃষকের খরচ ২৫, আয় ১৫
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর এ উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজের চাষ হয়। এ কারণে এখানে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারা কৃষকের ঘরে সংরক্ষিত বীজকে ভারতীয় লাল তীর বলে বিক্রি করেছেন। কৃষকরা সরল বিশ্বাসে সেই বীজ কিনে চাষ করতে গিয়ে পড়েছেন বিপাকে।
মনোহরপুর গ্রামের কৃষক স্বপন মিয়া জানান, রতনাট গ্রামের খবির উদ্দিনের কাছ থেকে খোলা বীজ কিনে নভেম্বর মাসে বীজতলায় ছিটিয়ে দেন। এরপর ডিসেম্বরের শেষে ও জানুয়ারির শুরুতে সেই বীজতলা থেকে চারা উঠিয়ে এক বিঘা জমিতে রোপণ করেন। জমিতে রোপণের পর সেগুলো এক সপ্তাহের মধ্যে সবুজ গাছ হয়ে যাবার কথা। কিন্তু গাছগুলোর শেকড় তৈরি হয়নি, সবই নষ্ট হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: আশা-আশঙ্কায় ভর করে পেঁয়াজের মাঠে পাবনার চাষিরা
Advertisement
উপজেলার মহিষাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক বিজন বিশ্বাস বলেন, ৬ হাজার টাকা কেজি করে ১২ কেজি বীজ কিনেছিলাম। বিক্রেতা বলেছিল এটি ভারতীয় লাল তীর জাতের পেঁয়াজ। কিন্তু পেঁয়াজ লাগানোর পর গাছ মরে গেছে। এখন শুনছি এটা ভেজাল বীজ।
হরিহরা গ্রামের জাহিদুল ইসলাম জানান, এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করতে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এক বিঘায় ৫৫ থেকে ৬০ মন পেঁয়াজ পাওয়া যায় যা বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা মতো আয় হয়। কিন্তু এবার কৃষককে চরম লোকসান দিতে হবে।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে হালি পেঁয়াজের চারা রোপণের ধুম
এ বিষয়ে বীজ বিক্রেতাদের একজন খবির উদ্দিন জানান, তিনি পার্শ্ববর্তী পাংশা উপজেলা থেকে বীজ এনে বিক্রি করেছেন। তারা ভালো বীজ বলেই বিক্রি করেছে। এখন গাছ কেন মারা যাচ্ছে তা বুঝে উঠতে পারছেন না। তবে তিনি যে কৃষকের কাছে বীজ বিক্রি করেছেন, তাদের সাধ্যমতো ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেবেন।
এ ব্যাপারে শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিছুজ্জামান খান বলেন, কৃষকদের অভিযোগের পর তারা ৩ সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করেছেন। প্রতারণার বিষয়টি সঠিক হলে যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এমএইচআর/জেআইএম