গাড়ির নিচে চাপা পড়া নারীকে প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা টেনেহিঁচড়ে নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চাকরিচ্যুত শিক্ষক মোহাম্মদ আজহার জাফর শাহ (৫৫) মারা গেছেন।
Advertisement
শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন: ঢাবি ক্যাম্পাসে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় নারী নিহত, চালককে গণপিটুনি
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া শুক্রবার বিকেলে জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
Advertisement
পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া জাগো নিউজকে জানান, ময়নাতদন্তের জন্য তার মরদেহ ঢামেক হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে কারারক্ষী জুবায়ের হোসেন জানান, মোহাম্মদ আজহার জাফর শাহ কেন্দ্রীয় কারাগারে হাজতি হিসেবে ছিলেন। শুক্রবার হঠাৎ অসুস্থ বোধ করায় তাকে ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মামলার আসামি ছিলেন। তার হাজতি নম্বর ১৭৭/২৩।গণপিটুনিতে আহত হওয়ার পর হাসপাতালে জাফর শাহ/ফাইল ছবি
গত ২ ডিসেম্বর বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চাঞ্চল্যকর দুর্ঘটনা ঘটে। এতে রুবিনা আক্তার (৪০) নামে এক নারী নিহত হন। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
আরও পড়ুন: নারীকে টেনে নেওয়া গাড়িটি চালাচ্ছিলেন ঢাবির চাকরিচ্যুত শিক্ষক
Advertisement
ওইদিন ব্যক্তিগত গাড়ি চালিয়ে শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন মোহাম্মদ আজহার জাফর শাহ। চারুকলা অনুষদের উল্টো পাশের টিএসসি অভিমুখী সড়কে একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কায় দেন তিনি। এতে মোটরসাইকেলের থাকা রুবিনা আক্তার পড়ে যান এবং প্রাইভেটকারের নিচে চাপা পড়ে আটকে যান।
দুর্ঘটনার পর গাড়ি ভাঙচুর করে উত্তেজিত জনতা/ফাইল ছবি
তবে এরপরও প্রাইভেটকারের চালক গাড়ি না থামিয়ে বেপরোয়া গতিতে চালাতে থাকেন। পথচারীরা তাকে থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। গাড়ির নিচে আটকে থাকা নারীকে নিয়েই টিএসসি থেকে বেপরোয়া গতিতে নীলক্ষেতের দিকে যান চালক। পেছনে পথচারীরা তাকে ধাওয়া করেন।
আরও পড়ুন: এটি দুর্ঘটনা নয়, শিক্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তিতে সহায়তা করবে পুলিশ
পরে নীলক্ষেতের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ থেকে পলাশী অভিমুখী সড়কের মুখে চালককে আটকে রুবিনাকে উদ্ধার করেন পথচারীরা। এসময় চালক জাফরকে গণপিটুনি দেওয়া হয়। পরে দুজনকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর বিকেল ৫টার দিকে চিকিৎসক রুবিনাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, এ ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করেন রুবিনার ভাই জাকির হোসেন মিলন। তবে গণপিটুনিতে আহত জাফর শাহকে প্রায় একমাস ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ১ জানুয়ারি মামলার আসামি জাফরকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ।
এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই জাফর। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আরও পড়ুন: ঘুম থেকে মা বলে চিৎকার করে ওঠে রুবিনার ছেলে রোহান
আবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামি জাফরকে পরবর্তীসময়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নিতে প্রয়োজন হতে পারে। মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে কারাগারে আটক রাখা একান্ত প্রয়োজন।
সন্তানের সঙ্গে নিহত রুবিনা আক্তার/ছবি: সংগৃহীত
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জাফর জাগো নিউজকে বলেন, অভিযুক্ত গাড়িচালক ঢাবির সাবেক সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আজহার জাফর শাহের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সাক্ষীদের জবানবন্দিও নেওয়া হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে জাফরের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করবো।
অন্যদিকে জাফর শাহকে নৈতিক স্খলনজনিত কারণে ২০১৮ সালে পদাবনতিসহ চাকরিচ্যুত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তিনি ক্লাস-পরীক্ষাসহ বিভিন্ন একাডেমিক কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয় ছিলেন বলে জানা যায়।
কাজী আল-আমিন/এএএইচ/এমএএইচ/জিকেএস