পলিথিনের ব্যাগ উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন এবং পরিবহন নিষিদ্ধ। তবুও খুলনা মহানগরীসহ জেলা, উপজেলায় নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। কোনোভাবেই পলিথিন ব্যবহারে লাগাম টানা যাচ্ছে না। এতে জনস্বাস্থ্যসহ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য।
Advertisement
ক্ষতিকর এই পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ, ডিজেল ও সার উৎপাদন করার উদ্যোগ নিয়েছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। পরিবেশ অধিদপ্তরের সহায়তায় আগামী জুনে পাইলট প্রকল্পটি চালু হতে যাচ্ছে।
পাঁচ কোটি ২০ লাখ টাকার এই প্রকল্প চালু হলে নগরী থেকে প্রতিদিন ২০ মেট্রিক টন পলিথিন বর্জ্যে তৈরি হবে সার ও ডিজেল। পাইপলাইনে রয়েছে আরও একটি বৃহৎ প্রকল্প। ডুমুরিয়া উপজেলার শলুয়া এলাকায় একটি প্রকল্প বাস্তাবায়নাধীন। সেখানে সার ও ডিজেলের পাশাপাশি বিদ্যুৎও উৎপাদন করা হবে।
আরও পড়ুন: দেশে প্লাস্টিক শিল্পের বাজার ৪০ হাজার কোটি টাকা
Advertisement
খুলনা মহানগরীসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পলিথিন নেই এমন কোনো জায়গা নেই। বাড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে সড়ক, ড্রেন সব জায়গায় পলিথিন। ক্ষতিকর এই পলিথিন সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে পণ্য পরিবহনের কাজে। পাঁচ টাকার পণ্য কিনলেও মিলছে পলিথিন। সামান্য সময় ব্যবহারের পর তা ফেলে দেওয়া হচ্ছে যত্রতত্র। পলিথিনের কারণে নগরীর ড্রেনের পানি চলাচল আটকে যাচ্ছে। ফলে নোংরা পানিতে মশার বংশবিস্তার হচ্ছে অনায়াসে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিনের প্রধান অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, পলিথিন হচ্ছে রাসায়নিক যৌগ ইথেনের পলিমার, যা বিভিন্ন রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে তৈরি। এটি একধরনের নমনীয় কিন্তু শক্ত প্লাস্টিক, যা বায়োডিগ্রেডেবল বা পচনশীল নয়।
তিনি বলেন, পরিবেশ দূষণের জন্য যেসব বস্তু দায়ী তার অন্যতম প্রধান হচ্ছে পলিথিন বা প্লাস্টিক। পলিথিনের অতিরিক্ত ব্যবহার স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বাড়ায়। যেমন-চোখ জ্বালা করা, শ্বাসকষ্ট, লিভারের কার্যকারিতা হ্রাস, ক্যানসার, মাথাব্যাথা ইত্যাদি।
আরও পড়ুন: প্লাস্টিক বোতলে তৈরি প্রতিকৃতির প্রদর্শনীতে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা
Advertisement
পলিথিন মোড়ানো গরম খাবার খেলে ক্যানসার ও চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পলিথিনে মাছ ও মাংস প্যাকিং করলে তাতে অবায়বীয় ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়। এছাড়া উজ্জ্বল রঙের পলিথিনে রয়েছে সিসা ও ক্যাডমিয়াম, যার সংস্পর্শে চর্মরোগ হয়।
তবে ব্যবহৃত পলিথিন আর বেশি সময় ধরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে না বলে জানালেন খুলনা সিটি করপোরেশনের কনজারভেন্সি অফিসার আব্দুল আজিজ।
তিনি বলেন, নগরীর এক প্রান্তে বটিয়াঘাটা উপজেলার মাথাভাঙ্গা এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে পায়রোলাইসিস মেশিন। এর সাহায্যে পলিথিন ও প্লাস্টিকজাতীয় দ্রব্য থেকে উৎপাদন করা হবে সার ও ডিজেল। পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় পাঁচ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ের এই পাইলট প্রকল্প আগামী জুন মাসে উৎপাদনে যাবে। এটি চালু হলে নগরী অর্ধেকের বেশি পলিথিনমুক্ত হবে। এখানে প্রতিদিন ৫০০ লিটার ডিজেল ও ১০ টন সার উৎপাদন হবে।
আরও পড়ুন: দাশেরকান্দিতে পরীক্ষামূলক বর্জ্য শোধন শুরু, প্রাণ ফিরবে দুই নদীতে
ডুমুরিয়া উপজেলার শলুয়া এলাকায় ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও একটি বৃহৎ প্রকল্প কার্যাদেশের অপেক্ষায় রয়েছে জানিয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ বলেন, এ প্রকল্পে প্রতিদিন ডিজেল, সার উৎপাদনের পাশাপাশি প্ল্যান্ট চালানোর জন্য তিন কিলোওয়াট বিদ্যুৎও উৎপাদন হবে। এ প্রকল্পে প্রতিদিন ৩৭৫ টনের বেশি বর্জ্য ব্যবহৃত হবে। এতে নগরীর অর্ধেক পলিথিন বর্জ্য দূর করা সম্ভব হবে।
শুধু তাই নয়, নগরীর অদূরে রাজবাঁধ ও নগর অভ্যন্তরেও কয়েকটি প্রকল্প চালু হতে পারে বলে জানান তিনি।
খুলনা কম্পোস্ট প্ল্যান্ট ও তরল ডিজেল উৎপাদন প্ল্যান্ট প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা (পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনার পরিচালক) ইলিয়াস মাহমুদ বলেন, খুব দ্রুত শলুয়া প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। এ প্রকল্পের জন্য ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে এলাকায় একটি সড়কও নির্মাণ করা হবে।
পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনা করে ২০০২ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে পলিথিনের ব্যাগ উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন এবং পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়। তবু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধের কোনো উদ্যোগ নেই।
এসআর/এমএস