করোনা মহামারির ক্ষত কাটিয়ে উঠতে শুরু করে বিশ্ব। সব কিছুই স্বাভাবিক হতে থাকে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আবারও ধাক্কা লাগে বিশ্ব অর্থনীতিতে। টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে বৈশ্বিক অর্থনীতি। জ্বালানি সংকটে পড়ে অর্থনীতির সব খাত। এমন পরিস্থিতিতেও দেশের ব্যাংকগুলোতে মুনাফার সূচকে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। আগের বছরের তুলনায় ২০২২ সালে অধিকাংশ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে।
Advertisement
ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বাড়লেও নিট মুনাফার হিসাবে এর পরিমাণ কত হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। যদিও বেশিরভাগ ব্যাংক তাদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি মুনাফা অর্জন করেছে। ২০২২ সালের শেষদিন ছিল শনিবার (৩১ ডিসেম্বর)। এদিন ব্যাংকগুলো তাদের মুনাফার হিসাব কষেছে।
ব্যাংকগুলো থেকে পাওয়া সবশেষ তথ্যে দেখা গেছে, বিদায়ি বছরে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। বছর শেষে ব্যাংকটি ২ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। এর আগের বছর ২০২১ এর শেষে ব্যাংকটির মুনাফা ছিল দুই হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। তারও আগে ২০২০ সালের শেষে মুনাফা করেছিল দুই হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।
এছাড়া বেসরকারি এনআরবিসি ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ৪৫৫ কোটি টাকা। ২০২১ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৪৪৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এবার ১১ কোটি টাকা বেড়েছে। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৫৫০ কোটি টাকা। আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ৫০১ কোটি টাকা। বছরের ব্যবধানে মুনাফা করেছে ৪৯ কোটি টাকা।
Advertisement
রাষ্ট্রায়ত্ত রুপালী ব্যাংক বছর শেষে মুনাফা করেছে ২১১ কোটি টাকা। ২০২১ সালে এ মুনাফা ছিল ১৪৭ কোটি টাকা। যমুনা ব্যাংক ২০২২ শেষে মুনাফা করেছে ৮৩০ কোটি টাকা। এ ব্যাংকটির আগের বছর মুনাফার পরিমাণ ছিল ৭৫০ কোটি টাকা। ইউনিয়ন ব্যাংক মুনাফা করেছে ৪৫০ কোটি টাকা, আগের বছরে এর পরিমাণ ছিল ৩৭৫ কোটি টাকা।
এছাড়া বেসরকারি খাতের আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ৮১০ কোটি টাকা, গত বছরের মুনাফার পরিমাণ ছিল ৭৫০ কোটি টাকা। মার্কেন্টাইল ব্যাংক মুনাফা করেছে ৮৪৫ কোটি টাকা, ২০২১ সালে ব্যাংকটির মুনাফা ৭২২ কোটি টাকা ছিল। সাউথইস্ট ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে এক হাজার ১৩৫ কোটি টাকা যা আগের বছরে ছিল এক হাজার ১৬ কোটি টাকা।
তবে কয়েকটা ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা কমেছে। এর মধ্যে রয়েছে সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার ব্যাংক। এই ব্যাংকটির বছর শেষে মুনাফা হয়েছে ২০০ কোটি টাকা। ২০২১ সালে এ ব্যাংকটির মুনাফা ছিল ২১০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এ ব্যাংকটির মুনাফা কমেছে ১০ কোটি টাকা।
মূলত আয়খাত থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে যে মুনাফা থাকে, সেটিই হলো ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা। এটি ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। এ মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণ ও প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) সংরক্ষণ করতে হয় এবং সরকারকে কর পরিশোধ করতে হয়। প্রভিশন সংরক্ষণ ও কর-পরবর্তী মুনাফাই হলো একটি ব্যাংকের প্রকৃত বা নিট মুনাফা।
Advertisement
পরিচালনার মুনাফা নিয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেনের প্রভাব থেকে বেরিয়ে মুনাফা করছে ব্যাংকখাত। রেমিট্যান্স বাড়ছে, এলসি খুলতেও পারবে নিজ নিজ ব্যাংক। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে বলা যায় আগামীতে আরও ভালো করবে ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, এবার ফরেন এক্সচেঞ্জ ভালো ছিল, তারা বাণিজ্যিকভাবে ভালো করেছে। যারা ভালো করেনি মানে এক্সটা প্রফিট তাদের হয়তো হয়নি। যাদের হোল্ডিং ছিল তাদের ভ্যালু অনেক বেড়ে গেছে প্রফিটটা বেশি হয়েছে সে জায়গায়। বাকি প্রফিটটা এসেছে অপারেশন থেকে।
ইএআর/জেডএইচ/