হাওর-বাঁওড়ের জেলা সুনামগঞ্জ। ধান ও মাছচাষের ওপর নির্ভর করে এখানকার মানুষের জীবন-জীবিকা। তবে হাওর-বাঁওড়সহ অসংখ্য খাল-বিল, জলাশয় থাকায় হাঁস পালনের জন্য ‘সম্ভাবনাময় স্থান’ বলা যায় সুনামগঞ্জ। এখানকার বেকার যুবকরা মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে হাঁস পালনে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। তবে প্রশিক্ষণ ছাড়াই এ পেশায় নামায় মারা যায় অসংখ্য হাঁস। ফলে ভাগ্যগুণে কেউ কেউ সফল হলেও অনেকেই ঋণের বোঝা বয়ে বেড়ান। স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্নটা যেন পানিতে ভাসে।
Advertisement
স্থানীয় হাঁসের খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জলাশয়ে ঘুরে ঘুরে খেলে হাঁসের খাবার কম লাগে। তবে জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত হাঁসের বিচরণ ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে পড়ে। এসময় হাওরের জমিতে ফসল উৎপাদন করায় হাঁস চড়ে খেতে পারে না। এসময় হাঁস প্রাকৃতিক খাদ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে ডিম পাড়া বন্ধ করে দেয়। তবে এপ্রিল থেকে পুরো নভেম্বর মাস পর্যন্ত হাঁসের খাবার সংকট থাকে না। তাই এসময় প্রচুর ডিম দেয়।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলায় সবচেয়ে বেশি হাঁসের খামার রয়েছে ধর্মপাশায়, ৩৫৮টি। এছাড়া ছাতকে ৩২৩, শান্তিগঞ্জে ৩১৫, সদর উপজেলায় ২৯৫, দিরাইয়ে ২৯৫, বিশ্বম্ভরপুরে ২৮১, তাহিরপুরে ১৫৫, দোয়ারাবাজারে ২৩৫, জামালগঞ্জে ২৮০, শাল্লায় ১৫৮ ও জগন্নাথপুরে ১৭৫টিসহ মোট দুই হাজার ৮৭০টি হাঁসের খামার রয়েছে।
এসব খামারে ও গৃহস্থ পরিবারে ২৭ লাখ ৩০ হাজার ৪৪২টি হাঁস রয়েছে। সারা বছরে জেলায় হাঁসের ডিম উৎপাদন হয় ২৭ কোটি ৫৫ লাখ ১১ হাজার ১৮৬টি। জেলায় ডিমের চাহিদা রয়েছে ২৫ কোটি ৬৬ লাখ ৬৯ হাজার ৭১২টি। উদ্বৃত্ত থাকে এক কোটি ৮৮ লাখ ৪৭৪ হাজারেরও বেশি ডিম।
Advertisement
খামারিরা জানান, হাঁস পালনে লাভ বেশি। সরকারিভাবে হাওরাঞ্চলে বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া গেলে তাদের ভাগ্য বদলে দেওয়া সম্ভব হবে। হাঁস পালন করায় দেশের সবচেয়ে বেশি হাঁসের ডিম উৎপাদন হয় হাওরবেষ্টিত জেলা সুনামগঞ্জে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার হাঁসের খামারি মনির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে যদি আমাদের ঠিকমতো সহযোগিতা করা হয় এবং হাঁসের সুষম খাবার পাওয়া যায় তাহলে ১২ মাসের মধ্যে টানা ১০ মাস হাঁস থেকে ডিম পাওয়া যেত।
তাহিরপুর উপজেলার খামারি সুজন মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন বেকার ছিলাম। কোনো কাজ পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ মাথায় চিন্তা এলো হাঁসের খামার করার। তাই ভাবলাম বেকার থাকার চেয়ে হাঁসের খামার করি। খামার করে মোটামুটি স্বাবলম্বী আমি।’
তবে হাঁস পালন করে অনেকে বিপাকেও পড়েছেন। একই উপজেলার খামারি রেজুয়ান মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন নিয়ে মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে হাঁস পালন শুরু করেছিলাম। কিন্তু সেই স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে গেলো। প্রশিক্ষণ ছাড়া হাঁস পালন করতে গিয়ে অনেক হাঁস মারা গেছে। এখন আমি দেউলিয়া হয়ে গেছি। ঋণের টাকা কীভাবে পরিশোধ করব সেই চিন্তায় আছি।’
Advertisement
ধর্মপাশা উপজেলার বাসিন্দা রেনু মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, হাঁস পালন করতে গিয়ে পথে বসে গেছি। অনেক হাঁস মারা গেছে। আবার যেগুলো আছে সেগুলোও বিক্রি করতে পারছি না। খুব হতাশার মধ্যে আছি।’
জামালগঞ্জ উপজেলার খামারি রিন্টু মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ছোট ছোট জলমহালগুলো হাঁস পালনের জন্য উন্মুক্ত করে দিলে ডিমের উৎপাদন আরও বেড়ে যেতো। সরকাররিভাবে আমাদের প্রশিক্ষণ ও ঋণ দিলে লাভবান হতে পারতাম।
জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, সুনামগঞ্জে হাঁস পালনের ভালো সুযোগ রয়েছে। খামারিদের সর্বাত্মক পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ অন্যান্য কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।
এসআর/এমএস