দেশের দুই জেলায় জলবায়ু সহনশীল ৯০০টি ঘর মেরামত এবং ৩০টি ন্যানো-গ্রিড স্থাপন ও কার্যক্ষম রাখার ব্যবস্থা নিতে ৭৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা অর্থায়ন করবে গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি ও জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সহায়ক সংস্থা-ইউএনডিপি।
Advertisement
‘অ্যাডাপটেশন ইনিসিয়েটিভ ফর ক্লাইমেট ভালনারেবল অফসোর স্মল আইল্যান্ড অ্যান্ড রিভারিয়ান চরল্যান্ড ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় এ কাজ বাস্তবায়ন করা হবে। অক্টোবর ২০২২ হতে সেপ্টেম্বর ২০২৭ মেয়াদে প্রকল্পটি রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলা এবং ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হবে।
এ প্রকল্পসহ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রায় ১০ হাজার ৬৪০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয় সম্বলিত ১১টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এরমধ্যে সরকারি অর্থায়ন সাত হাজার ৮২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা আর বৈদেশিক অর্থায়ন দুই হাজার ৮৮০ কোটি ১৮ টাকা।
প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) শেরে বাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এসব প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
Advertisement
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বাংলাদেশের উপকূলীয় দ্বীপ ও নদীর চরসমূহে বসবাসকারী বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীর জলবায়ু সহনশীলতা বাড়ানোই এ প্রকল্পের সার্বিক উদ্দেশ্য। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, লবণাক্ততা অনুপ্রবেশ এবং খরা থেকে স্থানীয় মানুষের ঘরবাড়ি এবং জীবিকা রক্ষায় প্রকল্পটি সহায়ক হবে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য: আধুনিক জলবায়ু-সহিষ্ণু প্রযুক্তির মাধ্যমে বাঁধ মেরামত এবং কার্যকর স্থানীয় ব্যবস্থাপনা অনুশীলনসহ কমিউনিটি পর্যায়ের অবকাঠামো উন্নতকরণ, সময়মতো প্রাথমিক সতর্কতা এবং কার্যকর জরুরি সাড়া নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রকল্প এলাকার নির্ধারিত প্রত্যন্ত উপকূলীয় চরে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) কার্যক্রম বাড়ানো হবে। জলবায়ু-সহিষ্ণু বিনিয়োগ এবং নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে স্থানীয় ও জাতীয় সরকার এবং কমিউনিটির সক্ষমতাও বাড়ানো হবে।
একনেক সভা জানানো হয়, ভূ-উপরস্থিত পানি সংরক্ষণ ও সরবরাহের জন্য কমিউনিটিভিত্তিক পানি ব্যবহারকারী ১০টি দল গঠন ও প্রশিক্ষণ, ৫০০ পরিবারকে জলবায়ু সহনশীল ও কার্যকর বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ অবকাঠামো নির্মাণ-যন্ত্রপাতি দেওয়া হবে। ২০টি ক্লাস্টার হাউস নির্মাণ করা হবে, যা দুর্যোগকালীন সময়ে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হবে এবং এরমধ্যে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ উপকারভোগী হবে নারীপ্রধান পরিবার।
এতে জানানো হয়, প্রকল্পের আওতায় মুজিবনগরে ছয় কিলোমিটার ও গঙ্গাচড়ায় ১৮ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত এবং মুজিবনগরে একটি ইরিগেশন পাইপ আউটলাইন স্থাপন, মুজিবনগর ও গঙ্গাচড়ায় মোট ২৪ কিলোমিটার বাঁধ শক্তিশালী ও টেকসই করা, বঙ্গোপসাগরের নির্ধারিত ১০টি দ্বীপ ও নদীর চরসমূহে জলবায়ু ঝুঁকি ও বিপদাপন্নতা মানচিত্র প্রণয়ন করা হবে। ভোলা জেলার সাতটি উপজেলা থেকে প্রায় ছয় হাজার ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দেওয়া (ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচিতে ৫০ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বকারী সম্পৃক্তকরণ), মুজিবনগরের ২০টি গুচ্ছ বাড়ি/আশ্রয়কেন্দ্রে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হবে। ছয় হাজার ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি স্বেচ্ছাসেবককে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতির যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা ও সদা প্রস্তুত রাখার ব্যবস্থাকরণ, আটটি ভাসমান অ্যাম্বুলেন্স/জরুরি উদ্ধারকারী জলযান কেনা হবে। এর মাধ্যমে সাধারণ ও দুর্যোগকালীন রোগী স্থানান্তর ও সেবাদানের ব্যবস্থাকরণ, ত্রৈমাসিক মাঠ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সর্বমোট ৭৫টি প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে।
Advertisement
জলবায়ু সহনশীল কৃষি পদ্ধতির ওপর সাত হাজার ৫০০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ, মুজিবনগরে দুটি ও লক্ষ্মীটারীতে দুটি কোল্ড স্টোরেজ ইউনিট স্থাপন এবং লক্ষ্মীটারীতে সেচের প্রয়োজনীয়তা নিরূপণ ও সোলার সেচ পদ্ধতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ৮০ হেক্টর জমিতে কৃষি কাজের জন্য সেচের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হবে।
এছাড়াও প্রকল্পের আওতায় সাড়ে ছয় হাজার মানুষকে জলবায়ু সহনশীল জীবিকা কার্যক্রমে যুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি, দক্ষতা ও দ্রব্যাদি সরবরাহ করা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি বিভাগের মোট ২৫০ জন্য কর্মীকে তাদের কার্যক্রমে জলবায়ু ঝুঁকির বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রতিটি প্রকল্প এলাকায় দুটি করে মোট চারটি অভিযোজন উদ্ভাবনকেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
এমওএস/এমকেআর/এএসএম