হলি আর্টিসানে হামলার ঘটনায় বিচারিক আদালতের রায়ের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) শুনানির জন্য হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ নির্ধারণ করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
Advertisement
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য হাইকোর্টের বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার ও আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন।
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক প্রস্তুত করা হলেও করোনা মহামারির কারণে এই মামলার শুনানির উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন আশা প্রকাশ করে জানান, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এই চাঞ্চল্যকর মামলার ডেথ রেফারেন্সের শুনানি চলতি বছরই হাইকোর্টে শুরু করা সম্ভব। তারই ধারাবাহিকতায় মামলাটি প্রধান বিচারপতির নির্ধারণ করে দেওয়া বেঞ্চে শুনানির জন্য উঠতে পারে।
Advertisement
আরও পড়ুন>> হলি আর্টিসান হামলার ৬ বছর: গুলিতে কেঁপে ওঠে ঢাকা
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতের নৃশংস সেই হামলা-হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০১৯ সালের নভেম্বরে বিচারিক (নিম্ন) আদালতে সাত জঙ্গির ফাঁসি হয়। এরই মধ্যে পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যে করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবের কারণে এই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার নিষ্পত্তি থমকে ছিল।
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, হলি আর্টিসানে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ঘটনায় করা মামলায় সাত জঙ্গির ফাঁসির রায় হয়। ওই রায়কে আমরা সমর্থন করে আদালতে বক্তব্য রাখবো। কারণ রায়টি সঠিক রায়, জঙ্গিদের যে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়েছে সেটা সঠিকভাবেই দিয়েছেন বিচারিক আদালত।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় ঘটেছিল নারকীয় জঙ্গি হামলা। জঙ্গিরা দেশি-বিদেশি নাগরিকসহ ২৩ জনকে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে ৯ জন ইতালির নাগরিক, ৭ জন জাপানি, একজন ভারতীয় এবং একজন বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক। বাকি দুজন ইশরাত আকন্দ ও ফারাজ আইয়াজ হোসেন বাংলাদেশি নাগরিক। হামলা প্রতিরোধে গিয়ে বোমার আঘাতে নিহত হন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন। পরে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত হন জঙ্গিদের ছয়জন। একজন ধরা পড়েন।
Advertisement
আরও পড়ুন>> পুলিশের দৃষ্টিতে যেসব কারণে হলি আর্টিসান হামলা
ওই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন ওই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিপন কুমার দাস। এই মামলার তদন্ত চলাকালে একের পর এক অভিযানে ধরা পড়তে থাকেন অনেক জঙ্গি। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির মামলাটি তদন্ত করে ২০১৮ সালের ১ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। একই বছরের ২৬ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান।
এ মামলার বিচার শুরুর সময় আট আসামির ছয়জন কারাগারে ছিলেন। বিচার চলাকালে বাকি দুজন গ্রেফতার হন। আসামিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬(২)(অ), ৭,৮,৯,১১,১২ ও ১৩ ধারায় চার্জ গঠন করা হয়। মোট ২১১ জন সাক্ষীর ১১৩ জন অত্র আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন।
এরপর আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন এবং রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর এ মামলার বিচারকাজ শেষ হয়। ওইদিনই আদালত রায় ঘোষণার জন্য ২৭ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।
রায়ে মামলার আট আসামির সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে বেকসুর খালাস দেন আদালত। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান এ রায় দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, আব্দুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাদিসুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ এবং মামুনুর রশিদ রিপন।
আরও পড়ুন>> ফের আলোচনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি মেজর জিয়া
এছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।
একই বছরের ৩০ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৭ আসামির ডেথ রেফারেন্স ও মামলার যাবতীয় নথি হাইকোর্টে আসে। এর পরেই ওই সময়ের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ মামলার পেপারবুক প্রস্তুতের নির্দেশ দেন।
এফএইচ/ইএ/জিকেএস