পৌষ মাসের শুরু থেকেই চুয়াডাঙ্গায় জেলায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। শেষ রাত থেকে ভোর পর্যন্ত পড়ছে ঘন কুয়াশা। বেলা বাড়ালেও হালকা কুয়াশা থাকছে। মাঝ মধ্যে সূর্য উঁকি দিলেও তাপ ছড়াচ্ছে না। ঠান্ডার দাপটের কাছে যেন নিস্তেজ হয়ে পড়েছে সূর্যটাও।
Advertisement
কনকনে শীতে বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। জীবন জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করে তাদের রুটি-রুজির সন্ধানে ঘরের বাইরে বের হতে হচ্ছে। ঠান্ডার মধ্যে ভোরের আলো ফোটার আগেই বাড়ির বাইরে বেরিয়ে পড়ছেন তারা। রিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইকসহ পৌর শহরের বিভিন্ন মোড়ের ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলো সন্ধ্যার পর থেকেই কমতে শুরু করে।
তবে গ্রামের দিকে শীতের তীব্রতা বেশি। গ্রাম এলাকায় হিমেল হাওয়া ও কুয়াশাও বেশি পড়ছে। সঙ্গত কারণে তাপমাত্রাও গ্রামে কিছুটা কম।
শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার এ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
Advertisement
চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের রেলবাজার এলাকার রিকশাচালক আলমগীর হোসেন জানান, হঠাৎ শীত বেড়ে গেছে। সকালে ও রাতে জোরে রিকশা চালালে শরীরে বাতাস সূচের মতো ফুটছে। হাত পা অবশের মতো হয়ে যাচ্ছে।
রাতে চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, শীতে ছিন্নমূল মানুষরা স্টেশনের বারান্দায় ছেঁড়া কাঁথা-কম্বল কিংবা বস্তা দিয়ে নিজেকে মুড়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। তবুও শীতে কাঁপছেন অসহায় মানুষগুলো। কনকনে ঠান্ডায় এ জেলায় ঘুরতে এসে বিপাকে পড়েছেন অনেকে। ট্রেনের অপেক্ষায় স্টেশনে বসে থাকাও যেন শীতের সঙ্গে যুদ্ধ করার সামান হয়েছে যাত্রীদের কাছে।
চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনের বারান্দায় বসে থাকা মাহাবুব মোরশেদ কাঁপতে কাঁপতে জানালেন, ‘ভাই খুব কষ্ট হচ্ছে। দুদিনের জন্য ঢাকা থেকে দুই বন্ধুকে নিয়ে চুয়াডাঙ্গায় বেড়াতে এসেছিলাম। এর মধ্যে যেদিন চুয়াডাঙ্গায় পৌঁছেছি সেদিনই জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। আমি কোনো মতে টিকে থাকলেও দুই বন্ধু শীতে কাহিল।’
শীত বৃদ্ধি পাওয়ায় চুয়াডাঙ্গা বড় বাজার, নিউ মার্কেট ও নিকসন মার্কেটেসহ বিভিন্ন মার্কেটে ভিড় বেড়েছে। শীতের পোশাকের বিক্রিও বেড়েছে বলেও জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
Advertisement
চুয়াডাঙ্গা নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘শীতের পোশাক ও আনুষঙ্গিকের বিক্রি মোটামুটি ভালো। তবে শীতের দাপটে মানুষ বাইরে কম বের হচ্ছে, সন্ধ্যার পর থেকে পৌর শহরে লোকজনের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। সকালের পর ব্যবসা একটু চাঙ্গা থাকছে।
নিউ মার্কেটের পোশাক ব্যবসায়ী সুমন পারভেজ বলেন, শীত বাড়ায় গরম পোশাকও বিক্রি বেড়েছে। সন্ধ্যা ও রাতের তুলনায় সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ক্রেতারা বেশি আসছেন। এ বছরও বাহারি শীত পোশাকে দোকান সাজানো হয়েছে।
চা-দোকানি রনি জানান,ফজরের নামাজের পর মুসল্লিরা তার দোকানে চা পান করতে ভিড় করেন, কিন্তু অতিরিক্ত ঠান্ডায় তিনি ভোরে দোকান খুলতে পারছেন না, ঠিক তেমনি ভিড়ও কম।
এদিকে শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। প্রাপ্ত বয়স্কদের তুলনায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। চুয়াডাঙ্গার ১০০ শয্যার হাসপাতালে শিশুদের জন্য ১৫টি শয্যা বরাদ্দ থাকলেও গত কয়েকদিন ধরে শয্যা থেকে কয়েকগুণ বেশি ঠান্ডাজনিত নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস ও অ্যাজমা আক্রান্ত শিশু ভর্তি হয়েছে।
দামুড়হুদা উপজেলার বাসিন্দা শাপলা খাতুন বলেন, ‘গত বুধবার থেকে তার মেয়ে ঠান্ডা রোগে আক্রান্ত হয়। দামুড়হুদা থেকে চিকিৎসা করালেও সুস্থ না হওয়ায় বৃহস্পতিবার মেয়েকে সদর হাসপাতালে আনলে চিকিৎসক ভর্তি রাখে। শিশু ওয়ার্ডে কোনো বেড খালি নেই, তাই শিশু কন্যাকে ওয়ার্ডের ফ্লোরে বসে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। হাসপাতালের টয়লেট ও ফ্লোর নোংরা। শীতের ঠান্ডা বাতাসে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন জাগো নিউজকে বলেন, ‘শীত যত বাড়ছে হাসপাতালে শিশু রোগী ভর্তির সংখ্যাও বাড়ছে। প্রতিদিন বহির্বিভাগেও ২০০ জনেরও বেশি রোগীকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামাল দিয়ে হাসপাতালের সেবিকাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, চুয়াডাঙ্গায় কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ বিরাজ করছে। যার ফলে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। তবে বাতাসের আর্দ্রতা অনেক বেশি। ৯৭ ভাগ আর্দ্রতায় শীত অনুভূত হচ্ছে। শুক্রবার দেশে শৈত্যপ্রবাহের আওতা না বাড়লেও দিনের বেশির ভাগ অংশে কুয়াশা থাকায় শীতের মাত্রা বেড়েছে অনেক বেশি। রাতে শীতের তেমন উন্নতি না ঘটলেও দিনে শীত বাড়বে না। সোমবারের দিকে তাপমাত্রা সামান্য বাড়ার সম্ভাবনা আছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলায় এ যাবত ২১ হাজারের বেশি কম্বল শীতার্ত মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। আরও ৩০ হাজার কম্বল আমরা বিতরণ করবো। এছাড়া অসহায় দুস্থ শীতার্ত মানুষকে আমি ব্যক্তিগতভাবে সাহায্য সহযোগিতা করছি ও চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
এসজে/জিকেএস