প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সরকার এখনো দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচির কলেবর বাড়িয়েছে। অতি উচ্চমূল্যে বিদেশ থেকে কিনতে হলেও ভর্তুকি দিয়ে নিত্যপণ্য মানুষের মাঝে সরবরাহ করছে।’
Advertisement
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামরির পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আরও ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়েছে। আজকে উন্নত দেশও হিমশিম খাচ্ছে। নিজেদের তারা অর্থনৈতিক মন্দার দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশ এখনো সেই পর্যায়ে যায়নি।
শনিবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম যৌথসভায় সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভার কার্যক্রম শুরুর আগে শোকপ্রস্তাব গৃহীত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, মাত্র ১৫ টাকায় চাল ক্রয়, মধ্যবিত্তের জন্য টিসিবির বিশেষ কার্ডের মাধ্যমে চাল কেনার সুবিধা, ভিজিডি-ভিজিএফের মাধ্যমে একেবারে হতদরিদ্রদের খাদ্য সাহায্য দেওয়া, বয়স্ক ভাতা, বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্ততা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতাসহ নানা ধরনের ভাতা বর্ধিত হারে দেওয়া হচ্ছে। যাতে মানুষের কোনো কষ্ট না হয়।
Advertisement
দেশের সব অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, অনেক দেশে আজকে খাদ্যের জন্য হাহাকার। কিন্তু আমরা এ মাটিকে যথাযথ ব্যবহার করতে পারলে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অন্যকেও সাহায্য করতে পারবো।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের এ দেশের মানুষকে যেমনি স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, তেমনি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নও করেছে। মাত্র ১৪ বছরে বাংলাদেশ আজকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছে। এ জাতিকে একটি আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন জাতি হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে চাচ্ছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরাই গড়ে তুলেছি। সেইসঙ্গে আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নিয়েছি। আমরা যেমন হাইটেক পার্ক করছি, স্কুলগুলোতে কম্পিউটার ল্যাব করছি, প্রযুক্তি শিক্ষা এবং বহুমুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যা করণীয় সেটা আওয়ামী লীগ যতদিন সরকারে আছে, মানুষের কষ্ট দূর করার জন্য যা যা করণীয় তা করে যাবে। সেটা আমরা করে যাচ্ছি। গত তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনা করতে এসে প্রতি নির্বাচনেই আওয়ামী লীঘ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। মানুষের সেবা করার সুযোগ পেয়েছে। আর সেজন্য আজকে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধে চেতনায় এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছে।
ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেওয়ার সাফল্যের কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘প্রতিটি ঘরে আলো জ্বেলে প্রতি ঘরকে আমরা আলোকিত করেছি। পাশাপাশি সাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ থেকে ৭৫ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত করেছি। মানুষের আয়ুস্কাল ৬৪ থেকে ৭৩ বছরে উন্নীত, খাদ্যের সঙ্গে পুষ্টি নিরাপত্তাও নিশ্চিত, মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত করা হয়েছে। দেশের ১৮ হাজার ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়াসহ চিকিৎসা সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি।’
Advertisement
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তরুণ প্রজন্ম যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে সেজন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বিনা জমানতে ঋণ প্রদান, বর্গাচাষীদের বিনা জমানতে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। কৃষকদের জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে ভতুর্কির টাকা সরাসরি পাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রায় দুই কোটি কৃষককে কৃষি উপকরণ ক্রয় করার জন্য কার্ড দেওয়া হয়েছে। আড়াই কোটি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি-উপবৃত্তি দিয়ে সহযোগিতা করছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ, শীতে কম্বল ও গরম কাপড় বিতরণ করার মাধ্যমে সরকারের যতটুকু সাধ্য তা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। বিত্তবানদেরও জনগণের দুঃখ-কষ্টে তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছে।
এসইউজে/এএএইচ/জেআইএম