নাম ডাক আর তারকা খ্যাতিতে হয়ত শোয়েব মালিকের চেয়ে একটু পিছিয়ে। তবে টি-টোয়েন্টি পারফরমেন্সকে মানদন্ড ধরলে তাকে পিছিয়ে রাখার কোনোই সুযোগ নেই। এ মুহূর্তে তিনিই সে অর্থে বিপিএলের অন্যতম শীর্ষ পারফরমার।
Advertisement
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ইংলিশ ক্রিকেটের অন্যতম ব্যাটিং স্তম্ভ তিনি। যে কোন দলের যে কোন বোলারের বিপক্ষে হাত খুলে মারায় যার জুড়ি মেলা ভার।
৫৫ ম্যাচে একটি সেঞ্চুরি ও ১৫টি হাফ সেঞ্চুরি তার মান ও কার্যকরিতার বড় দলিল। এছাড়া তার ব্যাটিং গড় (৩৮.৮৪) আর স্ট্রাইকরেটও (১৩৫.৭১) দুর্দান্ত। বেশি দুর পিছন ফিরে তাকাতে হবে না, এই গত বছর অক্টোবর মাসে মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে পাকিস্তানের লাহোরে (৪৭ বলে ৮ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কায় ৭৮*) এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ক্যানবেরায় (৪৯ বলে ৭ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কায় ৮২) দুটি ‘বিগ ফিফটিই' বলে দিচ্ছে ৩৫ বছর বয়সে এখনো মালানের ব্যাট কতটা ধারালো।
শুরুতে তার আসার কথা ছিল না। তবে এবারের বিপিএলের শেষ মুহূর্তের সংযোজন এ ইংলিশ অ্যাটাকিং ব্যাটার। চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে রংপুর রাইডার্সের বিক্ষে বড় ইনিংস খেলা সম্ভব হয়নি। ৯ বলে ২ বাউন্ডারি ১ ছক্কায় ১৭ রান করে রংপুরের জিম্বাবুইয়ান অফস্পিনার সিকান্দার রাজার বলে আউট হয়ে ফিরেছেন সাজঘরে।
Advertisement
ডেভিড মালান যেভাবে শুরু করেছিলেন, ইনিংসটা বড় করতে পারলে হয়তো খেলার ফল ভিন্ন হতে পারতো। কুমিল্লাকে জিতিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হতে পারতেন; কিন্তু তা পারেননি। ভালমত জ্বলার আগেই নিভে গেছে তার ইনিংসে প্রদীপ।
আগামীকাল সোমবার সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ। খুব স্বাভাবিকভাবেই জয়ের পথ খুঁজে পেতে মরিয়া চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা। তাই আজ কনকনে বাতাস আর প্রচন্ড শীতেও দুপুরে লম্বা চওড়া প্র্যাকটিস সেশন ছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের। সে অনুশীলনে এসে মিরপুর বিসিবি একাডেমি মাঠে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললেন ডেভিড মালান।
অনেক কথার ভিড়ে জানিয়ে দিলেন, বিপিএল তার ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের শুরুর দিকের এক আসর। এ আসর খেলে তিনি অনেক কিছু শিখেছেন। প্রতিকূলতাকে কিভাবে অতিক্রম করতে হয়, মন্থর গতির ও নিচু বাউন্সি পিচে কিভাবে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়? সে কৌশল রপ্ত করতেও বিপিএলের যথেষ্ট ভূমিকা ছিল বলে মন্তব্য মালানের। তার কাছে তাই বিপিএল এক আকর্ষণীয় ও ভাল টি-টোয়েণ্টি ফ্রাঞ্চাইজি আসর।
তাইতো মুখে এমন কথা ডেভিড মালানের, ‘বিপিএল সবসময়ই উপভোগ করি। আমার ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের টুর্নামেন্ট এটি। এখানে খেলেই আমি অনেক কিছু শিখেছি। আমি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও খেলেছি। দুটি টুর্নামেন্টই আমার খেলায় উন্নতি আনতে সাহায্য করেছে। সে জন্যই বাংলাদেশে আসার কোনো সুযোগই আমি হাতছাড়া করি না।’
Advertisement
বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় খেলার কারণে এ দেশের দুই প্রধান ক্রিকেট ভেন্যু ঢাকা ও চট্টগ্রামের পিচ সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা জন্মেছে তার। সে আলোকে বলেন, ‘সব দেশের ক্রিকেটেরই ভিন্নতা আছে। ভিন্ন ভিন্ন চ্যালেঞ্জ থাকে। ভিন্ন কন্ডিশন, পিচ, খেলার ধরন। আপনি চট্টগ্রামে খেললে পাবেন অন্যতম সেরা ব্যাটিং উইকেটে খেলার অভিজ্ঞতা। মিরপুরে আঁচ করতে পারবেন না আপনি কি পেতে যাচ্ছেন। আপনাকে শিখতে হবে কিভাবে মানিয়ে নিতে হয়। আপনি বিদেশি ক্রিকেটারদের সামর্থ্য দেখুন আর স্থানীয়দের দেখুন। সঙ্গে যদি কন্ডিশন যোগ করেন তাহলে বলতেই হয় এখানকার ক্রিকেট যথেষ্ট মানসম্মত। এখানে খেললে আপনি অনেক স্কিল শিখবেন। যা অন্য টুর্নামেন্টে পাবেন না।’
বিপিএলকে ভাল মানের আসর মনে হয় তার। তবে মানছেন এই টুর্নামেন্টের মান আগে ভালো ছিলো এবং আগামীতে সেই মান ফিরিয়ে আনাটাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ। তা জানিয়ে মালান বলেন, ‘আমি বিপিএলের শুরুতে আন্দ্রে রাসেল, শহিদ আফ্রিদি, সুনিল নারাইন, পোলার্ড- একই সঙ্গে এদের সাথে খেলেছি। ঠিক যেন আইপিএল দলের মতো। মান আগে ভালোই ছিল। এখন হয়তো বিসিবি ও দলের মালিকদের চ্যালেঞ্জ এটাই- বিশ্বের সেরা ক্রিকেটারদের ফিরিয়ে আনা।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এখানে খেলার মান ভালো। বিপিএল সবসময়ই তরুণ ইংলিশ ক্রিকেটারদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য আদর্শ টুর্নামেন্ট। বিপিএল যদি মান ধরে রাখতে পারে, তাহলে সে ক্রিকেটাররা নিশ্চয়ই আবার বিপিএলে ফেরা শুরু করবে।’
এবারবি/আইএইচএস