বিশ্বকাপ শুরুর এক সপ্তাহ আগে হঠাৎ মনে হলো আমি কেমন আর্জেন্টাইন ফ্যান যে, আমার কাছে একটি জার্সিও নেই। কারণ আমার সাইজের জার্সি পাবো না তাই!
Advertisement
জার্সি থাকতে বলতে শুধুমাত্র ফেসবুকের একটা ছবি। যেখানে ফটোশপ করে পেছনে নিজের নাম লিখেছি। কিন্তু আমার জার্সি না থাকার কারণেই কি আর্জেন্টিনার কাপ অধরা থেকে যাচ্ছে?
জানি, হয়তো আমার মনের কুসংস্কার। কিন্তু আমি সেই জন, যে কি না বাংলাদেশের খেলা দেখার সময় আমার বড়বোনকে রুমের বাইরে রাখতাম। কারণ ও ঢুকলেই উইকেট পড়ত!
জার্সির কথায় আসি, অতঃপর কট্টর ব্রাজিল সমর্থক বন্ধুকে বললাম—ভাই গুলিস্থান যামু। ওকে চলো!শুক্রবার যামু।ওকে যামু!একেবারে বিকাল নয়তো সকালে যামু।ওকে যামু!একটা আর্জেন্টিনার জার্সি কিনমু! আমার মনে হয়, আমি জার্সি কিনলে আর্জেন্টিনা এইবার বিশ্বকাপ জিতবো!ইয়ে মানে, হঠাৎ একটা কাজের কথা মনে পড়ে গেলো। সরি, আমি পাড়বো না যেতে!
Advertisement
আমি সিদ্ধান্তে অনঢ়! এবার একটি জার্সি কিনবোই কিনবো! তাই ১১ নভেম্বর গুলিস্থানে চলে গেলাম সকাল সকাল। কিন্তু কোথাও খুঁজেও আমি একটি থ্রিএক্সএল সাইজের জার্সি তো দূরের কথা ডবলএক্সএল জার্সি খুঁজে পাইনি।
দোকানিকে জিজ্ঞেস করতেই বলেন, এইবার আর্জেন্টিনার জার্সি বিক্রি সবচেয়ে বেশি। এক্সএল সাইজের নিলে নেন। নইলে দুইদিন পর তা-ও পাবেন না।
তাই এক্সএল সাইজের জার্সি কিনে বাসায় ফিরে যখন আমার থ্রিএক্সএল শরীরের ওপর ট্রাই করলাম, তখন মনে হলো জার্সিটির প্রতিটি সুতা কেঁদে উঠল। এইদিকে আমার কিউট ভুড়িও নিজের অপার স্বাধীনতার জন্য বিদ্রোহী হয়ে উঠল। তা দেখে আমার স্ত্রী বলে দিলো, ‘এই জার্সি পরে তুমি রুম থেকে বের হবা না।’ আমি অবস্থা দেখে সায় দিলাম কিন্তু মনের ফাঁকে উঁকি দিলো, যদি জার্সি না পরি আর যদি আমরা হেরে যাই, তাহলে?
আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচ চারটা থেকে শুরু কিন্তু অফিস থেকে ফিরতে দেরি হওয়ায় অফিসের কাপড় পরেই খেলা দেখতে বসে পড়লাম। ম্যাচের ফলাফল শেষে রাগে-দুঃখে যখন কাপড় বদলাতে আলমারি খুলি, তখন সেই জার্সি আবারও চোখে পড়ল। আমার শঙ্কা সত্যি হলো।
Advertisement
নাহ! তোরা যে যাই হাসিস ভাই, আর্জেন্টিনার জয়ের জন্য আমাকে এই আত্মত্যাগ করতেই হবে! এরপর থেকে এক মাস, যখন আর্জেন্টিনার ম্যাচ; তখন এই জার্সি পরে টিভির সামনে হাজির হয়েছি। ঘরের মানুষের হাসির খোরাক হয়েছি। প্রত্যেকবার এ জার্সি পরার সময় মনে হয়েছে, জার্সির প্রতিটি সুতা আমায় বলতে চেয়েছে, ‘জমিদার সাহেব! আল্লাহর দোহাই লাগে! এইবার আমাকে ছেড়ে দিন!’
গত এক মাস আমি ঘামের অসহ্য গন্ধওয়ালা জার্সিটি ঈদের নতুন জামার মতো পরেছি আর জয়ী হয়ে ফিরেছি। ধুইনি! যদি গুড লাক চলে যায়। গতকাল রাতে জার্সি পরার সময় মনে হলো, আমার ভুড়ির বিদ্রোহের ঠেলায় আমার এক্সএল সাইজের জার্সি ডবলএক্সএল হয়ে গেছে।
আজকে বাসায় ফিরে সার্ফ এক্সেল দিয়ে ধুয়ে জার্সিটি আবার তুলে রাখবো। হয়তো আর কোনোদিন পরা হবে না। কারণ জার্সিতে মাত্র দুটা স্টার। কিন্তু আমরা এখন থার্ড টাইম ওয়ার্ল্ড কাপ চ্যাম্পিয়ন।
এসইউ/এমএস