ভ্রমণ

মেট্রোরেলে যাত্রার ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা

তানজিদ শুভ্র

Advertisement

মেট্রোরেল আমাদের অর্জনের গল্প। গত ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধনের পর ২৯ ডিসেম্বর যখন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়, তখনই বাঙালির উচ্ছ্বাস চোখে পড়ে।

উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হওয়া এই পরিসেবা জনদুর্ভোগ অনেকাংশেই কমিয়েছে। পথটুকু পাড়ি দিতে সময় লাগছে মাত্র ১০ মিনিটের মতো। টেলিভিশন, পত্র পত্রিকা আর সোশ্যাল মিডিয়ায় মেট্রোরেলের গল্প বেশ জায়গা করে নিয়েছে।

শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারি প্রথম প্রহর থেকে মন মেজাজ ফুরফুরে ছিল। সকালে হুট করে বড় ভাইয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়ে মেট্রোরেল ভ্রমণের জন্য বের হলাম। ছুটির দিনের ভ্রমণই বটে।

Advertisement

প্রকৃতপক্ষে আগারগাঁও কোনো কাজ ছিল না। মেট্রোতে চড়ে ঘুরে আসাই উদ্দেশ্য আমার। আর ভাইয়ার গন্তব্য ভিন্ন থাকায় আমার সঙ্গে গিয়ে আগারগাঁও থেকে অন্যদিকে যাওয়া ছিল তার পরিকল্পনা।

রিকশায় উত্তরা উত্তর স্টেশনে নামলাম। লম্বা লাইন। অপেক্ষা করলাম সেখানে দাঁড়িয়ে। আস্তে আস্তে প্রবেশ করলাম টিকিট কাউন্টারে। সেখানেও লাইন। দাঁড়িয়ে রইলাম।

ম্যানুয়ালি টিকেট কাটার কাউন্টারে তুলনামূলক টিকেট প্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি। আমিও সে লাইনে অপেক্ষারত। ১২০ টাকা দিয়ে উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত দুটো টিকেট কিনলাম।

এরপর স্কাউট সদস্যদের আন্তরিক সহায়তায় প্লাটফর্মে এন্ট্রি করি। ট্রেন তখন যাত্রীদের অপেক্ষায় ছিল। উঠে এক ফাঁকা আসনে বসতে গিয়ে থমকে গেলাম। পাশের যাত্রী বললেন অন্য একজনের জন্য জায়গা রেখেছেন।

Advertisement

এবার সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। এমন সময় আরেক সিটে বসা দু’জন দাঁড়িয়ে ভাইয়াকে ‘স্যার’ সম্বোধন করেই বসতে দিল। অল্প সময় বসে ছিলাম, সবার মতো আমরাও ছবি তুলাম।

গল্প করতে করতেই মাঝখানের স্টেশনগুলো পাড় করে আগারগাঁও পৌঁছে গেল মেট্রোরেল। প্রথম দফায় যাত্রা শেষ হলো এখানেই। ভাইয়া তার ভিন্ন গন্তব্যে চলে গেল। আমি আবারো টিকেট কাউন্টারে লাইনে দাঁড়ালাম, উদ্দেশ্য উত্তরায় ফেরা।

অল্প কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে যখন সিরিয়াল পেলাম, ১০০ টাকার নোট দিয়ে বিপদে পড়লাম। ভাঙতি না দেওয়াই টিকিট দিতে অপরাগ তারা। কী আর করার পাশের জনকে বললাম ভাঙতি থাকলে দিতে।

কুমিল্লা থেকে আসা ওই ভদ্রলোকের থেকে ভাঙতি নিয়ে আমার টিকেট সংগ্রহ করলাম। অনেকটা দ্রুতই প্লাটফর্মে প্রবেশ করলাম, কারণ সময় আমাকে তাড়া করছিল।

এবার মেট্রোরেলে ঢুকে বসলাম না। দাঁড়িয়ে রইলাম, হাঁটলাম। দু’একটি ছবিও তুলছিলাম। চারজন কিশোর বন্ধুবান্ধব উঠছে পাশেই। তারা একজন আরেকজনের ছবি তুলে দিচ্ছিলো, আবার ভিডিও কলে অন্য বন্ধুদের দেখাচ্ছিল।

আমিও ভিডিও কল দিয়ে আমার বড় ভাইকে নিশ্চিত করি, ফিরতি ট্রেনের টিকিট পেয়ে ট্রেনে উঠতে পেরেছি। পরে ওই কিশোরদের একজনকে বললাম আমারও দু’একটা ছবি তুলে দিতে। তুলেও দিল, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

অল্প সময়েই আবারো উত্তরা উত্তর স্টেশনে এসে ট্রেন থামলো। ওই পাশ থেকে আসা অনেকেই ভেবেছিল আবার টিকিট কেটে মেট্রোরেলেই ফেরত যাবে। তবে তখন সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল টিকিট কাটার।

কিছুক্ষণ পায়চারি করে আমি স্টেশন থেকে বের হয়ে রিকশা নিয়ে চলে আসলাম। প্রথম দিনের দ্বিতীয়বারের যাত্রা এভাবেই শেষ হয়। দিনটি ভালো কেটেছে।

এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি দিয়াবাড়ি ঘুরতে গিয়ে মেট্রোরেল স্টেশনে আশপাশে থেকে রিকশা করে ঘুরেছিলাম, তখনো স্বপ্ন ছিল মেট্রোরেল নিয়ে। এখন মেট্রোরেল যাত্রার স্বপ্ন বাস্তবে। মেট্রোরেলের মতো অর্জনের গল্প জমা হোক আমাদের জীবনের খাতায়।

লেখক: শিক্ষার্থী ও ফিচার লেখক।

জেএমএস/এমএস/এএসএম