ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে রাজা চা। প্রতিনিয়ত রাজা মামার চায়ের স্বাদ নিতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এ স্টলে ভিড় জমাচ্ছেন।
Advertisement
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সরেজমিন দেখা যায়, তার স্টলের সামনে ভিড় জমাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। কেউ এ চায়ের স্বাদ নিচ্ছেন কেউবা আবার চায়ের স্বাদ নিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন।
তার আসল নাম আজহার উদ্দিন। বসয় ৪৩ বছর। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার নওধার গ্রামে। তার বাবার নাম আলীম উদ্দিন। ছোটবেলা থেকে নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে তিনি আজ এ অবস্থায় এসেছেন। অভাবের তাড়নায় একবার দুবাইতেও যান তিনি। ২০১৮ সালে দেশে ফিরে তিনি চায়ের ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে সারাদেশে তার ১৮টি শাখা রয়েছে। ভবিষ্যতে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়াতেও চায়ের একটি শাখা দেওয়ার চিন্তা রয়েছে। রাজা চা বিক্রি করে তিনি এতেই জনপ্রিয় হয়েছেন যে, তার সঙ্গে সেলফি তুলতে অসংখ্য মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন।
আরও পড়ুন>>> ‘রাজকীয়’ চা বেচে রাজার লাখ টাকা আয়
Advertisement
কথা হলে আজহার উদ্দিন জানান, তার বাবা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। জায়গা-জমি বিক্রি করে তিনি বিদেশ পাড়ি জমান। তখন তার ধারণা ছিল, বিদেশ গিয়ে তিনি প্রতি মাসে ৪০-৫০ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারবেন। কিন্তু সে সুযোগ তার হয় নি। দুবাইতে গিয়ে একটি চায়ের দোকানে কাজ করার সুযোগ হয় তার। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন, দেশে ফিরে এমন একটি চায়ের দোকান দেবেন। দেশের মানুষ তার দামি চা খাবে কি না প্রথমে সন্ধিহান ছিলেন তিনি। কিন্তু তার তৈরি চায়ের স্বাদে মুগ্ধ হয়ে ক্রেতারা তাকে রাজা মামা উপাধি দেন।
তার চায়ে কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম, জাফরান, নানা জাতের মসলা, তালমিছরি, গরুর দুধ ও গুঁড়া দুধ মেশানো হয়। এছাড়া এটি বালুর তাপে গরম করা হয়। তার চা কেন এত বিখ্যাত-তা না বললেও তিনি জানান, চায়ে তিনি যে জাফরান ব্যবহার করে থাকেন সেটার প্রতি কেজি দাম ৯-১০ লাখ টাকা। তার চায়ে ব্যবহার করা প্রত্যেক উপাদানই খুবই দামি। তবে সে সুলভমূল্যে এ রাজা চা বিক্রি করে থাকেন। তার তৈরি এ চায়ের দাম প্রতি কাপ ৫০ টাকা।
আরও পড়ুন>>> বাণিজ্য মেলায়ও বিখ্যাত ‘সাত রঙের চা’
তিনি আরও জানান, যখন বিদেশ থেকে দেশে ফিরে চায়ের ব্যবসা শুরু করেন গ্রামের অনেকে হাসি তামাশা করেছিল। কিন্তু আজ দেশের মানুষ তাকে সত্যিই রাজা বানিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে তার ১৮টি শাখা ৭২ জন স্টাফ রয়েছেন। যাদের প্রত্যেককে তিনি ১২-২৮ হাজার টাকা সম্মানী দেন।
Advertisement
চা খেতে আসা নাদিম হোসেন নামের এক যুবক জানান, আমি আরও অন্য সব চায়ের দোকানের স্বাদ নিয়েছি, কিন্তু তার দোকানের চায়ের স্বাদ সম্পূর্ণ আলাদা। এক কথা বলতে গেলে অসাধারণ।
নুসরাত জাহান নামের আরেক তরুণী জানান, রাজা মামার চা সম্পূর্ণই ব্যতিক্রম। তিনি যেভাবে যত্ন সহকারে চা তৈরি করেন ওই হিসেবে চায়ের দাম কমই আমি মনে করি।
আরও পড়ুন>>> ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় নিয়ে চলছে ‘অথবা ডটকম অনলাইন বাণিজ্যমেলা’
এবারের মেলা গত বছরের তুলনায় পরিসর, আয়োজন ও সাজসজ্জায় বড় পরিবর্তন এসেছে। গত বছর মেলায় স্টল ছিল ২২৫টি। এবার দেশি-বিদেশি স্টল বসছে ৩৩১টি। এবারের মেলায় মোট স্টল ও প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ৪৮৩টি। এর মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ১১২টি, মিনি প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ১২৮ ও বিভিন্ন ক্যাটাগরির স্টলের সংখ্যা ২৪৩টি। এর মধ্যে বিদেশি প্যাভিলিয়ন ২৭টি, বিদেশি মিনি প্যাভিলিয়ন ১১টি ও বিদেশি প্রিমিয়ার স্টলের সংখ্যা ১৭টি।
রাশেদুল ইসলাম রাজু/এমআইএইচএস/এমএস