‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২২’-এ দেওয়া ক্ষমতা বলে প্রতি মাসে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ে সরকার একটি কৌশল নির্ধারণ করছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
Advertisement
সোমবার (৯ জানুয়ারি) রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে সিরাজগঞ্জ ৬৮ মেগাওয়াট সোলার পার্ক প্রকল্পের পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট (পিপিএ) ও ইমপ্লিমেন্টেশন এগ্রিমেন্ট (আই) স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী একথা জানান।
আরও পড়ুন: বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ২১ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ
মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর গত ১ ডিসেম্বর ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২২’ জারি হয়। এ অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিশেষ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) নয় ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণ, পুনর্নির্ধারণ ও সমন্বয় করতে পারবে সরকার।
Advertisement
বিশ্ব বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কবে থেকে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হবে- জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন তো একটা সমন্বয় হয়ে গেছে। আমরা একটা ম্যাকানিজম (কৌশল) তৈরি করছি, যাতে প্রতি মাসে এটার সমন্বয় চলতে থাকে।
শুধু তেলের ক্ষেত্রে এটা হবে নাকি বিদ্যুৎ-গ্যাসের ক্ষেত্রে হবে- তিনি বলেন, ‘সব, সবগুলোর।’
বিইআরসি গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিইআরসি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, এটা সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। তারা তাদের সময় অনুযায়ী সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন।’
‘আমরা যে সংশোধিত আইনটার অধ্যাদেশ করেছি, এখন যেটা সংসদে দিয়ে সংশোধন করছি। আমরা যাতে প্রতি মাসে (দাম) সমন্বয়ে যেতে পারি। আমরা আগেই বলেছি, পার্শ্ববর্তী দেশসহ অন্যসব দেশে এনার্জির দামের সঙ্গে বিদ্যুতের দামও তারা সমন্বয় করে। আপনারা দেখেছেন বিশ্বব্যাপী মন্দা অবস্থা। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে।’
Advertisement
সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ক্ষেত্রে পুরোপুরি নয় কিছু অংশ সমন্বয় করেছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সেটা সমন্বয় করার জন্য সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। গ্যাসের ক্ষেত্রেও আমরা যদি সমন্বয় করতে পারি তাতে যে ব্যাকলক হয়ে গেছে, সেগুলোতে অ্যাডজাস্টমেন্টে আসতে হবে।’
আরও পড়ুন: বিদ্যুতের দাম বাড়লো ২০ শতাংশ, ডিসেম্বর থেকে কার্যকর
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বিদ্যুতের উৎপাদন পর্যায়ে দাম সমন্বয় করেছি। খুচরা পর্যায়ে বিইআরসি এটা নিয়ে শুনানি করেছে। এটা সম্পূর্ণ বিইআরসির ওপর নির্ভর করবে- তারা কীভাবে দাম সমন্বয় করবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমাদের সিস্টেম লস এখন ৭ শতাংশের মতো। তাহলে অপচয় হচ্ছে কোথায়? গ্রাহক পর্যায়ে তারা সাশ্রয়ী হতে পারেন।’
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান নসরুল হামিদ।
নতুন বছরে কি আগের মতো লোডশেডিংয়ের মুখোমুখি হতে হবে- এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করছি না, অবশ্যই না। কে ফেস করতে চায় লোডশেডিং। আমরা গত বছরের চেয়ে অবশ্যই ভালো বিদ্যুৎ দেবো।’
সোলার পার্ক প্রকল্পের বিদ্যুৎ কিনতে চুক্তি
সিরাজগঞ্জ ৬৮ মেগাওয়াট সোলার পার্ক প্রকল্পের পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট (পিপিএ) এবং ইমপ্লিমেন্টেশন এগ্রিমেন্ট (আইএ) সই হয়েছে। বিদ্যুৎ ভবনে এ চুক্তি হয়। নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (নওপাজেকো) এবং চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি, চায়না) যৌথ মালিকানাধীন বাংলাদেশ-চায়না রিনিউয়েবল এনার্জি কোম্পানি (প্রা.) লিমিটেডের (বিসিআরইসিএল) আওতায় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সবাই যেন প্রস্তুত থাকে, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নিয়ে প্রতিমন্ত্রী
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধিতে ৫০০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিসিআরইসিএল যাত্রা শুরু করে। সিরাজগঞ্জ ৬৮ মেগাওয়াট সোলার পার্ক প্রকল্পটি বিসিআরইসিএলের আওতাধীন প্রথম বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প। গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিসিআরইসিএল এবং কনসোর্টিয়াম অব প্যারিওশেন-ফেডি-সিনোহাইড্রো, চায়নার মধ্যে এই প্রকল্পের ইপিসি চুক্তি সই হয়। ইতোমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির বড় সুবিধা হলো এর ক্যাপাসিটি চার্জ বা ফুয়েল কস্ট কোনোটাই নেই। আমরা চেষ্টা করছি দেশে যতগুলো নন-এগ্রিকালচারাল ল্যান্ড আছে সেসবকে ছোট ক্যাপাসিটির মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানির আওতায় নিয়ে আসা।
নসরুল হামিদ বলেন, আমাদের লক্ষ্য রয়েছে সৌর এবং বায়ু থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা। ইতোমধ্যে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাইপলাইনে আছে। এর সাথে ৫০০ মেগাওয়াট যুক্ত হলেই আমাদের টার্গেট পূরণ হবে। তবে এটি বাস্তবায়নে দেড় বছর সময় লাগতে পারে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) মুনীরা সুলতানাসহ অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
আরএমএম/জেএইচ/জেআইএম