নদ-নদী দখলদারদের তালিকা তৈরির প্রকল্পের কিছু কর্মী নদীর সমীক্ষাস্থলে না গিয়ে ভুয়া ডাটা দিয়েছে বলে দাবি করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী।
Advertisement
প্রকল্পের মাধ্যমে চিহ্নিত ৩৭ হাজার ৩৯৬ জন নদী দখলদারদের তালিকা নদী রক্ষা কমিশন ওয়েবসাইট থেকে মুছে দিয়েছে বলে কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে দেওয়া ব্যাখ্যায় কমিশনের চেয়ারম্যান এ দাবি করেছেন। মনজুর আহমেদ চৌধুরী তার ফেসবুকে এ ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের নদ-নদী দখলদারদের তালিকা তৈরিতে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন (এনআরসিসি)। এর কাজ শেষ হয় গত ডিসেম্বরে। প্রকল্পটির মাধ্যমে ৩৭ হাজার ৩৯৬ নদ-নদী দখলদারকে চিহ্নিত করা হয়, যা এনআরসিসির ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু ডিসেম্বরেই এক সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সে তালিকা ওয়েবসাইট থেকে মুছে দিয়েছে এনআরসিসি নিজেই। এমনকি প্রকল্পের প্রতিবেদনও গ্রহণ করেনি কমিশন।
আরও পড়ুন>> দখল-দূষণে ধুঁকছে যশোরের প্রাণ ভৈরব নদ
Advertisement
এ সংবাদকে ‘বিভ্রান্তিকর’ মন্তব্য করে কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, ৪৮ নদী সমীক্ষা প্রকল্পের কোনো ডাটা বা তথ্য মুছে ফেলা বা ডিলিট করা হয়নি। ডাটাসমূহ আমরা এখনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ বা পাবলিশ করিনি, কারণ কেবল মাত্র দু’সপ্তাহ আগে প্রকল্পের পক্ষ থেকে ডাটা ও অন্যান্য তথ্য, ফাইল, ইত্যাদি কমিশনে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবকিছু যাচাই, বাছাই করে তারপর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী
তিনি বলেন, ডাটাবেজটা যে সফটওয়্যারে (এসকিউএল) সংরক্ষণ করা হয়ছে তা প্রকল্প কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে প্রকল্প শেষ হওয়ার মাত্র ১৮ দিন আগে ক্রয় করে। গত পাঁচ বছর যাবৎ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ একটা ফ্রিওয়্যারে ডাটা সংরক্ষণ করতো। সদ্য ক্রয়কৃত সফটওয়্যারটি কি জেনুইন না পাইরেটেড তা বুয়েট কিংবা বিসিস’র ল্যাবে পরীক্ষা না করে নিশ্চিত হওয়া যাবে না। এ বিষয়ে তাদের বারবার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও তারা ডাটাবেজ কিংবা সফটওয়্যারটি পরীক্ষার কোনো উদ্যোগ নেননি। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন যে যথাযথ পরীক্ষা ছাড়া ডাটাবেজটি কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা সমীচীন হবে না।
প্রকল্পের পক্ষ থেকে নদীর তীর বরাবর ১০ মিটার জায়গার স্থাপনার তালিকা দেওয়া হয়েছে, কোনো দখলকারীর তালিকা দেওয়া হয়নি দাবি করে চেয়ারম্যান বলেন, ওই স্থাপনার তালিকাটি যথাযথ কিনা তা যাচাই করার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়ছে। কমিশন জানতে পেরেছে যে কিছু, কিছু ক্ষেত্রে প্রকল্পের কিছু কর্মী নদীর সমীক্ষাস্থলে না গিয়ে মনগড়া ভুয়া ডাটা দিয়েছেন। কমিশন যাচাই-বাছাই ব্যতিরেকে এ ধরনের তথ্য প্রকাশ করতে পারে না।
Advertisement
তিনি আরও লিখেছেন, এই প্রতিবেদনে দেখলাম যে কমিশনের একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘তিনি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারেন যে, এ প্রতিবেদনে একটি তথ্যও ভুল বলার সুযোগ নেই।’ সাবেক চেয়ারম্যান এই ঢালাও বক্তব্য দেওয়ার আগে একটু কষ্ট করে তার কোনো প্রাক্তন সহকর্মীকে যদি জিজ্ঞাসা করতেন তা হলে জানতে পারতেন যে তার আমলে সমীক্ষাকৃত আড়িয়াল খাঁ নদের এক তৃতীয়াংশ সমীক্ষা না করেই রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। তিনি আরো জেনে হতবাক হতেন যে আত্রাই, বড়াল নদীর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। তিনি হয়তো সরল মনে প্রকল্পের কর্মীদের কথা বিশ্বাস করেছেন। কিন্তু তারা তার বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন।
আরও পড়ুন>> নদী রক্ষা কমিশনকে শক্তিশালী করার দাবি জাতীয় কমিটির
প্রকল্পের একজন কর্মী চার মাস কাজ করেননি জানিয়ে মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, অথচ মাসে মাসে বেতন ঠিকই উঠিয়ে নিয়ে গেছে। প্রতিবেদনটিতে আরেকজনের মন্তব্য পড়ে মনে হলো তিনি ডিজিটাল যুগে বাস করেও কেন যেন বুঝতে পারছেন না যে ডাটা ডিলিট করা আর ওয়েবসাইটে ডাটা পাবলিশ না করা এক জিনিস নয়। তাকে আস্বস্ত করতে চাই যে, কমিশনের ওয়েবসাইটে ৫৭ হাজারের অধিক দখলকারীর নাম ঠিকানা দেওয়া আছে। কষ্ট করে আমাদের ওয়েবসাইটটা একটু ঘুরে আসলে আপনাকে এই ভুয়া মন্ত্যব্যটি করে জাতিকে হয়তো বিভ্রান্ত করতে হতো না।
কারো যদি এ বিষয় আরও কিছু জানার থাকে তা হলে আগামী রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় কমিশন অফিসে উপস্থিত থেকে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেন বলেও জানিয়েছেন নদী কমিশনের চেয়ারম্যান।
আরএমএম/ইএ