কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় তাঁত শিল্পকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে প্রসেসিং, প্রিন্টিং ও ডায়িংয়ের জন্য প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেয় বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড। আধুনিক এসব যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং স্থাপনের কাজ করছে খুলনা শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ।
Advertisement
চুক্তি অনুযায়ী কাজের সময় শেষ হয়েছে গত বছরের জুন মাসে। কিন্তু এরপর আরও ছয় মাস অতিবাহিত হলেও কাজের অগ্রগতি মাত্র ৩০ শতাংশ। অবশিষ্ট ৭০ ভাগ কাজের প্রায় ২০ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ খোলা আকাশের নিচে পলিথিন মুড়ে রাখা হয়েছে। রোদ, বৃষ্টি ও ঝড়ে দিনেদিনে যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট হচ্ছে।
আরও পড়ুন: লাভের লোভে ফসলের মাটি ইটভাটায়
কুমারখালী তাঁত বোর্ড সূত্রে জানা যায়, খুলনা শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কাজ শুরু করে। চুক্তি অনুযায়ী ২০২২ সালের জুন মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা। সেলক্ষ্যে খুলনা শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ের ৪৬টি যন্ত্রপাতি কুমারখালী তাঁত বোর্ডের কাছে হস্তান্তর করে এবং প্রায় ৩০ শতাংশ যন্ত্রপাতি স্থাপন করে।
Advertisement
তবে অবশিষ্ট যন্ত্রগুলো অবকাঠামোর সঙ্গে সমন্বয় না হওয়া, উপযুক্ত অবকাঠামো না থাকা এবং পুরাতন যন্ত্রপাতি অপসারণে বিলম্ব হওয়ায় এখনো স্থাপন করা যায়নি। যন্ত্রপাতিগুলো খোলা জায়গায় এলোমেলোভাবে পড়ে আছে। এগুলোর মধ্যে কোনোটির দাম কোটি টাকা। প্রায় ১০ মাস ধরে এগুলো পড়ে আছে।
কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন, ৩২ কোটি টাকার যন্ত্র দিনের পর দিন এভাবে পড়ে আছে অথচ দেখার কেউ নেই। লোক নেই, অবকাঠামো নেই। তাহলে যন্ত্র কেনার দরকার কী? যন্ত্র চলুক বা না চলুক, কোনো অসুবিধা নেই। এই ৩২ কোটি টাকার হিসাব কে দেবে?
তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো যদি না থাকে তাহলে কার স্বার্থে এসব মূল্যবান যন্ত্রপাতি কেনা হলো এসব বিষয় তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
কুমারখালী উপজেলা তাঁত উন্নয়ন সমবায় সমিতির সভাপতি মো. শওকত আলী বলেন, সরকার তাঁত শিল্পকে আধুনিকায়ন ও তাঁতিদের ভাগ্য বদলের জন্য প্রায় ৩৪ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তাদের অবহেলায় মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শেষ হয়নি। কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি খোলা আকাশের নিচে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে, যা নষ্টের উপক্রম।
Advertisement
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় অনুমোদনহীন ৬ ইটভাটাকে ২৪ লাখ টাকা জরিমানা
এ বিষয়ে কুমারখালী তাঁত বোর্ডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. মেহেদী হাসান বলেন, জায়গার অভাবে যন্ত্রপাতিগুলো বাইরে রাখা হয়েছে। পুরাতন যন্ত্রাংশ গত ডিসেম্বরে অপসারণ করা হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেনি। বিষয়টি বারবার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হচ্ছে। আশা করছি, খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে।
এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেলো খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছ থেকে কাজটি সাব-কন্ট্রাক্টে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কে সোবহান ট্রেডার্স। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোবহান ট্রেডার্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সামিরুল আক্তার বলেন, তাঁত বোর্ডের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে এতদিন যন্ত্রপাতিগুলো স্থাপন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। আগামী সপ্তাহ থেকে বাকি যন্ত্রাংশ স্থাপন করা শুরু হবে। আশা করছি, আগামী দুই মাসের মধ্যেই পুরো যন্ত্রাংশ স্থাপন করা শেষ হবে।
আল-মামুন সাগর/এমআরআর/জিকেএস