ডা. আনোয়ার পারভেজ নিহন ৪০তম বিসিএসে প্রাণিসম্পদ ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার শৈশব ও বেড়ে ওঠা ঢাকার বাংলাদেশ রাইফেলস (বর্তমান বিজিবি) আবাসিক এলাকায়। তিনি ঈশ্বরগঞ্জ বিশ্বেশ্বরী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ ময়মনসিংহ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিভিএম (ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন) এবং এমএস (প্যাথলজি) ডিগ্রি অর্জন করেন।
Advertisement
বর্তমানে তিনি ‘ভেটেরিনারি সার্জন’ হিসেবে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও নেত্রকোনার ভেটেরিনারি হাসপাতাল কমলকান্দায় কর্মরত। সম্প্রতি তার বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া, সফলতার গল্প ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—
জাগো নিউজ: ৪০তম বিসিএসে ক্যাডার পেয়েছেন, আপনার অনুভূতি কেমন?ডা. আনোয়ার পারভেজ নিহন: অনুভূতি ছিল অসাধারণ। স্বপ্নের বাস্তব প্রতিফলন, যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। বিসিএস ছিল প্রথম প্রেম, আবেগ। আমার ছোটভাই যখন রেজাল্ট জানালো, এরপর রেজাল্ট শিটে নিজের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার দেখে আনন্দে চোখে জল চলে এলো। রেজাল্টের দিন আমি অফিসে কাজ করছিলাম। কিন্তু মনে প্রচণ্ড অস্থিরতা কাজ করছিল। তখনই আমার ছোটভাই ফোন করে রেজাল্ট জানায়।
জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?ডা. আনোয়ার পারভেজ নিহন: বিসিএস ক্যাডার হবো এ স্বপ্নটা দেখা শুরু করি ইন্টার্ন করার সময়। তবে অনার্স শেষ করে ও মাস্টার্স ভর্তি হয়েই প্রস্তুতি পুরোদমে শুরু করে দিই। বাবার স্বপ্ন ছিল বিসিএস ক্যাডার হওয়ার। পরে তা আমার স্বপ্ন হয়ে যায়।
Advertisement
জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, পাশাপাশি প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?ডা. আনোয়ার পারভেজ নিহন: আমার বড়ভাই যখন বিসিএস বা সরকারি চাকরির জন্য কারেন্ট আফেয়ার্স বা জব সল্যুশন পড়তেন। তখন কেন জানি কারেন্ট আফেয়ার্স থেকে সাধারণ জ্ঞান পড়ার একটা আকর্ষণ তৈরি হয়। মেন্টাল অ্যাবিলিটি সলভ করতাম। পরে যখন বিসিএসের জন্য প্রিপারেশন নিই, তখন সব সাবজেক্টের এক সেট বই কিনে ফেলি। সাথে রাখি বোর্ড বই ও জব সল্যুশন। প্রথমেই বিগত বিসিএস প্রশ্নগুলো অ্যানালাইসিস করে চেষ্টা করি কোন টপিকগুলো বেশি বা কম পড়তে হবে। পাশাপাশি একটি রিটেন জব সল্যুশন কিনে ফেলি, তখন টপিকগুলো রিটেনের সাথে মিলিয়ে পড়তাম। নোট খাতা করেছিলাম যেন গুরুত্বপূর্ণগুলো রিভাইস দেওয়া যায়। পাশাপাশি টিউশনি ও নিয়মিত অল্প সময় করে ম্যাথ প্র্যাকটিস করতাম।
জাগো নিউজ: পর্দার আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে?ডা. আনোয়ার পারভেজ নিহন: আমার বিসিএস জার্নিটা ৩৬তম বিসিএস দিয়ে শুরু হলেও পরিপূর্ণতা পায় ৪০তম বিসিএসে। আমি প্রাইমারি হেড মাস্টার রিকমেন্ডেট হই। কিন্তু জয়েন না করে প্রাইভেট জবে থেকে পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাই। বিশ্বাস ছিল বিসিএস হবে, শুধু ধৈর্য ও সঠিক সময়ের অপেক্ষা। পুরোটা সময় আমার পরিবার মেন্টালি সাপোর্ট দিয়েছে, বিশেষ করে মা, মেজোভাই, বোন। আমার এএসপি বন্ধু রাসেল, ওর কথা না বললেই নয়। আমার বিশ্বাস ছিল পরিশ্রম, ধৈর্য ও রিজিকে থাকলে ক্যাডার হবোই।
জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএস প্রিলির জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?ডা. আনোয়ার পারভেজ নিহন: প্রিলির জন্য আসলে প্রথমে প্রয়োজন প্রশ্ন অ্যানালাইসিস করে ভাইটাল টপিকগুলো সিলেক্ট করা। তারপর সে অনুযায়ী নোট করা। নিয়মিত ম্যাথ, ইংলিশ চর্চা করা। নিজের দুর্বলতা মার্ক করে তা ডেভেলপড করা। জব সল্যুশন বা প্রশ্ন ব্যাংক থেকে প্র্যাকটিস করা। প্রয়োজনে কোনো কোচিংয়ে পরীক্ষা দেওয়া, এতে কনফিডেন্স বাড়বে।
জাগো নিউজ: প্রিলির পর লিখিত প্রস্তুতি নিয়ে আপনার পরামর্শ কী?ডা. আনোয়ার পারভেজ নিহন: বিসিএস প্রিলির পর উচিত দ্রুত রিটেন সিলেবাস দেখে বিগত রিটেনের প্রশ্ন অ্যানালাইসিস করে সাবজেক্ট ভিত্তিক মূল পয়েন্ট মার্ক করে আলাদা খাতা তৈরি করে ফেলা। এক্ষেত্রে বোর্ড বই, ইন্টারনেট থেকে তথ্য আপডেট করা। লিখিত ক্ষেত্রে রেফারেন্স, ডাটা দিতে পারলে ভালো। প্রয়োজনে কোচিং এক্সাম ব্যাচে ভর্তি হয়ে পরীক্ষা দেওয়া। বিশদ না লিখে স্মার্টলি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হাইলাইট করা। বাংলাদেশে ও আন্তজার্তিক বিষয়াবলির জন্য টাইম ম্যানেজমেন্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ম্যাথ, ইংরেজি নিয়মিত প্র্যাকটিস করা। হাতের লেখা সুন্দর না হোক কিন্তু যেন বোঝা যায়।
Advertisement
জাগো নিউজ: বিসিএস ভাইবার প্রস্তুতি কেমন হতে হয়?ডা. আনোয়ার পারভেজ নিহন: বিসিএস ভাইভা একটা ভাইটাল পার্ট। সেজন্য প্রথমেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো নোট খাতায় গুছিয়ে নেওয়া, সাম্প্রতিক তথ্য আপডেট থাকা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিজে আয়নার সামনে বা কারো সাথে প্র্যাকটিস করে জড়তা দূর করা, আত্মবিশ্বাস বাড়ানো। তা ছাড়া কিছু বিষয় যেমন- মুক্তিযুদ্ধ, নিজ জেলা, নিজ সাবজেক্ট সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখা।
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?ডা. আনোয়ার পারভেজ নিহন: কর্মের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই। স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে অবদান রাখতে চাই। প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে ও জনগণের সেবায় কাজ করে যেতে চাই। এটি এমন সেক্টর, যেখানে প্রাণি ও মানুষকে সেবা করার সুযোগ পাই। খামারির মুখে স্বস্তির হাসি দেখলে ভালো লাগে। তাদের জন্য কাজ করে যেতে চাই। এগ্রো সেক্টরের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চাই।
এসইউ/জিকেএস