চাকরি জাতীয়করণ ও ট্রাস্ট আইন বাতিল করে রাজস্ব খাতে নেয়ার দাবিতে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পে কর্মরত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডার (সিএইচসিপি) সদস্যরা শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে আমরণ অনশন শুরু করেছেন।মঙ্গলভার দিনভর রাজধানীর মহাখালীস্থ প্রকল্প অফিস ঘেরাও ও প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন সত্ত্বেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিংবা প্রকল্প কর্তৃপক্ষ দাবি আদায়ের বিষয়ে কোনো আশ্বাস দেয়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অবস্থান নেন তারা।বাংলাদেশ কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম জানান, আমাদের পুলিশ জোর করে মহাখালীতে অবস্থিত প্রকল্প অফিসের সামনে থেকে উঠিয়ে দিয়েছে।আমরা দাবি আদায়ের কর্মসূচিতে থেকে এবার পিছু হটছি না। আমরা মহাখালী থেকে পায়ে হেটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আমরণ অনশন কর্মসূচি চলবে।তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কথা দিয়ে কথা রাখেনি। আমরা আর মিথ্যে আশ্বাসে প্রলুব্ধ হচ্ছি না। ন্যায্য দাবির বাস্তবায়ন দেখতে চাই।সিএইচসিপি কর্মচারীরা জানান, চাকরি জাতীয়করণ, ট্রাস্ট আইন বাতিল, সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ ও বৈষম্যের অবসানের দাবিতে মূলত এই কর্মসূচি। সারাদেশ থেকে ১৩ হাজার সিএইচসিপি কর্মচারীর মধ্যে কমপক্ষে ১০ হাজার কর্মচারী এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছেন।মঙ্গলবার তারা সকাল থেকে মহাখালীস্থ প্রকল্প অফিস ঘেরাও করেন। তবে বিকেলের পর থেকে বনানী থানা পুলিশ জলকামান, সাজোয়া যান (এপিসি) নিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়। পুলিশি বাধায় অনশন ও ঘেরাও কর্মসূচি শেষে সিএইচসিপি কর্মচারীরা পায়ে হেটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে রওনা হন।উল্লেখ্য, এর আগে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দাবি জানানোর পরও কোনো সাড়া না পাওয়ায় এই কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান সিএইচসিপি কর্মচারীরা। একই দাবিতে গত সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন করে কর্মবিরতি কর্মসুচিও পালন করেছেন কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা।জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এই হেলথ কেয়ারগুলোকে রাজস্ব খাত থেকে একটি ট্রাস্ট আইনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। সিএইচসিপি সূত্র জানায়, জাতীয় বেতন কাঠামোয় সবার বেতন বাড়লেও তাদের বেতন বৃদ্ধি না করে ১৪ নম্বর গ্রেডেই রাখাতে তাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এ ছাড়া তারা সময় মতো বেতন-ভাতা পান না।২০১৩ সালে তাদের চাকরি জাতীয়করণের আশ্বাসে এসিআর লেখা ও সার্ভিস বুক খোলার নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অথচ এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। দেশের ১৩ হাজার ৬৮১টি কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপি কর্মবচারীরা এতে সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছেন।১৯৯৬ সালে সরকার দেশে মোট ১৩ হাজার ৬৮১টি কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করে। সরকার পরিবর্তনের পর ২০০১ সালে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০০৮ সালে কমিউিনিটি ক্লিনিকগুলো আবারো চালু হলে আশার আলো দেখেন তারা। সে সময় কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডারদের নিয়োগ দেয়া হয়।তখন থেকে তারা সীমিত সুযোগ-সুবিধার পরও স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে দেশে মা ও শিশু মৃত্যুর হার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে চেষ্টা চলছে। ২০১৩ সালে চাকরি জাতীয়করণের আশ্বাস দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এজন্য বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন (এসিআর) লেখা ও সার্ভিস বুক খোলার নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তিন বছর ধরে দাবি আদায়ের বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।জেইউ/বিএ
Advertisement