সুপ্রিয় কুমার চক্রবর্তী
Advertisement
এইচএসসি পাসের পর থেকেই বিদেশে উচ্চশিক্ষার ইচ্ছাটা অনেকেরই থাকে। উন্নত জীবনযাপন, উচ্চশিক্ষার পূর্ণ গ্যারান্টি, উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এবং পরিশেষে ওই দেশের নাগরিকত্ব লাভ শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। আর এই সুযোগটাই নিতে চায় কিছু স্টুডেন্ট রিক্রুটিং এজেন্সি। ওইসব এজেন্সির সাহায্য ছাড়াও আপনি বিদেশে পড়াশোনা করতে যাওয়ার কাগজপত্র নিজে তৈরি করতে পারেন। তাই উল্লেখিত ১০টি পরামর্শ সবাইকে উপকৃত করবে।
১. আপনার সামগ্রিক শিক্ষাগত যোগ্যতার আলোকে (যেমন-এইচএসসি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত হলে) এবং পরিবারের আর্থিক ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহারের ওপর দেশ নির্বাচন করুন। কারণ ন্যূনতম ২৫ লাখ থেকে ৬০ লাখ টাকার নিচে ফিক্সড ডিপোজিট বা সেভিংস অ্যাকাউন্ট না থাকলে আজকাল উন্নত দেশের শিক্ষা নেওয়ার চিন্তাই করা যায় না!
২. আইইএলটিএস, টোফেল, জিম্যাট, জিআরই, এসএটি জাতীয় এক্সট্রা কোর্সগুলো বিভিন্ন দেশ অনুযায়ী প্রয়োজনের কারণে এগুলো ভালোভাবে সম্পন্ন করুন এবং ভালো ফলাফল অর্জন করুন। এসব সার্টিফিকেট ছাড়া দূতাবাস বা হাইকমিশন থেকে ভিসাপ্রাপ্তির সম্ভাবনা জিরোই বলা চলে। বিদেশ যেতে হলে বিদেশির মতো হতে হবে, তাকে ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে, ইনফোরমেটিভ হতে হবে, এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসে সক্রিয় থাকতে হবে। ধ্যানে, জ্ঞানে, স্বপ্নে নিজেকে কানাডিয়ান, আমেরিকান, অস্ট্রেলিয়ান, ব্রিটিশ ভাবতে হবে। আপনি বিদেশ যাবেন, অথচ আইইএলটিএস করবেন না, টোফেল করবেন না; এটা হতে পারে না!
Advertisement
আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার পর চাকরির সুযোগ
৩. যিনি স্পন্সর হবেন, তিনি যদি আপনার পরিবারের পিতৃ বা মাতৃকূলে রক্ত সম্পর্কীয় কেউ না হন, তাহলে অযথাই কোনো তৃতীয় ব্যক্তির কাগজপত্র জমা দিয়ে ভিসার জন্য আবেদন করবেন না। ভুয়া স্পন্সরের নামে গ্রেফতার হয়ে এখন অনেকে জেলে আছেন।
৪. নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়স, শিক্ষা বিরতিকরণ, স্পন্সর ইত্যাদির ব্যাপারে রি-কনফার্ম না হয়ে এবং সতর্কতার সঙ্গে বিশ্লেষণ না করে অযথাই বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার আনার জন্য যেখানে-সেখানে টাকা জমা দেবেন না। ইউনিভার্সিটির অফার লেটার আনা আর ভিসা পাওয়া এক কথা নয়। প্রথমটা ব্যবসা, পরেরটা ইচ্ছা।
৫. যদিও বা কোনো দেশের অ্যাকসেপ্টেন্স লেটার পেলেন এবং পরবর্তী টিউশন ফির নামে মোটা অঙ্কের টাকা দেশের বাইরে পাঠানোর আগে ভালো করে চিন্তা করে নেবেন। যত সহজে টাকা পাঠানো যায়, তত সহজে ফেরত পাওয়া যায় না।
Advertisement
আরও পড়ুন: অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডায় পড়াশোনা-ক্যারিয়ার
৬. দূতাবাস এবং হাইকমিশনে ভিসার আবেদনপত্র জমা দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট দেশের ভিসা প্রদানের নিয়ম-কানুন, ডকুমেন্ট চেকলিস্ট এবং আনুষঙ্গিক তথ্য ভালোভাবে জেনে নিন এবং পরিপূর্ণভাবে ফাইল জমা দেওয়ার আগে একজন ভালো অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ নিন।
৭. কোনো স্টুডেন্ট কনসাল্টিং ফার্মে আপনার ফাইল জমা দেওয়ার আগে ওই প্রতিষ্ঠানের রেকর্ড দেখুন। আপনার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ওই ফার্মের কোনো চুক্তিপত্র আছে কি না দেখে নিন। এমনকি যিনি আপনার ক্যারিয়ার নিয়ে কাউন্সেলিং করছেন, তার যোগ্যতার ব্যাপারেও নিশ্চিন্ত হয়ে নিন। মিষ্টি মিষ্টি কথা দিয়ে ভুলভাল বুঝিয়ে কনভিন্স করার লোকের অভাব নেই।
৮. যে কোনো ফার্মের সঙ্গে কাজ করার আগে তাদের পারিশ্রমিকের ব্যাপারে খোলামেলা কথা বলে নিন। কী কী সার্ভিস কত টাকার বিনিময়ে পাবেন, ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের দায়িত্ব এবং ওই দেশে পৌঁছানো পর্যন্ত আপনি কীভাবে তাদের সার্বিক সহযোগিতা পাবেন, সে ব্যাপারগুলো লিখিত ডকুমেন্ট করে নিন। বিশেষ দরকার না হলে কনসাল্টিং ফার্মের সাহায্য না নিয়ে নিজে নিজেই প্রসেস করুন।
আরও পড়ুন: বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে অনেক ভুল ধারণা আছে
৯. এখনো অনেক ফার্ম মিথ্যা কথা, ফলস হোপ, ভুয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করেই যাচ্ছে। আইইএলটিএস ছাড়া ভিসা, পৌঁছার পর টাকা, নো ভিসা নো মানি, চাকরি পাইয়ে দেওয়ার গ্যারান্টি এসব লোভনীয় চটকদার কথা বলে তারা শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করছে। যে বিষয়গুলো ওদের কাছে সবচেয়ে দুর্বল, সেগুলোকেই তারা প্রতারণার অস্ত্র বানিয়ে সবাইকে বোকা বানাচ্ছেন। যদিও এখন অনেকেই সচেতন হয়েছেন। আপনি দেখেন, বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির দৈনিক পত্রিকাগুলোয় দু-একটি ফার্মের বিজ্ঞাপন ছাড়া অধিকাংশ কনসালটেন্সি ফার্ম লাপাত্তা। তাদের কোনো খোঁজ-খবর নেই।
১০. বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে গিয়ে আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনো প্রণয়ঘটিত ব্যাপারে সিরিয়াস হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-কানুনের বাইরে নিজ থেকে কোনো কর্মকাণ্ডে জড়াবেন না। পার্ট টাইম চাকরি এবং ক্লাসে উপস্থিত থাকার ব্যাপারে সজাগ থাকবেন। পরে নাগরিকত্ব পেতে এগুলো রেকর্ড হিসেবে কাজ করবে। উচ্চশিক্ষা নিতে যেহেতু বিদেশে গেছেন, সেহেতু উচ্চশিক্ষা নেওয়া ছাড়া অন্য কোনো চিন্তা মাথায়ই আনবেন না।
লেখক: সিইও, শা অ্যাসোসিয়েটস।
এসইউ/জেআইএম