উচ্চ আদালতে ইংরেজি ব্যবহার ও রায় ইংরেজিতে দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংসদ সদস্যরা। তারা বলেন, সাইনবোর্ডসহ সর্বত্র বাংলা ব্যবহারের জন্য রুল দিয়েছেন হাই কোর্ট। সেই রুলও তারা দিয়েছেন ইংরেজিতে। এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বিবৃতিও দাবি করা হয়েছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সোমবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় এসব বিষয় উঠে আসে।উচ্চ আদালতের সব রায় বাংলায় দেয়া কষ্টকর- প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার এমন মন্তব্যের পরদিনই সংসদে এ নিয়ে আলোচনা হল। সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ‘বাংলায় রায় দিতে উচ্চ আদালত আইনগতভাবে বাধ্য। কেন সেটা হচ্ছে না, প্রতিবন্ধকতার কারণ কী, সেটা জানা যায় না। উচ্চ আদালতের রায় বাংলায় হবে কি না- সে বিষয়ে সংসদে আইনমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করছি।’ তিনি আরো বলেন, ১৯৮৭ সালে এইচ এম এরশাদ সাহেব আইন করেছিলেন সর্বত্র বাংলা ভাষার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার জন্য। কিন্তু উচ্চ আদালতে সেই আইন মানা হচ্ছে না। যদি দ্বিমত থাকে তাহলে আইনমন্ত্রী আইন সংশোধন করতে পারেন। উচ্চ আদালতের রায় যদি বাংলায় দেয়া হয় তবে সাধারণ মানুষকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে না। অনেক কিছু মানুষ বোঝে না। সেগুলো বাংলায় লেখা হলে মানুষের বুঝতে সুবিধা হবে। জাতীয় পার্টির এমপি ইয়াহহিয়া চৌধুরী আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, ‘হাইকোর্ট সাইনবোর্ডসহ সর্বত্র বাংলা ব্যবহারের জন্য রুল দিয়েছে। সেই রুলও তারা দিয়েছে ইংরেজিতে। ১৯৭৩ সালের বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট (হাইকোর্ট বিভাগ) রুলসে সুপ্রিম কোর্টের যেকোন আবেদন ইংরেজিতে করার বিধান ছিল। সেই নিয়ম সংশোধন করে সেখানে ‘ইংরেজি অথবা বাংলায়’ আবেদন করার কথা বলা হয়। তবে এখনও অধিকাংশ আবেদন ও নথির কাজ চলে ইংরেজিতে।’তিনি আরো বলেন, সরকার ও প্রশাসনের সব দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি গাড়ির নম্বর প্লেট, সাইনবোর্ড, নামফলক ও টেলিভিশনে প্রচারিত বিজ্ঞাপন বাংলায় লেখার বিষয়ে হাই কোর্ট থেকে আদেশ এসেছে একাধিকবার। রেডিও-টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে বা বিজ্ঞাপনে বাংলা ভাষার বিকৃতি বন্ধে রুলও জারি হয়েছে। তবে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করার উদ্যোগ উচ্চ আদালতেই গতি পায়নি। সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান এবং এ বি এম খায়রুল হক ছাড়াও হাই কোর্টের কয়েকজন বিচারক বিভিন্ন মামলার রায় দিয়েছেন বাংলা ভাষায়। হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি এআরএম আমিরুল ইসলাম চৌধুরী তার সব আদেশ, নির্দেশ ও রায় বাংলায় দিতেন বলে এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন খায়রুল হক। প্রধান বিচারপতি থাকাকালে তিনি বিভিন্ন সময়ে বিচারকদের বাংলায় রায় লিখতে উৎসাহ যুগিয়েছেন। কিন্তু পরিস্থিতি বিশেষ বদলায়নি। সুপ্রিম কোর্ট জাদুঘরে দেড় শতাব্দী আগে বাংলায় দেয়া একটি রায় রয়েছে, যে রায়ের প্যাডের লোগো ফার্সিতে। এইচএস/এনএফ/আরআইপি
Advertisement