সাহিত্য

জান্নাতুল নাঈমের পাঁচটি কবিতা

এখন

Advertisement

এই যে আমার আমিটাকে নিয়ে তোমাদের যত কথাএকদিন আমিও হাসিমাখা ফুল ছিলামএকদিন আমিও শরতের নীল আকাশ ছিলামজীবনজুড়ে দখিনা সমীরণে সুখ বইতে থাকতোএকদিন আমিও ঘর, সংসার, ছোট্ট ছোট্ট হাতে হাত রেখে সমুদ্রজলে পা ভেজানোর স্বপ্নে মত্ত ছিলামতারপর আমি হলাম দুঃখভরা নদীএখন আমাতে কেবলই স্রোত।

এই যে আমিটাকে নিয়ে তোমাদের কথোপকথন একদিন আমি নির্মল হাওয়া ছিলামআমিও তারাভরা রাতের জোছনা ছিলামভেজা ভেজা বেলিফুলের মতো শুভ্র হাসি হয়ে ছিলামশিমুল তুলার মতো স্বপ্ন উড়ে বেড়াতোএখন আমি হলাম গ্রীষ্মকালএখন আমাতে কেবলই ঝড়।

****

Advertisement

বয়স যখন পঁচিশ

বয়স যখন পঁচিশনারী ঠিক মেপে মেপে কথা বলতে শেখেকণ্ঠস্বর নিচু হয়ে ঢালু পাহাড় হয়ে পড়েজীবন তখন নীল সমুদ্রএই জলোচ্ছ্বাস, এই ভাটাতবু সমস্ত সৌন্দর্য দেখে নেওয়া যায়জীবন নতুনভাবে বাঁচতে শেখে।

বয়স যখন পঁচিশনারী তখন নিজের ঘরকে পর ভাবেভরা মজলিসে থেকেও একা লাগেরাতের চাঁদের মতোই নিঃসঙ্গ লাগেজীবন তখন ঝলসানো শস্য ক্ষেতের মতোই পোড়ানিজের কাছে বড্ড অসহায়তবু নারী কান্নার ভেতর হাসতে শেখে।

বয়স যখন পঁচিশএক জীবনের যত ব্যাথা, পোড়া বুকে লেগে থাকেনারী তখন কাঁচা পাতার সবুজ হতে শেখেদুঃখের পর দুঃখে ভেসে হাসতে শেখেকান্নার নদীতে ভেসে সাঁতরে উঠেদুঃখের ভেতরেও ঝকঝকে রোদের মতো হাসে।

Advertisement

****

ইদানিং

আকাশ, নদী, শিশির ভেজা দুর্বাঘাস সবই ডাকেআমি ফিরে ফিরে তাকাইসব কাজ চুকিয়ে আকাশের সিদ্ধতায় উড়ে বেড়াইপ্রকৃতির সব সৌন্দর্য আহরণে হেটে বেড়াইতবু তোমার ভালোবাসা আমায় ডাকে নাযতদিন যায়, আমি তত তোমার থেকে পালাই।

ভেসে যাওয়া নৌকা, হাঁসের দল, কচুরি ফুলে পুলকিত হইছোট ছোট আনন্দে দিশেহারা হয়ে পড়িসব কাজ চুকিয়ে সমস্ত অপার সৌন্দর্যে ভেসে বেড়াইমেঠোপথ, সর্ষে মাঠ, শস্যক্ষেত ছবির মতো লাগেইদানিং তোমার মুখপানে তাকিয়ে ভালোবাসা জাগে নাদিন যত যায়, আমি তত তোমায় ভুলে যাই।

তুমি তো কেবলই গাঢ় অন্ধকারে এক চাঁদতাকে ধরবার স্বপ্ন আমায় টানে না।

****

দিনযাপন

তোমার ভালোবাসা অতিথির মতোই ছিলকয়েকটা দিন যেতেই তোমার আর আমাকেই ভালো লাগে নাআমি বুঝেও না বোঝার মতো করেই ক’টা দিন কাটিয়েছি।একরাশ অবহেলায় ভেসেই নিজস্ব ঠিকানায় ফিরে এসেছিসেদিন বিদায় দিতেই কঠিন ভালোবাসা থেকে মুক্ত হয়েছি।

তোমায় নিয়ে আমার দিনযাপন শ্রাবণের বর্ষণ ছিলএকবার শুরু হলেই আর থামতেই চায় নাঝড়-বৃষ্টিতে প্রতিনিয়ত বুকের ভেতর তোলপাড় ছিলসেদিন তোমায় মুক্তি দিয়েই আমি বসন্তকাল হয়েছিএখন আমার জীবনজুড়ে নতুন কুড়ি স্বপ্ন-সুখের বিলাস করছেআমি একাকী কোকিলের মতো সুখে উড়ে বেড়াই।

তোমায় নিয়ে পথচলা গ্রীষ্মের কাঠফাটা পথের মতোই ছিলকখন যে হৃদয়ে কাঠিন্য আসে কিছুই টের পাই নাএই তুমি প্রচণ্ড ঝড় তোলোক্ষণিক পরেই প্রখর তাপমাত্রায় রাখোসেদিন আমি ভালোবাসা চুকিয়ে দিয়েছিএখন ঝড়-বৃষ্টি শেষে একাকী জোছনার মতোই থাকি।

****

তুমি আসবে বলে

দেখা হবে বলেই সমস্ত ভালোবাসা জমা রেখেছিতুমি আসবে বলে যে চিঠিখানা দিয়েছোতা প্রতিনিয়ত শতেকবার পড়ে নিইএই পৃথিবীর সমস্ত সুখ তোমার চিঠিজুড়ে লেগে আছেউঠতে, বসতে চিঠিখানা বারবার হাতে নিইআর কী যেন সুখে ভাসতে থাকি।

দেখা হবেই বলেই আনন্দে আছিতুমি আসবে বলে যে খুদেবার্তা পাঠিয়েছোতা প্রতি রাতে শতবার দেখে নিইপৃথিবীর সমস্ত আনন্দ আমার নিকট নেমে এসেছেসুযোগ পেলেই বার্তাটা দেখে নিইআর প্রতিনিয়ত আনন্দে আধখানা হয়ে রই।

কবি: স্নাতকোত্তর শেষ পর্ব, সমাজকর্ম বিভাগ, চাঁদপুর সরকারি কলেজ, চাঁদপুর।

এসইউ/জেআইএম