নব্বইয়ের দশক থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত রাজশাহী শহরে পাঁচটি সিনেমা হল ছিল। এই সিনেমা হলগুলোই ছিল এ শহরের মানুষের বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম। কালের পরিক্রমায় একেক করে বন্ধ হতে থাকে এ হলগুলো।
Advertisement
সবশেষ ২০১৮ সালে বন্ধ হয়ে যায় ‘উপহার’ সিনেমা হলটি। এরপর বিনোদন প্রত্যাশী মানুষের মনে হতাশা নেমে আসে।
আরও পড়ুন: ধুঁকে ধুঁকে চলছে নওগাঁর ৩ সিনেমা হল
শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) স্টার সিনেপ্লেক্স উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে হারিয়ে যাওয়া সেই বিনোদন মাধ্যমের নতুন দিগন্ত আবারও উন্মোচিত হলো রাজশাহীতে।
Advertisement
স্টার সিনেপ্লেক্স উদ্বোধনের পর রাজশাহীর সিনেমাপ্রেমীরা এতোটাই উচ্ছ্বসিত তা ভাষা প্রকাশ করতে পারছেন না তারা। ‘আমরা স্টার সিনেপ্লেক্স পেয়ে অনেক দিনের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছি। বলতে গেলে এখানকার মানুষ এমন একটি সিনেপ্লেক্সের জন্য মুখিয়ে ছিলেন। এবার আমরা সবাই বেশ আনন্দিত।’-এভাবেই জাগো নিউজকে বলছিলেন রাজশাহী শহরের বোয়ালমারী এলাকার রফিকুল ইসলাম।
আরও পড়ুন: বিলুপ্তির পথে সিনেমা হল
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তো মনে করেছিলাম আর কোনোদিন বড়পর্দায় সিনেমা দেখতে পারব না। কিন্তু আমরা আবার সিনেমা হলে যাব, সিনেমা দেখতে পারব। শুধু তাই-ই নয়, বাংলা ভাষার সিনেমার পাশাপাশি বিদেশের ভালো ভালো সিনেমা দেখতে পারব। আমার ইচ্ছে আছে এখানে পরিবার নিয়ে প্রথম সিনেমার শো উপভোগ করার।’
আরও পড়ুন: বিলুপ্তির পথে সিনেমা হল
Advertisement
রফিকুল ইসলামের সঙ্গে আলাপকালে পাশেই বসা ছিলেন মধ্যবয়সী হোসেন মিয়া। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘হল না থাকার কারণে সিনেমার কথা মানুষ এ প্রকার ভুলেই গিয়েছিল। লিটন (এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, মেয়র রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন) ভাইকে ধন্যবাদ। কারণ তার ব্যবস্থাপনায় সরকার সিনেপ্লেক্সের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।’
রাজশাহী সিটি কলেজের ছাত্র রবিউল ইসলাম উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলেন, ‘রাজশাহীতে বসে আমরা সিনেপ্লেক্সে ছবি দেখতে পারব-এমনটা ভাবতেই ভীষণ ভালো লাগছে। আমরা বন্ধুরা মিলে এখন বিভিন্ন ধরনের সিনেমা উপভোগ করতে পারব।’
‘সিনেমা সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার’-এমন প্রসঙ্গ টেনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক সুখন সরকার বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আমাদের ভালো কোনো সিনেমা দেখতে হলে পার্শ্ববর্তী জেলা বগুড়া অথবা পাবনায় যেতে হত। আমাদের সেই কষ্টটা এখন দূর হয়েছে। এ জন্য ধন্যবাদ স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ এবং সরকারকে।’
স্টার সিনেপ্লেক্সের মিডিয়া অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ জানান, রাজশাহীর বুলনপাড়া আই বাঁধ সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্কে একটি হল নিয়ে নির্মিত হয়েছে এই সিনেপ্লেক্স।
এর আসন সংখ্যা ১৭২টি। বরাবরের মতো নান্দনিক পরিবেশ, সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে সাউন্ড সিস্টেম, জায়ান্ট স্ক্রিনসহ বিশ্বমানের সিনেমা হলের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা এখানেও থাকবে।
২০০৪ সালের ৮ অক্টোবর রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে যাত্রা শুরু করেছে দেশের প্রথম মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হল ‘স্টার সিনেপ্লেক্স’। বর্তমানে ঢাকায় এর ৫টি ও চট্টগ্রামে ১টি শাখা রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার উত্তরা এবং বগুড়ায় নতুন শাখার নির্মাণ কাজ চলছে।
রাজশাহীতে স্টার সিনেপ্লেক্স উদ্বোধনের পর এখানকার বিনোদনপ্রেমী মানুষের মাঝে যেন উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এমআই/এমএমএফ/এএসএম