বিশ্ব ইজতেমা ও বিমানবন্দর সড়কে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলার কারণে রাজধানীর মহাখালী থেকে উত্তরা পর্যন্ত উভয় সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। মধ্যরাত থেকে সৃষ্টি হওয়া যানজট বিমানবন্দর এলাকা ছাড়িয়ে রাজধানীর প্রতিটি রুট পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। ফ্লাইওভারগুলোতে গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) যানজটের কারণে অনেককে ফ্লাইট ধরার জন্য মহাখালী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত হেঁটে যেতে দেখা গেছে। মূলত গতকাল রাত ২টা থেকে এই যানজট শুরু হয়েছে। তবে সকালে তা তীব্র আকার ধারণ করেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বিশ্ব ইজতেমার পাশাপাশি বিমানবন্দর সড়কে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলার কারণে এই যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এর প্রভাব পড়েছে ঢাকা-বাইপাস ও ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কেও। এতে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থী, বিমানযাত্রী, কর্মজীবীসহ সাধারণ যাত্রীরা।
আরও পড়ুন > দেশ-বিদেশের মুসল্লিদের পদভারে মুখর তুরাগ তীর
Advertisement
রাজধানীর মহাখালী, কুড়িল বিশ্বরোড, নর্দা, নতুন বাজার ও বাড্ডা এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, কয়েকশ মানুষ যানবাহনের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন। তীব্র যানজটের কারণে গণপরিবহন থেমে থাকায় তাদের দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। অনেককে হেঁটেই গন্তব্যের দিকে রওনা দিতে দেখা গেছে। যানবাহনের এই সংকটের প্রভাব পড়েছে বনানী ও গুলশান এলাকাতেও। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরগামী যাত্রীদের দেখা গেছে গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে যেতে।
মহাখালীতে কথা হয় পাঠাওচালক হাকিমের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমি উত্তরার দিকে যাচ্ছিলাম। তীব্র যানজটের কারণে ইসিবি চত্বর থেকে ফেরত আসতে হয়েছে। একজন যাত্রী ছিল তবে তিনি বাধ্য হয়ে নেমে গেছেন। যানজটের কারণে আজ তেমন যাত্রীও মিলছে না।
ভোগান্তির শিকার যাত্রী আহসান হাবিব বলেন, মাটিকাটা ফ্লাইওভার থেকে হেঁটে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত এসে এয়ারপোর্ট স্টেশনে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে ৩০০ ফিট রাস্তা দিয়ে যাওয়ার জন্য নরসিংদীর বাসে উঠেছি। এ রাস্তায়ও প্রচণ্ড জ্যাম। বাসে এক ঘণ্টা ধরে বসে আছি। রাস্তা বন্ধ। সবাই ইজতেমার দোষ দিচ্ছে। এখন জানতে পারলাম রাস্তার কাজ।
আরও পড়ুন > গাড়ি পার্কিং ও বিমানবন্দরগামীদের জন্য নির্দেশনা
Advertisement
সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠ থেকে বাড্ডা পর্যন্ত আসতে চারবার গাড়ি পরিবর্তন করতে হয়েছে জানিয়ে ভুক্তভোগী মোস্তাক রায়হান জাগো নিউজকে বলেন, রাস্তায় বের হয়েই দেখি তীব্র যানজট। অফিসের সময় হয়ে যাওয়ার কারণে যানজটের মধ্যে চারবার গাড়ি পরিবর্তন করতে হয়েছে। মাঝে বেশ প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত হেঁটে আসতে হয়েছে।
গোলাম মহিউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের দিকে বনশ্রী থেকে বাড্ডা এলাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলাম। রাস্তায় নেমেই দেখি গাড়ি নেই, শত শত যাত্রী রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন। অনেক কষ্টে বনশ্রী থেকে আসমানী পরিবহনে উঠলেও রামপুরা ব্রিজ থেকে নামিয়ে দেয়। এরপর তুরাগ পরিবহনে উঠে মেরুল বাড্ডা পর্যন্ত এলেও বাড্ডা লিংক রোড হেঁটে আসতে বাধ্য হয়েছি। শুধু আমিই না আমার মতো এমন শত শত যাত্রী পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
মহাখালী, খিলক্ষেত ও বিমানবন্দর এলাকায় কর্মরত ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে দলে দলে মানুষ গাজীপুরের টঙ্গীতে আসছেন, এর প্রভাব পড়েছে পুরো রাজধানীর সড়কে।
ট্রাফিক উত্তরা বিভাগের উত্তরা পূর্ব জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গতকাল বুধবার থেকে দলে দলে মানুষ আসছেন বিশ্ব ইজতেমায়। এর প্রভাবে সড়কে যানজট দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন > টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর ৬ প্রস্তাব
ট্রাফিক উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) নাবিদ কামাল শৈবাল জাগো নিউজকে বলেন, সারাদেশ থেকে ইজতেমায় যোগ দিতে প্রচুর লোক আসছে। গাড়ির চাপ বেড়ে গেছে। উল্টাপাল্টা গাড়ি ঢুকাচ্ছে অনেকেই। এতে জট লেগে যাচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বিমানবন্দর সড়ক ব্যবহার না করার অনুরোধ করেন তিনি।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মনিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে বিভিন্ন জেলা থেকে ও বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ এসে তুরাগ পাড়ে জড়ো হচ্ছেন। গতকাল বুধবার থেকে মুসল্লিরা আসতে শুরু করেছেন। ফলে হাজার হাজার মানুষের চাপে উত্তরা থেকে টঙ্গী এলাকায় যান চলাচল স্থবির। উত্তরায় গাড়ি প্রবেশ করতে না পারায় এই যানজটের রেশ বিমানবন্দর এলাকা ছাড়িয়েছে। যানজট নিরসনে ডিএমপির ট্রাফিক পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।
টিটি/বিএ/জিকেএস