দেশজুড়ে

নোয়াখালীতে চলছে ‘হাশেম উৎসব’

নোয়াখালীতে দুই দিনব্যাপী ‘হাশেম উৎসব’ শুরু হয়েছে। আঞ্চলিক গানের সম্রাটখ্যাত প্রয়াত গীতিকার, সুরকার ও গায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ হাশেমের ৭৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

Advertisement

মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু।

জাতীয় সংগীতের পর শিল্পী আবুল হাশেম রচিত ‘আঙ্গো বাড়ি নোয়াখালী রয়্যাল ডিসট্রিক্ট ভাই, হেনী মাইজদী চৌমুহনীর নাম কে হুনে নাই’ গানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু করা হয়। পরে বর্ণিল শোভাযাত্রা শেষে গুণী এ শিল্পীর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহাপাঠ করা হয়।

আরও পড়ুন: যশোরে ১২ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসব শুরু বৃহস্পতিবার

Advertisement

হাশেম ফাউন্ডেশনের আয়োজনে অনুষ্ঠান চলবে বুধবার রাত পর্যন্ত। এতে আলোচনা সভা, স্মৃতিচারণ, আবুল হাশেমের লেখা আঞ্চলিক গানসমূহ পরিবেশন, শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের দুই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে ‘মোহাম্মদ হাশেম পদক’ এবং সম্মাননা দেওয়া হবে।

ফাউন্ডেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী মানছুরুল হক খসরুর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, কবি ম পানাউল্যাহ, আবৃত্তিশিল্পী এমদাদ হোসেন কৈশোর, ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মুস্তফা মনওয়ার সুজন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সানজিদা সুলতানা, কবি জামাল হোসেন বিষাদ, কবি ম আরমান প্রমুখ।

মোহাম্মদ হাশেম ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মুস্তফা মনওয়ার সুজন বলেন, আমাদের দাবি আঞ্চলিক গানের জনক মোহাম্মদ হাশেমকে স্বাধীনতা বা একুশে পদকে ভূষিত করা, তার নামে সড়ক, উন্মুক্ত মঞ্চের নামকরণ করা হোক।

এবারের উৎসবে ‘মোহাম্মদ হাশেম পদক’ পাবেন, সম্মিলিত সংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস এবং তবলাবাদক গৌরাঙ্গ চন্দ্র সরকার।

Advertisement

আরও পড়ুন: ২০ তরুণ-তরুণীর বিয়েতে মেজবানি খেলেন দশ হাজার মানুষ

এছাড়াও শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিসহ জনকল্যাণে বিশেষ অবদানের জন্য ফাউন্ডেশনের জুরি বোর্ড মনোনীত ’নিরাপদ সড়ক চাই’ একজন ও উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীকে হাশেম উৎসব ২০২৩ সম্মাননা প্রদান করা হবে।

প্রয়াত শিল্পী মোহাম্মদ হাশেম ১৯৪৭ সালের ১০ জানুয়ারি নোয়াখালীর সদর উপজেলার চরমটুয়া ইউনিয়নের শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৭০ সালে রেডিও পাকিস্তানের অনুষ্ঠান সংগঠক হিসেবে তার পেশাজীবন শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে ঢাকা সংগীত কলেজ, কবিরহাট সরকারি কলেজ, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজসহ দেশের বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতার পর তিনি ২০০৫ সালে নোয়াখালী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে অবসর নেন।

২০০৫ সালে অমর একুশে বইমেলায় উৎস প্রকাশনা বের করে মোহাম্মদ হাশেমের গানের প্রথম সংকলন ‘নোয়াখালীর আঞ্চলিক গান’। এরপর ২০১৫ সালে মোহাম্মদ হাশেমের রচিত বাছাই করা আড়াইশ গান নিয়ে উৎস প্রকাশনী বের করে ‘নির্বাচিত নোয়াখালীর আঞ্চলিক গান’।

আরও পড়ুন: ভাসানচরে ১০ মাসে ৫২৫ রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম মোহাম্মদ হাশেম ২০২০ সালের ২৩ মার্চ ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মাইজদী শহরের বড় দীঘির উত্তর পাড়ে কোর্ট মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

অধ্যাপক মোহাম্মদ হাশেমের লেখা গান চর্চা ও সংরক্ষণের লক্ষ্যে ২০২০ সালে যাত্রা শুরু করে মোহাম্মদ হাশেম ফাউন্ডেশন। জেলা শহরে তিন বছর ধরে ১০ জানুয়ারি মোহাম্মদ হাশেমের জন্মদিনে হাশেম উৎসব আয়োজন করে আসছে এ ফাউন্ডেশন। ২০২২ সাল থেকে প্রবর্তন হয় মোহাম্মদ হাশেম পদক।

ইকবাল হোসেন মজনু/জেএস/এমএস