বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির ৪৭২ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের ঘটনায় বিপিসির ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
Advertisement
আদালত বলেছেন, এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির ৪৭২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার হয়, আর বিপিসি কি তখন নাকে তেল দিয়ে ঘুমায়?
বিপিসির আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করে রোববার (১৫ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন। পরে মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য ২৯ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত।
বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
Advertisement
আরও পড়ুন: টাকা পাচারের উদ্দেশ্যে ডিম আমদানির পাঁয়তারা
আদালতে বিপিসির পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন ও অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ আজাদ। দুদকের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানিতে টাকা আত্মসাৎ ও অনিয়মের কথা স্বীকার করে বিপিসির আইনজীবীরা বলেন, এ অনিয়মের পেছনে দায়ী মঈনুদ্দিন আহমেদ ও প্রতিষ্ঠানটির সাবেক মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাহেদ। মোহাম্মদ শাহেদ বিদেশে টাকা পাচার করেছেন। তবে তিনি করোনার মধ্যে মারা গেছেন।
আরও পড়ুন: দেশ থেকে অর্থপাচার অনেকটা নিয়ন্ত্রণে: গভর্নর
Advertisement
এ সময় আদালত বিপিসির আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, তখন কি আপনারা (বিপিসি) নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন?
এ সময় আইনজীবীরা বলেন, অনিয়ম নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। এ ঘটনায় কমিটি গঠন করা হয়েছে। মামলা হয়েছে।
তখন আদালত বলেন, অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ যিনিই করুন, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। এর সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে হবে।
পরে আদালত দুদক ও বিপিসিকে এফিডেভিট আকারে তদন্ত সংক্রান্ত প্রতিবেদন ২৯ জানুয়ারি আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেন। সেদিন পরবর্তী আদেশ দেবেন আদালত।
এর আগে এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির ৪৭২ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও অনিয়মের ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তার ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। অডিটর জেনারেল ও বিপিসির চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
আরও পড়ুন: ‘মানিলন্ডারিং বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে পারছে না সরকার’
একই সঙ্গে অনিয়মের ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, তাও জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশন, অডিটর জেনারেল ও বিপিসির চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এ সময়ের মধ্যে প্রতিবেদনও দাখিল করতে বলা হয়।
৬ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বিপিসি ও অডিটর জেনারেলকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেন। তারই ধারাবাহিকতায় সেটি আজ শুনানি হয়।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে বিপিসির ৪৭২ কোটি টাকা অনিয়মের খবর প্রকাশিত হয়। তা হাইকোর্টের নজরে আনেন দুদকের সিনিয়র আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘৪৭২.৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বিপিসির সহযোগী প্রতিষ্ঠান’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির (এসএওসিএল) ২১ অনিয়মের কারণে সরকার ৪৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) ২০১২-১৩ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত এসএওসিএলের নথি পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানতে পারে।
এফএইচ/এমএইচআর/জিকেএস