আফগানিস্তান থেকে হঠাৎ পিছু হাঁটতে হয় যুক্তরাষ্ট্রকে। এরপর তালেবান দেশটিতে ক্ষমতা দখল করে। আফগানিস্তানের রাজনৈতিক পটভূমি পরিবর্তনে ব্যাপক উৎফুল্ল দেখা যায় প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানকে। চীনে মার্কিন পশ্চাদপসরণকে বিবেচনা করা হয় অভ্যুত্থান হিসেবে।
Advertisement
স্বাভাবিকভাবেই অনেকে আমেরিকানদের এক চোখে দেখতে পছন্দ করে। কিন্তু তালেবানের জয়ে অনেক বেশি ঝুঁকি তৈরি হয় পাকিস্তানিদের জন্য। ১৯৯০ এর দশকে পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক গুপ্তচরদের দ্বারা আফগানিস্তানের ইসলামী আন্দোলন আংশিকভাবে তৈরি হয়েছিল এবং তখন থেকেই তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়।
তালেবানকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া পাকিস্তানি জেনারেলদের কাছে যুক্তি ছিল, অন্যদের কাছে নয়। ভারতের সঙ্গে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে সুবিধা পেতে পাকিস্তান তালেবানের মাধ্যমে আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল।
পাকিস্তানের স্বপ্ন কতটা পূরণ হয়েছে তা এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমানে তালেবানের ওপর কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ নেই পাকিস্তানের। তাছাড়া তালেবানের বিজয়ে পাকিস্তানের পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। পাকিস্তানের অভ্যন্তরে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছে। যার মধ্যে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান অন্যতম। আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পরই পাকিস্তানে হামলার সংখ্যা দিগুণ হয়েছে। কারণ দুই দেশের তালেবানের মধ্যে আদর্শগত মিল রয়েছে। দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে এরই মধ্যে বিতর্কেও জড়িয়েছে।
Advertisement
তবে শুধু তালেবান ইস্যু নয় দেশ দুইটির মধ্যে সমস্যা তৈরি হয়েছে ডুরান্ড লাইন নিয়েও। সেখানে প্রায়ই দুই দেশের সীমান্ত বাহিনী সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে। ডিসেম্বরে সেখানে আফগানিস্তানের হামলায় পাকিস্তানের ছয় বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। এমন পরিস্থিতি সীমান্তে বেড়া দিচ্ছে পাকিস্তান। অন্যদিকে তা ভেঙে ফেলছে আফগানিস্তান।
সবকিছু মিলিয়ে সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পাকিস্তান মনে করেছিল সব জায়গায় তারাই প্রতিনিধিত্ব করবে। সত্যি কথা বলতে তালেবান নিজেরাই সরাসরি বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে। এমনকি ওয়াশিংটনের সঙ্গেও।
অন্যদিকে চীন মনে করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়া তাদের জন্য আশীর্বাদ হবে।ওয়াশিংটনভিত্তিক একটি থিঙ্ক-ট্যাঙ্কের কর্মকর্তা এন্ড্রু স্মল বলেন, চীনা নীতিনির্ধারকরা অন্তত আশা করেছিলেন যে তালেবানরা কূটনৈতিক স্বীকৃতি চাওয়ার ও অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাবে।
ক্ষমতায় আসার পরই নারী বিদ্বেষী বেশি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তালেবান। এর মধ্যে অন্যতম হলো শিক্ষা ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা। তাছাড়া এনজিওর চাকরির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ফলে অন্যদের মতো চীনও তাদের অনেক কার্যক্রম স্থগিত করেছে। কাবুলে চীনের কূটনীতিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। যদিও তারা এখনো তালেবানকে স্বীকৃতি দেয়নি। চীন আশা করছে উইঘুর ইস্যুতে তারা তালেবানের সহায়তা পাবে।
Advertisement
আফগানিস্তানে যে বড় চীনা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তা বন্ধ হয়ে গেছে। এরই মধ্যে তালেবান উন্নয়নের কথা বলতে শিখেছে। আফগানিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনো অতলগভীরে রয়েছে। ডিসেম্বরে বন্দুকধারীরা কাবুলের একটি হোটেলে মারাত্মক হামলা চালায়, যেখানে চীনা ব্যবসায়ীরা জড়ো হয়েছিল। ফলে আফগানিস্তান নিয়ে যে আশায় বুক বেঁধেছিল চীন তা অধরা রয়েছে গেছে।
এমএসএম/জিকেএস