আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করেতে পারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
Advertisement
নতুন অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৮০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে একটি খসড়া প্রস্তাব সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট মনিটরিং অ্যান্ড রিসোর্স কমিটির কাছে জমা দিয়েছে রাজস্ব আদায়ের সংস্থাটি। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা রাজস্ব বোর্ড প্রতিবছর গ্রহণ করে তা আসলে বাস্তবসম্মত নয়। রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার কথা বললেও তা কিভাবে অর্জিত হবে, সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা না থাকায় কোনোবারই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা আদায় হয় না।
আরও পড়ুন: ২৫৯২ কোটি টাকা বাজেট সহায়তা পাচ্ছে বাংলাদেশ
Advertisement
এনবিআর বলছে, নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ বা ১,৫৭,৫০০ কোটি টাকা মূল্য সংযোজন কর হিসেবে এবং ৩৪ শতাংশ বা ১,৫৩,০০০ কোটি টাকা আয়কর হিসেবে এবং ৩১ শতাংশ বা বাকি ১,৩৯,৫০০ কোটি টাকা শুল্ক হিসেবে সংগ্রহ করা হবে।
যদিও রাজস্ব কর্মকর্তারা বলেছেন, ইউরোপে যুদ্ধ, ও বৈশ্বিক মন্দার উপর দাড়িয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা করা চ্যালেঞ্জিং হবে। তবে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ও স্বয়ংক্রিয় কর ব্যবস্থা ব্যবহার করে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
ডলারের ঘাটতি, কম রাজস্ব উৎপাদন, অপ্রতুল রেমিট্যান্স প্রবাহ, বিনিময় হারের অস্থিরতা এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির চ্যালেঞ্জের মধ্যে সরকার আগামী জাতীয় বাজেটের জন্য সাড়ে সাত লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করতে পারে সরকার।
আরও পড়ুন: পাঁচ মাসে উন্নয়ন বাজেট খরচ মাত্র ৪৭ হাজার কোটি
Advertisement
সম্প্রতি বাজেট মনিটরিং অ্যান্ড রিসোর্সেস বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সভায় চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রক্ষেপণ ৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মোট দেশজ উৎপাদনের ৫ শতাংশের বেশি প্রস্তাবিত ঘাটতিসহ নতুন বাজেটের রূপরেখা নেওয়া হয় বলে বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
অর্থ বিভাগ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ইউরোপে যুদ্ধের অবসান কবে হবে তা এখনই কেউ বলতে পারছে না। ফলে আগামী বছরও উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রবণতা থাকবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আগামী বাজেটের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রসঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আইনুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, প্রত্যেকবার রাজস্ব বোর্ড যেটা টার্গেট করে সেটা বাস্তবায়ন হয় না। তারা যদি একটু নির্ধারণ করতো কিংবা কর্মপরিকল্পনার কথা জানাতো, কিভাবে তা অর্জন করবে সেটা তারা বলে না। রাজস্ব বোর্ড তাদের জনবল ও অটোমেশন নিয়ে একটা টার্গেট করে কিন্তু কখনই তারা সেটা অর্জন করতে পারে না। এটাও যে হবে, আমি খুব একটা আশাবাদী না।
আরও পড়ুন: ৫০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দেবে এডিবি
তিনি আরও বলেন, রাজস্ব বোর্ডকে প্রতিবছর একটা লক্ষ্যমাত্রা দিতে হয়। সেটা না হলে তাদের তাদের কার্যক্রম গতিশীল হয়না। এবার যেহেতু বিশ্বব্যাংকের একটা চাপ আছে , সে কারণে রাজস্ব বোর্ড হয়তো আদায়ে আরও বেশি কাজ করবে। কিছুটা হলেও আদায় কাছাকাছি হতে পারে বলে আমার ধারণা।
এদিকে চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম পাচঁ মাসে রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক ধারা থেকে বের হতে পারেনি এনবিআর)। অর্থবছরের পঞ্চম মাস গত বছরের নভেম্বরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ৩২৪ দশমিক ৯১ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। এর ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রাজস্ব ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৭১৩ দশমিক ২৪ কোটি টাকা।
এনবিআরের তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে এনবিআরের। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাচঁ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) এনবিআর রাজস্ব আদায় করেছে এক লাখ ১৫ হাজার ৬২০ দশমিক ৭৭ কোটি টাকা। এসময়ে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ২৫ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। ফলে আলোচ্য সময়ে রাজস্ব ঘাটতি ৯ হাজার ৭১৩ দশমিক ২৪ কোটি টাকা।
এসএম/এমকেআর