দেশজুড়ে

বিদায়ী বছরে সিদ্ধিরগঞ্জ-সোনারগাঁয়ের আলোচিত ১০ ঘটনা

বিদায় নিয়েছে ২০২২ সাল। তবে বছরজুড়ে নানা ঘটনায় আলোচিত ছিল নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁ। এর মধ্যে অন্যতম ছিল সেভেন মার্ডারে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেনের স্বজনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়া, আসামির দ্বারা গাড়ি চালানো ও দুর্ঘটনায় দুই এসআইয়ের মৃত্যু, পুলিশকে মসজিদে মারধর, সাক্ষীকে জুতাপেটা, ৩৭ হাজার বোতল মদ উদ্ধার ও শিশু শিক্ষার্থীকে নির্মমভাবে হত্যা।

Advertisement

এছাড়া আলোচনায় ছিল বৈদ্যুতিক শক দিয়ে ও বালতির পানিতে চুবিয়ে দলিল লেখককে হত্যা, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) কুপিয়ে ডাকাতি, বাবাকে না পেয়ে ছেলেকে গ্রেফতার এবং বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে মহাসড়কে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার।

কাউন্সিলর হন নূর হোসেনের ভাই-ভাতিজা

বছরের প্রথম দিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সরগরম ছিল। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেভেন মার্ডারে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেন কনডেম সেলে তার ভাই-ভাতিজার পক্ষে কাজ করার জন্য এলাকাবাসীকে ফোন দিলে চাঞ্চল্যকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত নূর হোসেনের ভাই নূর উদ্দিন মিয়া ও ভাতিজা শাহজালাল বাদল যথাক্রমে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

Advertisement

গাড়ি চালাচ্ছিলেন আসামি, দুর্ঘটনায় দুই এসআইয়ের মৃত্যু

১৭ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ পৌরসভার দত্তপাড়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশের দুই উপ-পরিদর্শক (এসআই) নিহত হন। সেই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন আসামি।

সোনারগাঁ থানা পুলিশ জানায়, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ওইদিন অভিযান চালিয়ে আলমগীর হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে ৪২ হাজার ইয়াবাসহ আটক করা হয়। তাকে নিয়ে তারা সরাসরি জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নেওয়া হয়। এ সময় আসামিই গাড়ি চালান। সংবাদ সম্মেলন শেষে তাদের ফের থানায় নেওয়া হচ্ছিল। এ সময়ও আসামিকে দিয়ে গাড়িটি চালানো হয়। গাড়ি খাদে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যান আসামি। এতে দুই এসআই মারা যান ও এএসআই গুরুতর আহত হন।

পুলিশ কর্মকর্তাকে মুসল্লিদের মারধর, গ্রেফতার ৩১

Advertisement

১০ জুন সিদ্ধিরগঞ্জে আদমজী বিহারি ক্যাম্প এলাকায় অবস্থিত আদমজী শাহী জামে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছিলেন ইমাম। তার বক্তব্য চলাকালে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ভারতের ঘটনা ভারতে থাকুক আমরা এ নিয়ে বিশৃঙ্খলা না করি। এ বক্তব্যের জের ধরে তাকে মারধর করেছেন বিক্ষুব্ধ মুসল্লিরা। প্রথমে কথা-কাটাকাটি, পরে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধর করা হয়। এ সময় আরও দুজন আহত হন। ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে উদ্ধার করে মসজিদ কমিটির সভাপতি জয়নাল আবেদীন মাস্টারের বাড়িতে নেওয়া হয়। পরে সেখানেও মারধর করে উত্তেজিত জনতা।

এ ঘটনায় ওইদিন দিনগত রাতে বিহারি ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ৩১ জনকে গ্রেফতার করে। এর প্রতিবাদে আদমজী-চাষাঢ়া সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করাকালে র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে বিহারিরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় ১৪ জুন ৪৯ জনের নামে এবং অজ্ঞাত ৩০০ জনকে আসামি করে মামলা হয়। এর আগে পুলিশের হামলার ঘটনায় ১৫০ জনকে আসামি করে থানায় আরও একটি মামলা হয়।

সাক্ষীকে ১৭ বার জুতাপেটা

১৭ দিন জেল হাজতে থাকার জামিনে বেরিয়ে হাজি তাহের আলী নামের এক সাক্ষীকে ১৭ বার জুতাপেটা করে করেছেন আসামিরা। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের বারদি ইউনিয়নের চেঙ্গাকান্দি গ্রামে চলতি বছরের ২৩ জুন এ ঘটনা ঘটে।

দুই কনটেইনার ভর্তি ৩৭ হাজার বোতল মদ জব্দ

৩ জুলাই র‌্যাবের অভিযানে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে অবৈধভাবে আমদানি করা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৩৬ হাজার ৮১৬ বোতল বিদেশি মদ জব্দ করা হয়। এসব মাদকের আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩৭ কোটি টাকা। এরপর অভিযান চালিয়ে এ অবৈধ চালান আমদানি কারবারের সঙ্গে জড়িত দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, অবৈধ ওই মদের চালান এনেছিলেন আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য আজিজুল ইসলাম। তিনি মুন্সিগঞ্জের একটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। এদিকে গত ২৬ অক্টোবর আদালতের নির্দেশে মদগুলো ধ্বংস করে র‌্যাব-১১।

শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা

২৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের পিরোজপুর ইউনিয়নের নয়াগাঁও এলাকায় মাটি চাপা দেওয়া অবস্থায় হুমায়ারা (৮) নামের এক শিশু মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ২৯ জুলাই মা সেতেরা বেগম বাদী হয়ে মামলা করেন। এ মামলায় নিহত হুমায়রার ভাবি বৈশাখী আক্তার, তার মা মনোয়ারা বেগম ও ভগ্নিপতি সেলিম ওরফে উদয় ও সেলিমের সহযোগী শুক্কুর আলীকে গ্রেফতার করা হয়।

বৈদ্যুতিক শক দিয়ে-বালতির পানিতে চুবিয়ে দলিল লেখককে হত্যা

২৪ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে পরকীয়ার জেরে মো. মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া নামের এক দলিল লেখককে বৈদ্যুতিক শক ও বালতির পানিতে চুবিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী শাহিনুর আক্তার ও পরকীয়া প্রেমিক রিপনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওসিকে কুপিয়ে ডাকাতি

৩০ সেপ্টেম্বর ভোরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা টোল প্লাজা এলাকায় ডাকাতের কবলে পড়েছিলেন চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন ও তার গাড়িচালক মো. ইয়াছিন বাদশা। এ সময় ডাকাতরা তাদের কুপিয়ে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও এটিএম কার্ড নিয়ে যায়। এ ঘটনায় জড়িত থাকায় ৪ অক্টোবর রাতে উপজেলার ঝাউচর এলাকায় অভিযান চালিয়ে বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের মনারবাগ গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে রোমান (৩২) ও পিরোজপুর ইউনিয়নের ঝাউচর গ্রামের রমিজ উদ্দিনের ছেলে মামুনকে (২৮) গ্রেফতার করে পুলিশ।

বাবাকে না পেয়ে ছেলেকে গ্রেফতার

৭ ডিসেম্বর দিনগত রাত ২টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল আবাসিক এলাকার প্রিয়ম টাওয়ারে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক মনিরুল ইসলামকে না পেয়ে তার ছোট ছেলে প্রীতমকে আটক করে পুলিশ। পরদিন বিস্ফোরক মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে মহাসড়কে নিরাপত্তা জোরদার

বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে ১০ ডিসেম্বর ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে ৪ শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এছাড়া মহাসড়কজুড়ে অসংখ্য স্থানে বসানো হয় পুলিশের চেকপোস্ট। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শুধু সিদ্ধিরগঞ্জ অংশেই ৩০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

এসজে/এমএস