আজ ১২ জানুয়ারি বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে এই দিবস। যদিও এই দিনটি বিশেষভাবে পালন করে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চা কাউন্সিল ‘হট টি ডে’ বা ‘গরম চা দিবস’ প্রচলন করে। সকালে ঘুম ভেঙেই ধোঁয়া ওঠা গরম চায়ের পেয়ালায় চুমুক দেন অনেকে। কিংবা নাস্তার টেবিলে এক কাপ গরম চা না খেলে যেন দিনটাই ঠিকভাবে শুরু হয় না।
Advertisement
এরপর কাজের ফাঁকে, অফিসে কিংবা ক্লাসের বিরতিতে আড্ডায় টংয়ের দোকানের চায়ের কাপে ঝড় তোলেন। সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে সন্ধ্যায় চা চাই-ই-চাই। কারো দুধ-চিনি মিশিয়ে, কেউবা রং চা, আদা চা, কেউবা লেবু চা খেতে পছন্দ করেন। এক চায়ের বৈচিত্র্যের শেষ নেই। নানান রঙে ঢঙে রসনাবইলাসীদের মন জয় করে আছে চা। জড়িয়ে আছে বাঙালির প্রতিটিক্ষণে।
চায়ের আবিষ্কার হয়েছিল কিন্তু ৫ হাজার বছর আগে। অনেকেই বলেন চীনে এই পানীয়ের আবিষ্কার। এক ১৭ শতাব্দীতে সেখানে বাস করতেন শেন মং নামের এক কৃষক। ঘুরে বেড়িয়ে নতুন ফসল আবিষ্কার করা ছিল তার নেশা। তখন বর্তমান প্রচলিত খাদ্য শস্য যেমন- ধান, গম, যব ইত্যাদির প্রচলন ছিল না। শেন মং একদিন খাবার উপযোগী শস্য এবং লতাপাতা আবিষ্কারের জন্য বনে বনে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। অপরিচিত কোনো শস্য বা লতাপাতা পেলে সেগুলো চেখে দেখছিলেন। যদিও সবগুলোই খাবার উপযোগী ছিল না। এভাবে সারাদিন বিভিন্ন ফসল আবিষ্কার অভিযানে নিজের অজান্তেই শরীরে ৭২ এরও বেশি প্রকারের বিষ প্রবেশ করিয়ে ফেলেন।
সন্ধ্যায় একটি গাছের তলায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন মং। বিষক্রিয়া দ্রুত তার শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। বসে বসে মৃত্যুর প্রহর গুণছেন। তারপর হঠাৎ কোথা থেকে যেন একটি অপরিচিত পাতা এসে মুখে পড়ল। অবচেতন মনে পাতাটি চিবুতে লাগলেন। এবং সেই ভেষজ পাতার গুণে শরীর থেকে বিষক্রিয়া বিদায় নিল, পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেন তিনি। চীনারা দাবি করে, সেই পাতাটি ছিল মূলত চা পাতা। আর এভাবেই হয় সর্বপ্রথম চা এর আবিষ্কার। কিন্তু সত্যি বলতে এটি নিছক গল্প মাত্র।
Advertisement
তবে সবচেয়ে প্রচলিত গল্প হচ্ছে, ৫ হাজার বছর আগে একজন চীনা সম্রাট গরম পানির কাপ নিয়ে একটি গাছের নীচে বসেছিলেন। তখন কিছু কিছু শুকনো পাতা ওই কাপে এসে পড়ে। পরে সম্রাট সেই পানীয় পান করে মুগ্ধ হন। এভাবে গরম চায়ের সঙ্গে মানুষের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। যদিও এই গল্প কতটা সত্যি তা বলা মুশকিল। কিন্তু, এটাতো সত্যি কথা যে- শত শত বছর ধরে মানুষ গরম চা পান করে আসছেন।
বছরের পর বছর ধরে চা নিয়ে নানান গবেষণা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে গরম পানির সঙ্গে গুল্ম ও পাতা মিশিয়ে পান করা হয়েছে। কিন্তু চায়ের সবচেয়ে আধুনিক সংস্করণ গরম পানির সঙ্গে কয়েক টুকরো চা পাতার মিশিয়ে পান করা। এই পাতা ক্যামেলিয়া সাইনেনসিস উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। এশিয়ায় গরম চা পান শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে। আর ষোড়শ শতাব্দীর আগে ইউরোপে চা প্রবেশ করতে পারেনি।
১৬০০-এর দশকে ইংল্যান্ডের মানুষ এই সুস্বাদু পানীয়টির প্রেমে পড়তে শুরু করেন এবং এটি আধুনিক শ্রেণির জনপ্রিয় পানীয় হয়ে উঠতে শুরু করে। ব্রিটিশ ভারতে চায়ের উৎপাদন প্রবর্তিত হয়। শুধু তাই নয় তখন বিশ্বব্যাপী এটি একটি শিল্প হয়ে ওঠে।
যে যাই হোক। আজকের দিনটি উদযাপন করতে পারেন প্রিয়জনের সঙ্গে। সন্ধ্যায় দুজনে বারান্দায় বা ছাদে বসে শীতের কুয়াশা গায়ে মেখে এক কাপ গরম চা উপভোগ করতে পারেন। চায়ের ভিন্ন রকম স্বাদ নিতে চলে যেতে পারেন টিএসসি বা বাড়ির পাশের চায়ের দোকানে। তুলসি, পুদিনা, কমলা বা তেঁতুল চায়ের সঙ্গে বন্ধুদের নিয়ে জম্পেশ এক আড্ডায় কাটাতে পারেন আজকের শীতের সন্ধ্যা। কাছের মানুষদের উপহার দিতে পারেন নানান স্বাদের চা।
Advertisement
সূত্র: ডেইজ অব দ্য ইয়ার/ ন্যাশনালটুডে
কেএসকে/জিকেএস