ফিচার

নতুন বছর নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

মামুনূর রহমান হৃদয়

Advertisement

বিদায়ী বছরের হতাশা ও বঞ্চনাকে ছাপিয়ে মনকে প্রফুল্ল করে তোলে নতুন বছরের আগমনী বার্তা। ক্যালেন্ডারের নতুন পাতা উল্টিয়ে একসঙ্গে উচ্চারিত হয় ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’। নতুন দিনের আগমন, নতুন করে গন্তব্য। নতুন প্রাণচাঞ্চল্য, নতুন শপথ সব কিছুই যেন একাকার হয় বছরের প্রথম দিনটিতে এসে। অতীতকে স্মৃতির চাদরে মুড়িয়ে নতুন সময়কে বরণ করে নেওয়ার অনুভূতি যেন একটু আলাদা। নতুন বছরের ভাবনা নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কথা বলেছেন জাগোনিউজের সঙ্গে। তাদের ব্যক্ত করা অভিমত জানাচ্ছেন শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী মামুনূর রহমান হৃদয়-

শিক্ষাক্ষেত্রে আরও উন্নতি দেখতে চাইতাসনীম নওশীন, সরকারি তিতুমীর কলেজ বর্তমান সময়ে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে শিক্ষাদান জরুরি। নতুন বছরে শিক্ষাক্ষেত্রে আরও উন্নতি দেখতে চাই। শিক্ষাব্যবস্থায় কেবল প্রতিযোগিতার মানসিকতা। তাতে স্বার্থপরতা, হিংসা-বিদ্বেষ, অসহিষ্ণুতার বীজ নিয়েই বড় হবে শিশু। আর বৃহত্তর সমাজবাস্তবতায় প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তার ভেতরে পরিপুষ্ট বীজ শক্তি নিয়েই প্রকাশিত হবে। প্রতিযোগিতার কুফলের হাতেনাতে প্রমাণ পাই উচ্চশিক্ষায় ভর্তি পরীক্ষার ফল বিপর্যয়ে। প্রাথমিক-মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরিসংখ্যান চমকপ্রদ দেখালেও উচ্চশিক্ষার মান বিচারের সময় ধরা পড়ে যায় ফাঁক ও ফাঁকি। এভাবে আমরা শিক্ষার প্রকৃত লক্ষ্য অর্জন করতে পারব না। তাই নতুন বছরে শিক্ষাব্যবস্থায় যুগোপযোগী পরিবর্তন আসবে এমনটাই প্রত্যাশা করছি।

ভার্চ্যুয়াল জগত থেকে বের হতে হবেফারদিন এহসান, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়খারাপ সবকিছুকে ফেলে ভালো কিছু গ্রহণের মাধ্যমে নতুন বছর পার করতে চাই। বর্তমানে তরুণরা বেশিরভাগই রাত জাগে এবং দেরিতে ঘুম থেকে ওঠে। সারাদিন সোশ্যাল মিডিয়া এবং নেতিবাচকতার মধ্য দিয়ে আমাদের সময় কাটে। লকডাউনে এগুলো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তাই ভার্চ্যুয়াল জগত থেকে বের হয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে যাওয়া উচিত। পড়ালেখার পাশাপাশি আমাদের উচিত দেশ ও মানুষের জন্য কিছু করা। নতুন প্রজন্ম হিসেবে দেশকে পুরো বিশ্বের সামনে তুলে ধরাটাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। এটি কেবল দেশপ্রেম, ইতিবাচক মনোভাবের মধ্য দিয়ে সম্ভব।

Advertisement

সুস্থ দেহ মানুষকে সৃজনশীল করে তোলেমোঃ সোহান, নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভেবে কাজ করতে হবে। অন্য কারো কাছে নিজের মতো করে ভাবার আশা না করাটাই ভালো। কারণ পৃথিবীর সব মানুষের চিন্তাধারা আলাদা। সব মানুষেরই চাহিদা থাকবে আর সময়ের সঙ্গে চাহিদা বৃদ্ধিও পেতে থাকে। তবে তা অবশ্যই সীমার মধ্যে থাকাটা জরুরি। সর্বদা নিজেকে ভালোবাসতে হবে। কারণ যে নিজেকে ভালোবাসতে পারে না সে অন্যকে ভালোবাসতে পারবে না, তার কল্যাণে কাজ করতে পারবে না। নিজেকে ভালোবাসার অংশ হিসেবে স্বাস্থ্যের প্রতি আমাদের গুরুত্ব দেওয়া অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। কারণ সুস্থ দেহ মানুষকে সৃজনশীল করে তোলে। কোনো কাজে হাল ছেড়ে দেওয়া বা আশাহত হওয়া যাবে না। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে লেগে থাকাটা জরুরি। নেতিবাচক চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে ইতিবাচক চিন্তাভাবনায় মনোনিবেশ করতে হবে। এই কাজগুলো সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে করতে পারলে আমাদের সাফল্য ধরা দেবে খুব সহজেই।

পরিবেশ দূষণ থেকে বিরত থাকতে হবেজান্নাতুল তানজুম ইসলাম, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়কয়েক বছর ধরেই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশের তালিকায় প্রথম দিকে বাংলাদেশের নাম থাকছে। আর রাজধানী ঢাকা থাকছে শীর্ষ দূষিত নগরীর তালিকায়। এটা খুব দুঃখজনক বিষয়। শিল্প-কারখানায় জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন তেল, গ্যাস, কয়লা ইত্যাদির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এছাড়া যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা, মলমূত্র ত্যাগ ও হাসপাতালের বর্জ্য ফেলা পরিবেশ দূষণের উৎস। এইসব পরিবেশ দূষণের কারণে মানুষ ও জীবজন্তুর ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। মানুষ ক্যানসার, চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট ও পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ছে। ফলে বাংলাদেশের মতো নিম্নাঞ্চল ভবিষ্যতে পানিতে তলিয়ে যাবে। সুতরাং ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে পরিবেশ দূষণের হাত থেকে দেশকে বাঁচতে হলে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন করতে হবে। বনায়নের পরিমাণ বাড়াতে হবে ও দূষণ রোধে পরিবেশ উপযোগী না এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে।

সব অপরাধের যথাযথ শাস্তি হোকমোঃ মাহমুদ খান, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিদেশে কিশোর ও তরুণ সমাজের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ইদানীং পত্রপত্রিকায় ‘কিশোর গ্যাং’-এর অপরাধ বিষয়ে প্রায়ই খবর বেরোচ্ছে। বেশ কয়েক বছরে এ প্রবণতা বাড়ার হার সবচেয়ে বেশি। অপরাধের মধ্যে যৌন হয়রানি ও লাঞ্ছনার ঘটনা অধিক। একইসাথে তারা জড়াচ্ছে হামলা, চুরি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাতেও। বাংলাদেশের তরুণদের সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে দুর্বল পুলিশিং এবং অপরাধ করেও পার পেয়ে যাওয়ার প্রবণতাকেই আমার দায়ী বলে মনে হয়। তাই নতুন বছরে আমার একটাই চাওয়া বাবা-মা যেন তাদের সন্তানদের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করে, সাংস্কৃতিক সংগঠন যেন অপরাধমূলক কর্মসূচি দমনে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে এবং আইন যেন সব অপরাধের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করে। তাহলেই দেশ হবে অপরাধ মুক্ত।

একাকিত্ব ও বিষণ্নতাকে করতে হবে জয়ফাহমিদা তাসনীম, আইইউবিএটি বিশ্ববিদ্যালয়একাকিত্ব ও হতাশার গ্লানি মুছে নতুন বছরকে গ্রহণ করতে চাই। বর্তমান প্রজন্ম বিষণ্নতা ও একাকিত্বের বেড়াজালে বন্দি। তারা সবাই একা সময় কাটাতে পছন্দ করেন। এই একাকিত্বই পরবর্তীতে তাদের মনে হতাশা বয়ে আনে ফলে জীবন হয়ে পরে দুর্বিষহ। তাই আমাদের উচিত একাকিত্বের জীবন থেকে বেড়িয়ে এসে নিজের পরিবারকে সময় দেওয়া কারণ একটি পরিবারই একটি সুন্দর ও সফল জীবনের মূল চাবিকাঠি। নিজেদের সৃজনশীলতা ও পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব দিয়ে নিজের দেশের জন্য নিরন্তর কাজ করে এগিয়ে যাওয়া আমাদের নতুন প্রজন্মের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।

Advertisement

কেএসকে/এমএস