দেশজুড়ে

টেকনাফ-সেন্টমার্টিন পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে অবশেষে মিললো অনুমতি

অবশেষে কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি মিলেছে। মৌসুমের তিন মাসের মাথায় শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) টেকনাফের দমদমিয়া ঘাট থেকে সেন্টমার্টিন আসা-যাওয়ার অনুমতি পেয়েছে এমভি পারিজাত ও এমভি রাজহংস নামের দুটি জাহাজ।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রশাসনের সব সেক্টর ও পর্যটন সংশ্লিষ্টদের এক বৈঠকে আলোচনা শেষে এ সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন কক্সবাজার বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সমন্বয়ক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান।

কক্সবাজার ট্যুরস অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের (টুয়াক) সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মনিবুর রহমান টিটু জাগো নিউজকে বলেন, নাফ নদীর নাব্য সংকট ও নদীতে একাধিক বালুচর জেগে ওঠার তথ্য পেয়ে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারে আয়োজিত এক সেমিনারে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেন। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ নৌরুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। ফলে অক্টোবর থেকে পর্যটন মৌসুম শুরু হলেও তিন মাসেও জাহাজ চলাচল শুরু হয়নি।

তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের দপ্তরে দপ্তরে যোগাযোগ করেও টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় দ্বীপে বসবাসরত স্থানীয় বাসিন্দাসহ হোটেল-রেস্টুরেন্ট মালিক এবং এ রুটে পর্যটকবাহী জাহাজে দায়িত্বরতদের মধ্যে হতাশা ও দুশ্চিন্তা দেখা দেয়।

Advertisement

সী-ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কায়াব) সভাপতি তোফায়েল আহমদ বলেন, বুধবার আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল। নৌ সচিব মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়-বিভাগের প্রতিনিধি, বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের প্রতিনিধি এবং পর্যটন সচিব মোকাম্মেল হোসেনের উপস্থিতিতে বুধবার বিকেলে বৈঠক হয়। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সভায় জানানো হয়, স্থানীয়ভাবে কক্সবাজার জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, পুলিশ, জনপ্রতিনিধিসহ সভার সমন্বয়ে সার্বিক বিষয়ে পর্যালোচনা করে জাহাজ চলাচলে অনুমতি দেওয়া যাবে কি না তা ঠিক করবে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান বলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকের নির্দেশনা মতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ নির্বিঘ্নে চলাচলের অনুমতি বিষয়ক আলোচনা সভা হয়। এতে সবার সিদ্ধান্ত মতে শুক্রবার সকাল থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ ফিটনেসসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র হালনাগাদ থাকা সাপেক্ষে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। সব কাগজপত্র উপস্থাপন করতে পারায় প্রথমদিন এমভি পারিজাত ও এমভি রাজহংস নামে দুটি জাহাজ চলাচলের অনুমতি পায়। বাকি জাহাজগুলোও পর্যায়ক্রমে অনুমতি দেওয়া হবে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, প্রবালদ্বীপ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ পর্যটন ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু মৌসুম শেষ হতে চললেও সেন্টমার্টিনে টেকনাফ থেকে জাহাজ না চলায় দ্বীপে পর্যাপ্ত পর্যটক আসেনি। ফলে এখানকার জনজীবনে স্থবিরতা নেমে আসে। শুক্রবার থেকে এ রুটে জাহাজ চলাচল শুরু হচ্ছে জেনে দ্বীপের ব্যবসায়ীসহ সবার মধ্যে আনন্দ দেখা দিয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, বিগত তিন মাস টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় পর্যটক সমাগম কম ছিল দ্বীপে। এতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের প্রচেষ্টায় শুক্রবার সকাল থেকে জাহাজ চলাচলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সবার হতাশা কেটে যাবে বলে আশা করছি।

Advertisement

সায়ীদ আলমগীর/এসজে/জেআইএম