একুশে বইমেলা

বই প্রকাশ কি কমে যাবে?

আজ জানুয়ারির আট তারিখ। আর মাত্র ২২ দিন বাকি। অমর একুশে বইমেলা শুরু হবে ১ ফেব্রুয়ারি। বিগত বছরগুলোয় এই সময় জমজমাট থাকতো প্রেস ও বাঁধাইখানা। ব্যস্ত থাকতেন প্রকাশকরা। লেখকরা নতুন বইয়ের প্রচ্ছদ নিয়ে হাজির হতেন সোস্যাল মিডিয়ায়। এবার কি একটু কম চোখে পড়ছে? নাকি আমার লিস্টে লেখকের সংখ্যা কমে গেছে?

Advertisement

শোনা যাচ্ছে, কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ায়, প্রকাশনার অন্যান্য ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এবার বই প্রকাশ নাকি কম হচ্ছে। বইমেলার স্টলের আবেদনও নাকি কমেছে। অনেক প্রকাশনী নতুন বই প্রকাশ করছে না। অনেক প্রকাশনী বইমেলায় স্টলের আবেদনও করেনি। তাহলে কি জমবে এবারের বইমেলা?

পাঠকের হিসাবটা একটু ভিন্ন। তারা বরাবরের মতোই বইমেলায় যাবেন। মন চাইলে বই কিনবেন, না চাইলে কিনবেন না। একটু চালাক পাঠক হলে দাম বাড়ার আগে প্রকাশিত বইগুলো আগের দামে কিনতে পারবেন। কিছু বই তো বেচাবিক্রি হবেই। তবে নতুন বইয়ের দাম অনুযায়ী বিক্রি কম হওয়াই স্বাভাবিক।

একটু হিসাব করে দেখলাম, আগের চার ফর্মার বই বড়জোর ১৫০ টাকা ছিল। এখন সেই চার ফর্মার বই তিনশ টাকায় কিনতে হবে। তাই খুব বেশি প্রয়োজন না হলে দ্বিগুণ দামে বই কিনবেন কারা? সৌখিন পাঠকরা এবার বিপাকে পড়বেন। বিত্তশালীরা চাইলে শখের বসে কিনতেও পারেন।

Advertisement

আশঙ্কার কথা হলো, কাগজের দাম ও অন্যান্য খরচ যদি না কমে, তাহলে ভবিষ্যতে কি প্রকাশনা শিল্প টিকে থাকতে পারবে? মানুষ কি এত টাকা দিয়ে বই কিনবে? মুদ্রণশিল্পের অনেক কিছু এখন স্মৃতি হয়ে যাচ্ছে। ঈদ কার্ড, বিয়ের কার্ড, ক্যালেন্ডার এবং ভিউ কার্ডের যুগ যেন বিদায় নিয়েছে। সেই সঙ্গে কি প্রিন্টেড বইও বিদায় নেবে?

পরিবর্তন অবশ্যই জরুরি। সেই পরিবর্তনের পাল্লায় পড়ে অনেক ঐতিহ্যও বিলীন হয়ে যায়। নতুন বইয়ের ঘ্রাণের যে মাদকতা পাঠককে মোহিত করতো, ভবিষ্যতেও কি তা করতে পারবে? নাকি খরচ বাঁচাতে সবাই ই-বুকের দিকে ঝুঁকবেন? ইতোমধ্যে ই-বুক কনটেন্ট নিয়ে কাজ করছে কিছু প্রতিষ্ঠান।

প্রথমে হয়তো এমন পরিবর্তন মেনে নিতে কষ্ট হয়। পরে অবশ্য আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে যায়। এক সময় প্রিন্টেড প্রত্রিকার খুব কদর ছিল। অনলাইন গণমাধ্যম আসার পর সেগুলোর কদর যেন কমেছে। একইভাবে ছোটকাগজগুলো এখন ওয়েবম্যাগ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে।

ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করলে হয়তো একদিন বইমেলাই আর হবে না। বইমেলা হবে ভার্চুয়ালি। সেখানে সবাই কনটেন্ট বিক্রি করবে। পাঠকরা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কনটেন্ট কিনবেন। ঘরে বসেই ঘুরে আসবেন ডিজিটাল বইমেলা থেকে। লেখক-পাঠকের কথা হবে ভার্চুয়ালি। সেদিন আর হয়তো বেশি দূরে নয়।

Advertisement

তবুও আশা রাখি, অমর একুশে বইমেলা জমে উঠুক। নতুন নতুন বই প্রকাশ হোক। প্রকাশক-আয়োজকদের মুখে হাসি ফুটুক। লেখক-পাঠকের সম্পর্কটা আরও গভীর হোক। আগামী বিশ দিনে আরও নতুন বইয়ের খবর আসুক। প্রকাশক-লেখক-পাঠকে মুখর হয়ে উঠুক বইমেলা প্রাঙ্গণ।

এসইউ/জিকেএস