দেশজুড়ে

রাজবাড়ীতে ইটভাটায় কয়লার ব্যবহার নেই, অবাধে পুড়ছে কাঠ

রাজবাড়ীতে একের পর এক অভিযানের পরও বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ ইটভাটা। জেলায় মোট ৮৭টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে ৬৪টিরই ছাড়পত্র ও লাইসেন্স নেই। এসব ইটভাটার বেশিরভাগই গড়ে উঠেছে ফসলি জমিসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকায়। প্রতিটি ভাটায় কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এতে যেমন পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, তেমনি উজাড় হচ্ছে পরিবেশের বন্ধু গাছ।

Advertisement

ইটভাটা মালিকরা বলছেন, কয়লার দাম বেশি হওয়ায় তারা বাধ্য হয়ে কাঠ-খড়ি পোড়াচ্ছেন। তবে সরকারের নির্দেশনা মেনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কয়লায় ইট পোড়ানো শুরু করবেন।

বেশ কয়েকটি ইটভাটা পড়েছে পৌরসভার মধ্যে। মহাসড়কের পাশে ভাটা হওয়ায় মাটি বহনকারী ট্রাক চলাচলে ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সড়কগুলো।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জেলার প্রায় সব ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। প্রতিটি ভাটায় বড় রড় কাঠের স্তূপ। শ্রমিকরা কাঠ চেরাই করে জ্বালানির জন্য প্রস্তুত করছেন। প্রতিদিন এসব ভাটায় হাজার হাজার মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।

Advertisement

স্থানীয় আলাউদ্দিন শেখ, রেজাউল মোল্লা, হারেজ মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, মাটি নিয়ে ট্রাকগুলো যাওয়ার সময় রাস্তার ধুলাবালি ঘরে উড়ে এসে পড়ে। এতে ঘরের আসবাবপত্র, পোশাকসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ধুলার আস্তরণ পড়ে যায়। অনেক সময় খাবারে ধুলা এসে পড়ায় না খেয়েই উঠে যেতে হয়। মাটি মিক্সার করা মেশিনের শব্দেও অতিষ্ঠ আমরা।’

মোটরসাইকেল চালক আবু সাঈদ, ভ্যানচালক রাজিব ও আবুল কালাম আজাদ বলেন, ট্রাক থেকে সড়কে পড়ে থাকা মাটি সামান্য বৃষ্টিতে পিচ্ছিল হয়ে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। আমাদের দুর্ভোগ দেখার কেউ নেই। যারা দেখবে তারা বড় বড় নোট নিয়ে বসে আছে।’

আর অ্যান্ড বি ইটভাটার ম্যানেজার আনিছুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ভাটায় খড়ি পোড়াচ্ছেন। তবে কয়লাও পোড়াবেন। এরই মধ্যে কিছু কয়লা আনা হয়েছে।

এ কে এম ভাটার ম্যানেজার রুহুল আমিন বলেন, কয়লার পোড়ানোর সব প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। কিন্তু কয়লার অতিরিক্ত দামের কারণে কাঠের খড়ি দিয়ে ইট পোড়ানো শুরু করেছেন। খুব শিগগির কয়লা ব্যবহার করবেন।

Advertisement

এস বি এস ইটভাটার মালিক বদরুল সরদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘কীভাবে কাঠ পোড়াচ্ছি, তা ডিসি অফিসে গিয়ে সাক্ষাৎকার নেন। উনারা ভালো বলতে পারবেন।’

কে বি ইটভাটার ম্যানেজার অতুল ঘোষ। তিনি বলেন, কয়েকবছর এভাবে চললেও আশপাশে কোনো ক্ষতি হয়নি। গতবছর কয়লায় ইট পুড়িয়েছেন। কিন্তু এবার কয়লার দাম বেশি হওয়ায় কাঠ পোড়াচ্ছেন। তবে তাদের কাগজপত্র সব ঠিক আছে।

ডি এস বি ভাটার মালিক খায়রুল হাসান বিন্দু ও ৭৭৭ ভাটার মালিক টুটুল জানান, দুই বছর আগেও কয়লার দাম ছিলে সাড়ে ৭ থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকা টন। এখন সেই কয়লার দাম হয়েছে ৩০ হাজারের বেশি। তারপরও কয়লা সব সময় পাওয়া যায় না। ফলে তাদের জন্য ভাটা চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ছে।

তারা বলেন, কয়লায় ইট পোড়ালে এক হাজার ইট কমপক্ষে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করতে কবে। এতে ব্যবসায় প্রভাব পড়বে। তবে কয়লার দাম কমানো হলে তাদের মতো ভাটা ব্যবসায়ীরা একটু বাঁচতেন।

এ বিষয়ে ফরিদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, অবৈধ ইটভাটায় প্রতিবছর অভিযান পরিচালনা করা হয়। এবারও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে একটি ভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি কিছু্ ইটভাটাকে জরিমানা করা হয়েছে। রাজবাড়ীর অবৈধ ইটভাটা বন্ধে আপ্রাণ চেষ্টা করবেন।

রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, ইটভাটা মালিকদের নীতিমালা সম্পর্কে জানানোর পাশাপাশি জ্বালানি কাঠ পোড়ানো যাবে না বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানোর অভিযোগ পেলে জেলা প্রশাসন ও তাদের সহযোগিতায় পরিবেশ অধিদপ্তর মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছে। এটি অব্যাহত থাকবে।

এসআর/জিকেএস