শব্দদূষণের কারণে কানের সমস্যায় (শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত) ভোগা ট্রাফিক পুলিশ ও রিকশাচালকের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট। ঢাকার দুটিসহ দেশের পাঁচ সিটি করপোরেশনের কাছে এ তথ্য চেয়েছেন আদালত।
Advertisement
আগামী চার মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট পাঁচ সিটি করপোরেশনকে রেজিস্ট্রেশন করা ক্ষতিগ্রস্ত রিকশাচালকের তালিকা ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) ক্ষতিগ্রস্ত ট্রাফিক পুলিশের তালিকা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০০৬ এর বিধি ৭ ও ৮ অনুসারে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না ও শব্দদূষণে ক্ষতিগ্রস্ত ট্রাফিক পুলিশ ও রিকসাচালকদের ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন মেয়র, পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: দেশের সব আদালতের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রধান বিচারপতির নির্দেশ
Advertisement
এ সংক্রান্ত এক রিটের প্রাথমিক শুনানির নিয়ে সোমবার (১৬ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুল জারিসহ আদেশ দেন।
আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আওলাদ হোসেন।
এর আগে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে গত সপ্তাহে জনস্বার্থে এ রিট আবেদনটি করা হয়। রিটে ‘রাজপথে শব্দদূষণ বা কানের সমস্যায় বেশি ভুগছে রিকশাচালক ও ট্রাফিক পুলিশ’ শিরোনামে গত বছর ৯ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিক প্রকাশিত প্রতিবেদনসহ এ সংক্রান্ত বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট করা হয়।
আরও পড়ুন: স্কুলছাত্র টুটুল হত্যা: হাইকোর্টে একজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল, খালাস ২
Advertisement
রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, সড়ক যোগাযোগ ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, দেশের পাঁচটি সিটি করপোরেশন, পাঁচ বিভাগীয় পুলিশের কমিশনার, বিআরটিএর চেয়ারম্যানসহ ২১ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।
ওই রিটের শুনানি নিয়ে ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায় শব্দদূষণে শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা সমস্যায় ভুগছেন এমন ট্রাফিক পুলিশ ও নিবন্ধিত রিকশাচালকদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট।
পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট ও কুমিল্লার পুলিশ কমিশনার, মেয়রদের আগামী চার মাসের মধ্যে হলফনামা করে এ তালিকা দিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: অবৈধ সম্পদ অর্জন: হাজিরা দিলেন মির্জা আব্বাস দম্পতি
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, দেশে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন আছে। সে আইন অনুযায়ী রাস্তাঘাটে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষও আছে। কিন্তু ব্যবস্থা না নেওয়ায় অনেক রিকশাচালক, ট্রাফিক পুলিশ শ্রবণ শক্তি হারিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বা বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। এ বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে জনস্বার্থে রিট করেছিলাম। আদালত রুলসহ আদেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, হাইকোর্ট সংশ্লিষ্টদের কাছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা চেয়েছেন। তালিকা এলে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কী পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চাইবো, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।
দেশের পাঁচটি সিটি করপোরেশন এলাকার শব্দদূষণ নিয়ে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সের এক গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, পেশাজীবীদের মধ্যে কানের সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ভুগছেন রিকশাচালকরা। তাদের মধ্যে ৪১ দশমিক ৯ শতাংশের এ সমস্যা রয়েছে। এরপরেই রয়েছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। দেশের প্রায় ৩০ দশমিক ৭ শতাংশ ট্রাফিক পুলিশের বিভিন্ন মাত্রায় কানের সমস্যা রয়েছে। পাঁচ সিটি করপোরেশনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কানের সমস্যায় ভুগছে কুমিল্লার মানুষ।
প্রতিষ্ঠানটির অকুপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাইকা নিজামের গবেষণা প্রতিবেদন ছিল এটি। গত বছর ৮ নভেম্বর ‘বাংলাদেশের রাজপথে শব্দদূষণ এবং শব্দদূষণের কারণে রাজপথে কর্মরত পেশাজীবীদের শ্রবণ সমস্যা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করা হয়।
গবেষণায় পাঁচটি সিটি করপোরেশনে (ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর, রাজশাহী, কুমিল্লা এবং সিলেট) শব্দদূষণের মাত্রা পরিমাপ করার কথা বলা হয়। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব এলাকায় রাজপথে কর্মরত ৬৪৭ জন পেশাজীবীর (ট্রাফিক পুলিশ ও সার্জেন্ট, বাসচালক ও হেলপার, পিকআপচালক, অটোরিকশাচালক, লেগুনাচালক, দোকানদার, মোটরসাইকেলচালক ও রিকশাচালক) শ্রবণশক্তি পরিমাপ করা হয়েছে। লেগুনারচালকদের ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ ভুগছেন কানে শোনার সমস্যায়।
গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন বিবেচনায় কানে শোনার সমস্যা সবচেয়ে বেশি কুমিল্লার মানুষের। এ এলাকার রাজপথে চলাচলকারীর প্রায় ৫৫ শতাংশ মানুষের কানে সমস্যা রয়েছে। সিলেটে ৩০ দশমিক ৭ শতাংশ, ঢাকায় ২২ দশমিক ৩ শতাংশ ও রাজশাহীতে ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
সিটি করপোরেশনগুলোর রাজপথে শব্দের মাত্রা ৮৪ থেকে ৯৯ ডেসিবল, যা অনুমোদিত মাত্রা ৬০ ডেসিবলের চেয়ে বেশি। গবেষণা জরিপে অংশ নেওয়া প্রতি চারজনে একজন বা প্রায় ২৫ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষের কানে কম শোনার সমস্যায় ভুগছেন। এদের ৭ শতাংশেরই এই মুহূর্তে হিয়ারিং এইড ব্যবহার জরুরি।
এফএইচ/ইএ/ আরএডি/এমএস