‘এটা হাসপাতাল না কমিউনিটি সেন্টার? যেখানে নেই কোনো ডাক্তার, নেই রোগী ভর্তির কার্যক্রম। দুপুর একটা বাজতেই হাসপাতালের গেটগুলোতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় তালা। মুমূর্ষু ও জরুরি সেবাতো দূরের কথা, স্বাভাবিক সেবাও নেই প্রতিষ্ঠানটিতে।’
Advertisement
গেলো মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে হাসপাতালটিতে সেবা না পেয়ে অসুস্থ বোনকে অন্যত্র নেওয়ার সময় এমনিভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পোশাকশ্রমিক রাশিদা বেগম।
তার অভিযোগ, ডাক্তার নেই, আর রোগী ভর্তির কোনো সুযোগ না থাকার কথা বলে হাসপাতালের লোকজন তাদের চলে যেতে বলেন। একপর্যায়ে তাদের বাধ্য করেন চলে যেতে।
রাশিদার কথার সত্যতা জানতে বুধবার (৪ জানুয়ারি) জাগো নিউজের প্রতিনিধি সাভারের আমিনবাজার ২০ শয্যা হাসপাতালে যান।
Advertisement
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ঘেঁষা আমিনবাজারে তিনটি আবাসিক ভবনসহ ২০ শয্যার হাসপাতালটি। লাল রঙ দিয়ে ভবনের উঁচুতে লেখা রয়েছে নামফলক। ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা গেলো, বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ বসে আছেন সেবা নিতে। পুরো হাসপাতাল জুড়ে সেবা দিচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। তাও আবার সব ধরনের চিকিৎসা। সময়ের ব্যবধানে হাসপাতালটিতে চাপ কিছুটা বেড়ে যায়। তবে কোনো রোগীকে ভর্তি করা হচ্ছে না।
ভবনটির দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা গেলো, শয্যা ফেলা ওয়ার্ডগুলো তালাবদ্ধ। পুরো ওয়ার্ডজুড়ে ধুলা-ময়লা জমে আছে। হাসপাতাল ল্যাবটিরও একই অবস্থা। দেখে মনেই হচ্ছে ব্যবহার হচ্ছে না অনেকদিন ধরে।
মহিদুল নামে এক রোগী বলেন, ভবন বানিয়ে যে টাকা খরচ হয়েছে তার লাভ কী? ১০ বছরের বেশি সময় হলেও এখনো ন্যূনতম সেবা মিলছে না। কলেরা-জ্বর হলে যদি ২/১ দিন থাকার প্রয়োজন হয় সে ব্যবস্থাও নেই। নামে ২০ শয্যা অথচ একটি শয্যাও রোগী রাখে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের ভেতরেই কথা হয় আক্কাস আলী নামে আরেক রোগীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে শুধু ডাক্তার দেখানো যায়। তাও সপ্তাহে দুই/তিনদিন। আশপাশের এলাকার সবাই বিষয়টা জানেন। বেশিরভাগ মানুষই অন্যত্র যায়। খুব সামান্য অসুস্থ হন যারা তারাই শুধু আসেন।
Advertisement
ওষুধ দেওয়া হয় কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্যারাসিটামল আর ওরস্যালাইন। মাঝে মাঝে অন্যসব ওষুধও দুই/চারটি মেলে।
কথা বলতে বলতে হঠাৎ শোনা গেলো, এক নার্স বলছেন- সময় শেষ, বের হন। একটা বাজে। কিছু মুহূর্তের মধ্যে সবাই বের হলেন হাসপাতাল থেকে। এর কিছু পরই হাসপাতালের প্রধান ফটকে ঝুলিয়ে দেওয়া হলো তালা।
হাসপাতালটির এমন হালের কারণ জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসে যান জাগো নিউজের প্রতিনিধি। অফিস সূত্রে জানা গেছে, আমিনবাজার ২০ শয্যার হাসপাতালের নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১০ সালে। ওই বছরের জানুয়ারি মাসে তা হস্তান্তর করা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে। এরপর ১৬টি নিয়মিত পদসহ ২৫টি পদ সৃষ্টি করে হাসপাতালে পদের অনুকূলে জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়।
এর মধ্যে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা পদে একজন, কনিষ্ঠ বিশেষজ্ঞ পদে চারজন, সহকারী সার্জন পদে একজন, জ্যৈষ্ঠ সেবিকা পদে ছয়জন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদে একজন ও ফার্মাসিস্ট পদে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। হাসপাতাল চালু না হওয়ায় এসব পদে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা প্রেষণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত আছেন।
শূন্য রয়েছে অফিস সহকারী ও ল্যাব অ্যাটেনডেন্টসহ অনিয়মিত পদে ওয়ার্ড বয়, আয়া, এমএলএসএস, নিরাপত্তাকর্মী ও সুইপারের ১১টি পদ। তবে হাসপাতাল দেখভালের জন্য দুজন এমএলএসএসকে প্রেষণে এই হাসপাতালে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সায়েমুল হুদা বলেন, জনবল না থাকায় হাসপাতালটি পুরোদমে চালু করা যাচ্ছে না। এটি চালু করতে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।
মাহফুজুর রহমান নিপু/এমআরআর/এএসএম