জাগো জবস

মাসকালাইয়ের বড়ায় নারীদের আয়

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের শালমারার উজিরপাড়া বাইগুনী গ্রামে শীতের সকালে দেখতে পাওয়া যায়, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই চলছে মাসকালাইয়ের বড়া বানানোর আয়োজন। রাস্তা দিয়ে হেটে গেলে চোখে পড়বে নীল জালে সাদা মাসকালাইয়ের বড়া।

Advertisement

স্থানীয়রা জানান, আগে এ গ্রামে শীতকালে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই বড়া বানাতো হতো। কালের পরিক্রমায় এখন কয়েকটি পরিবার এ বড়া বানানোর সঙ্গে যুক্ত আছে।

বড়া বানানোর সময় কথা হয় বন্দনা রানী সাহার (৩০) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আশ্বিন-কার্তিক মাস থেকে প্রায় ফাল্গুন মাস পর্যন্ত আমরা বড়া বানাই। কাটামারির (ধান মাড়াই) পরপরই শুরু হয় বড়া বানানোর কাজ। প্রতিদিন প্রায় ৩০-৩৫ কেজি বড়া বানাই। বানানোর পর তা গ্রামের হাটে বিক্রি করি। অনেকে বাড়িতে এসেও নিয়ে যান।’

বড়া বানানো সহজ নয়। ধৈর্য আর পরিশ্রমের প্রয়োজন। বড়া বানাতে প্রথমে প্রয়োজন মাসকালাই। তা সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। সকালে সেগুলোর খোসা ছাড়াতে হয়। তারপর শিলপাটায় বেঁটে ভালো করে ফেনাতে (গুলতে) হয়। হাতের কারিশমায় ছোট ছোট গম্বুজ আকৃতি করে জালের ওপর দিয়ে রোদে শুকাতে হয়। ভালো রোদ পেলে দুদিনেই শুকিয়ে যায়। তখন খাওয়ার উপযোগী হয়।

Advertisement

শিলপাটায় মাসকালাই বাঁটা কঠিন কাজ। অনেক সময় বেশি কালাই বাঁটলে হাত ব্যথা হয়। আগে ১০ কেজি কালাই বাঁটতেই দুজন লোকের তিন-চার ঘণ্টা লাগতো। এখন মেশিনের মাধ্যমে সহজেই বাঁটা হয়। যারা অল্প বড়া বানান, তারা ব্লেন্ডারও ব্যবহার করেন। সাগর সাহা নামের এক ব্যাবসায়ী জানান, মেশিনে প্রায় এক ঘণ্টায় ১০-১২ মণ কালাই বাঁটা সম্ভব। গ্রামের অনেকেই এখন মেশিনে কালাই বাঁটেন।

সারওয়ার হোসেন নামের এক পাইকারি বিক্রেতা জানান, ‘আমি প্রতি শীতের মৌসুমে প্রায় ৯০ থেকে ১০০ মণ বড়া বিক্রি করে থাকি। এগুলো আমার পরিবার তৈরি করে। নিজের এলাকা ছাড়াও পাশের অনেক জায়গা থেকে মানুষ এসে এ বড়া নিয়ে যান।’

শালমারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান আনিছ বলেন, ‘আগে শীতের সময়ে এ গ্রামে বড়া তৈরির ধুম পড়ে যেত। এখনও অনেক পরিবার তৈরি করে। গ্রামের নারীরাই সাধারণত এগুলো বানান আর পুরুষরা তা হাটে হাটে বিক্রি করেন। বড়া বানিয়েই অনেকে সংসার চালান। গ্রামের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখেন।’

সাধারণত বড়াগুলো পাইকারি ১৬০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়ে থাকে। ভোজনরসিকরা শীতের সকালে বড় মাছের ঝোল, আলুর ডাল বা বিভিন্ন তরকারিতে এ বড়া খেয়ে থাকেন।

Advertisement

এসইউ/জেআইএম