জাতীয়

‘পাহাড়িদের সঙ্গে ইসলামিক জঙ্গিদের যোগাযোগ থাকার কথা নয়’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। নিরাপত্তা বিশ্লেষক। বুদ্ধিজীবী, লেখক ও বাংলাদেশের সাবেক নির্বাচন কমিশনার। বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখছেন।

Advertisement

পাহাড়ে জঙ্গি আর কুকি চিন গোষ্ঠীর তৎপরতা প্রসঙ্গে মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। জঙ্গিরা বাংলাদেশের জন্য আপাতত কোনো হুমকি নয় বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু জাগো নিউজ: পাহাড় অস্থির জঙ্গি আনাগোনায়। অন্তত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাম্প্রতিক অভিযান ও ব্রিফিংয়ে সে খবরই মিলছে। এর বাস্তবতা নিয়ে কী বলবেন?

ব্রি. জে (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন: সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামে জঙ্গি আস্তানা বা অভিযানের যে সব খবর মিলছে, তা নিয়ে মিশ্র ধারণা আছে। সহজ করে ব্যাখ্যার কোনো উপায় নেই। পথভ্রষ্ট একটি ইসলামিক উগ্রবাদী গোষ্ঠী সেখানে ঘাঁটি করে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বলে বলা হচ্ছে, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাষায় হিজরত বলা হচ্ছে।

Advertisement

তবে পাহাড়ে অন্য যারা এই জঙ্গিদের সঙ্গে মিলে প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছে বলে বলা হচ্ছে, তাদের অনেকেই এথিস্ট এবং বৌদ্ধ ধর্মের। তারা সংখ্যালঘুর মধ্যে সংখ্যালঘু। পাহাড়িদের সঙ্গে ইসলামিক জঙ্গিদের যোগাযোগ থাকার কথা নয়। বৌদ্ধ বা এথিস্টদের সঙ্গে ইসলামি জঙ্গিরা একসঙ্গে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে কীভাবে, তা বুঝে আসছে না। তারা তো ধর্মই মানে না। স্বাভাবিক ধারণায় এটি বোধগম্য হয় না।

জাগো নিউজ: জঙ্গিবাদের ধারণা থেকে এই প্রশ্ন অনেকেই করছেন…

ব্রি. জে (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন: আসলে পাহাড়ের এই ঘটনা পাবলিকলি ব্যাখ্যা করা হয়নি এখনো। যতক্ষণ পর্যন্ত এর সঠিক ব্যাখ্যা না মিলবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ঘোলাটেই থেকে যাবে।

পাহাড়িদের সঙ্গেই প্রশিক্ষণ হচ্ছে নাকি অন্য কোনো জায়গায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছে সেটাও পরিষ্কার নয়। এ কারণেই আমার পক্ষে এ বিষয়ে আপাতত বিশ্লেষণ করা খুব কঠিন মনে করছি। এই জঙ্গিরা কতটুকু ভয়ঙ্কর বা তাদের শক্তির প্রকাশ কতটুকু ঘটাতে পারবে, তাও জানা যায়নি। আর জঙ্গলে সংঘটিত হয়ে কিই-বা করতে পারবে?

Advertisement

জঙ্গি নিয়ে এত সিরিয়াস হওয়ার কিছু হয়েছে বলেও আমি মনে করি না। হলি আর্টিসানের ঘটনা ছাড়া আর কোনো অ্যাকশন মনে রাখার মতো নয়। আর আমরা আগে থেকেই এ বিষয় নিয়ে কথা বলে আসছিলাম। তখন থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হলে হলি আর্টিসানের ঘটনাও হয়তো ঠেকানো যেত।

পাহাড়ের যে পরিবেশ সেখানে জঙ্গি আস্তানা গড়ে তোলাও বেশ কঠিন। চাইলেই জঙ্গিরা বড় কিছু করে ফেলবে, তা নয়। সেখানে মুসলমান জনগণও নেই বললে চলে। তাহলে কারা এই জঙ্গিদের সমর্থন করবে?

জাগো নিউজ: কিন্তু সরকার বা প্রশাসন যেভাবে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে, সেখান থেকে ভয়ের কারণ আছে কি না?

ব্রি. জে (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন: পুলিশ বা সরকারের ব্যাখ্যা আমি দিতে পারবো না। আমি আমার কথা বলছি। পুলিশ বা র‌্যাবের কাছে আরও তথ্য থাকতে পারে। কিন্তু আমি এসব ঘটনায় খুব একটা আতঙ্কিত নই। জনসাধারণও আমার মতো করে ভাবছে বলে মনে করি।

জাগো নিউজ: নির্বাচন বা রাজনীতি ঘিরেও এমন ঘটনা…

ব্রি. জে (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন: আমার এ ব্যাপারে বিশ্লেষণ নেই। এসব বিষয় অনুমান করে বলাও ঠিক নয়।

জাগো নিউজ: পাহাড়ে যারা সক্রিয়, তাদের নিয়ে এখন কী ধারণা পোষণ করছেন?

ব্রি. জে (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন: পাহাড়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলো এখনো সক্রিয়। চাঁদা বা লুটপাট নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে হানাহানি করছে। এলাকার নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে এমনটা হয়। কিন্তু এই গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে জঙ্গিরা যোগাযোগ করছে তার প্রমাণ নেই। স্থানীয়রাও অস্বীকার করছে।

তবে পাহাড়ে শান্তিবিরোধীরা বসে নেই। তারা নিজেরাই পাহাড় অস্থির করে তুলতে পারে। আর অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়লে তাদের সক্রিয়তাও বাড়বে। এটি স্বাভাবিক। সেনাবাহিনীর সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গেও ঝামেলা হয়।

জাগো নিউজ: আপনি চাঁদাবাজিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এর বাইরে কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে কি না?

ব্রি. জে (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন: আমার কাছে আর কোনো গুরুত্ব পাচ্ছে না এখন। অনেক কথাই শোনা যায়, কিন্তু তার ভিত্তি থাকে না। পার্বত্য অঞ্চলকে আলাদা করে ফেলা হবে, আরেকটি রাষ্ট্র গঠন করা হবে- এই কথাগুলো অনেক আগে থেকেই শুনে আসছি। কিন্তু বাস্তবতা অনেক দূরে।

জাগো নিউজ: শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে সন্তু লারমারা ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন?

ব্রি. জে (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন: সন্তু লারমা এমন ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন ২৫ বছর আগে থেকেই। সরকার এবং পাহাড়িরা উভয় উভয়কে দুষছে। বাস্তবতা হলো পাহাড়ে এক ধরনের শান্তি তো আসছে।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশের সার্বিক নিরাপত্তার প্রশ্নে কী মত দেবেন?

ব্রি. জে (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন: কোনো গোষ্ঠীর কারণে বাংলাদেশের নিরাপত্তার কোনো হুমকি আমি দেখছি না। জঙ্গি নয়, রাজনীতিই নিরাপত্তার বড় হুমকি। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব না থাকলে বাংলাদেশ ভালো থাকবে, মানুষ ভালো থাকবে।

আপনি মানুষকে কথা বলার জায়গা দিন। তারাই সব ঠিক করে নেবে। রংপুরে হাতপাখা ৫০ হাজার ভোট পেলো। এটি মিরাকেল না। এটি বাস্তবতা। আপনি সব পথ বন্ধ করে দেবেন, মানুষ ভিন্ন পথে হাঁটার চেষ্টা করবে। ভালো-মন্দ পথ তৈরি করে সমাজ-রাজনীতিই।

এএসএস/এএসএ/এএসএম