ক্যাম্পাস

ছাত্রলীগ সভাপতির বিরুদ্ধে মা-ছেলেকে মারধরের অভিযোগ

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আকিল আফতাব দুর্বার ও তার মাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েছেন দুর্বারের মা শাহিদা আক্তার শিরিন।

Advertisement

অভিযুক্ত বাকিরা হলেন, ছাত্রলীগ সভাপতি রিয়াদের সহযোগী বাকৃবি শিক্ষার্থী আতিক শাহরিয়া সাজু, ইশতিয়াক ইউসুফ ঈশান, তাসনিম বিন হামিদ ওরফে জাহিদ ও রেজুয়ান সুভন।

থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর বুধবার (১১ জানুয়ারি) বিকেলে ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবের হলরুমে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দুর্বারের পরিবার।

সংবাদ সম্মেলনে দুর্বার বলেন, মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে পরীক্ষা শেষে বাকৃবি ছাত্রলীগ সভাপতি ও অভিযোগে উল্লিখিত তার সহযোগীদের হাতে রামদা, রড, লাঠিসহ চলাফেরা দেখে আমার সন্দেহ হয়। এসব দেখে আমি বাকৃবির শিক্ষক পূর্বা ইসলামের কাছে চলে আসি। আমি পূর্বা ম্যাডামের কাছে যেতেই ছাত্রলীগ সভাপতি রিয়াদ ও তার সহযোগীরা পূর্বা ম্যাডামের কক্ষে ঢোকে। এসময় তারা আমাকে ও আমার পরিবারের লোকজনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। তখন আমি গালিগালাজ করতে নিষেধ করলে তারা লোহার রড দিয়ে আমাকে পিটিয়ে আহত করে। তখন আমার মা এবং পূর্বা ইসলাম ম্যাডাম বাধা দিলে তাদেরও কিল-ঘুষি মেরে আহত করে। এসময় আমাদের চিৎকারে আশপাশ থেকে লোকজন ছুটে আসলে হামলাকারীরা চলে যায়।

Advertisement

তিনি বলেন, পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি আমাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর আমার মা বাদী হয়ে বাকৃবি ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াদ ও তার সহযোগীদের নামে কোতোয়ালী মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।

দুর্বার আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নেওয়ার এটাই আমার শেষ সুযোগ। তাই রাজনীতি ছেড়েছি। এর আগেও বেশ কয়েকবার পরীক্ষা দিতে এসে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। আমি এর কঠিন বিচার দাবি করছি।

দুর্বারের মা শাহিদা আক্তার শিরিন বলেন, আমার সামনে ছেলেকে মারধর করছে দেখে আমি ফেরাতে যাই। ফেরাতে গেলে রিয়াদ ও তার সহযোগীরা আমাকেও মারধর করে। পরে ছেলেকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে কোতোয়ালী মডেল থানায় অভিযোগ করেছি।

এদিকে, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ ওঠায় বাকৃবি ছাত্রলীগের সভাপতিকে সাতদিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ। মঙ্গলবার রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান সই করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।

Advertisement

এদিকে, দুর্বারকে মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে বাকৃবি ছাত্রলীগ সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমাকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল। এজন্য আমি ঢাকায় এসেছি। আমার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টি শুনেছি।

তিনি আরও বলেন, আকিল আফতাব দুর্বারের বিরুদ্ধেই তো অভিযোগের শেষ নেই। তার বিরুদ্ধে প্রক্টরের কাছে ৯টা অভিযোগ জমা হয়েছে। সে ক্যাম্পাসে আসেই ঝামেলা করার জন্য। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলেছি, প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. পূর্বা ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, দুর্বার পরীক্ষা শেষে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দেখে আমার রুমে চলে আসে। কিন্তু, ছাত্রলীগ সভাপতি রিয়াদ তার সহযোগীদের নিয়ে দুর্বারকে বেধড়ক মারধর করে। এসময় আমি ও দুর্বারের মা ঠেকাতে গেলে আমাদেরও মারধর করে। ওদের মারধরে আমিসহ তিন শিক্ষক আহত হই। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি এসে আমাদের উদ্ধার করে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো বিবৃতি দিয়েছে, এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এসব ঘটনায় আমি খুব মর্মাহত।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ মহির উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, সংবাদ সম্মেলনে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা সঠিক নয়। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে কোনো আবেদন আসে তবে, তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

এ বিষয়ে কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ জাগো নিউজকে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মঞ্জুরুল ইসলাম/এমআরআর/এএসএম