সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় করা মামলাটি সঠিকভাবে তদন্ত হয়নি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সঠিক তদন্ত করতে সক্ষম হননি। মামলার তিনজন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্যতে মো. ইশতিয়াক মাহমুদের নাম বললেও এজাহার ও চার্জশিটে তার নাম নেই। এজন্য মামলাটি সাক্ষীর পর্যায় থেকে উত্তোলন করে অধিকতর তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
Advertisement
গত ২৭ ডিসেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ঠিক ছিল। এদিন ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য আবেদন করেন। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন। তবে কোন সংস্থা তদন্তে করবে সেটা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। এটি নির্ধারণ করবেন ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম।
মামলার তদন্ত সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়নি
মামলার অধিকতর তদন্তের আবেদনে পিপি উল্লেখ্য করেন, মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। মামলায় মোট ছয়জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলার রেকর্ড পর্যালোচনায় দেখা যায়, এজাহারে কোনো আসামির নাম নেই। তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে নয়জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। চার্জশিট দাখিল করার পর মামলাটির বিচারাধীন সময়ে মোট ছয়জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। এর মধ্যে তিনজন সাক্ষী একজনের নাম বলেছেন। যার নাম এজাহার বা চার্জশিটে নেই। যেহেতু তিনজন সাক্ষী একজনের নাম বলেছে, তাই মনে হচ্ছে তদন্ত সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়নি। এজন্য ন্যায়বিচারের স্বার্থে মামলাটি অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন ও অন্য কোনো তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত করলে প্রকৃত সত্য ঘটনা উদঘাটন করা সম্ভব। ড. বদিউল আলমসহ তিন সাক্ষীর জবানবন্দিতে ইশতিয়াকের নাম
Advertisement
বিচারক আদেশে উল্লেখ্য করেন, রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন বিষয়ে শুনলাম। মামলার এজাহার, পুলিশ প্রতিবেদন, রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন, প্রসিকিউশনের সাক্ষীর (পিডব্লিউ-১ থেকে পিডব্লিউ-৬ পর্যন্ত) জবানবন্দি ও বিজ্ঞ কৌশলীর বক্তব্যসহ নথি পর্যালোচনা করলাম।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঘটনাটি ঘটেছে ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট। ওই বছরের ১০ আগস্ট অজ্ঞাতনামা ৩০ থেকে ৪০ জনকে আসামিকে করে মোহাম্মদপুর থানায় মামলাটি করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা (তেজগাঁও) বিভাগ, মোহাম্মদপুর জোনাল টিমের পরিদর্শক মো. আব্দুর রউফ। তিনি তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি নয়জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তাদের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ১৪৩, ৩২৩, ৪২৭ ও ৫০৬ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়।
অভিযোগ গঠনের পর বদিউল আলম মজুমদার, খুশি বেগম, মাহবুবুল আলম মজুমদার, তাজিনা হোসেন মজুমদার, শামীম আহসান পারভেজ ও মো. জামানের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ড. বদিউল আলম মজুমদার, খুশি বেগম ও মাহবুবুল আলম মজুমদার তাদের জবানবন্দিতে মামলার ঘটনার সঙ্গে ইশতিয়াক মাহমুদ জড়িত বলে জানান।
মামলার এজাহার ও চার্জশিটে নেই ইশতিয়াকের নাম
Advertisement
বিচারক আদেশে আরও উল্লেখ্য করেন, মামলার চার্জশিটে দেখা যায়, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইশতিয়াক মাহমুদের নাম চার্জশিটে উল্লেখ করেননি ও তাকে আসামি শ্রেণিভুক্ত করেননি। এতে দেখা যায়, তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার ঘটনার বিষয়ে সঠিক তদন্ত করতে সক্ষম হননি। এমতাবস্থায় আদালত মনে করেন, মামলার ঘটনার বিষয়ে সত্যতা উদঘাটনসহ মো. ইশতিয়াক মাহমুদকে আসামি না করে মামলার বিচারকার্য সম্পন্ন করলে ন্যায়বিচার ব্যাহত হতে পারে। এজন্য মামলাটি অধিকতর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তাই রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন মঞ্জুর করে মামলাটি সাক্ষীর পর্যায় থেকে উত্তোলন করে অধিকতর তদন্তের জন্য নথিটি সিএমএম আদালতে পাঠানো হোক।
সশস্ত্র একদল মোটরসাইকেল আরোহী রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে হামলা করেন
২০১৮ সালের ৪ আগস্ট রাতে বদিউল আলম মজুমদারের মোহাম্মদপুর এলাকার বাসায় নৈশভোজে যান মার্শা বার্নিকাট। নৈশভোজ শেষে রাত ১১টার দিকে ফেরার পথে সশস্ত্র একদল মোটরসাইকেল আরোহী রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা গাড়িবহরের দিকে আগানোর সময় রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তা দল বাধা দেয়। এসময় তারা নিরাপত্তা দলের দুই সদস্যকে ঘুসি মারে। পরে গাড়িবহর চলে যাওয়ার সময় দুটি গাড়িতে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় বদিউল আলম বাদী হয়ে মামলা করেন।
২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ছাত্রলীগ নেতা নাইমুল হাসানসহ নয়জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট জমা দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। চার্জশিটভুক্ত নয় আসামি হলেন- ছাত্রলীগ নেতা নাইমুল হাসান, ফিরোজ মাহমুদ, মীর আমজাদ হোসেন, শহিদুল আলম খান, তানহা ওরফে মুজাহিদ, সাজু ইসলাম, রাজীবুল ইসলাম, মো. সিয়াম ও অলি আহমেদ।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়ি ধাওয়া করলে তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন
চার্জশিটে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র হওয়ার সন্দেহের জের ধরে সেদিন স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতা নাইমুল হাসানের নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের একটি দল ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়ি ধাওয়া করলে তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়, বাড়ির জানালার কাচ ভাঙচুর করা হয়। বদিউল আলম মজুমদার, তার স্ত্রী ও সন্তানকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু জাগো নিউজকে বলেন, সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় করা মামলাটি সঠিকভাবে তদন্ত হয়নি। এজন্য মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করি। আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন।
জেএ/আরএডি/জিকেএস