ফিচার

শিক্ষার্থীদের কেমন কাটলো ২০২২

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ

Advertisement

ঘরের দেয়াল, টেবিলের ডেস্কে সময় এলো ক্যালেন্ডার পাল্টে দেওয়ার। একটি বছর যখন চলে যায়, আমরা ফিরে দেখি বড় ঘটনাগুলো। যেখানে আমরা ভালোলাগা খুঁজি। নতুন বছর আসার কিছুদিন পরই হয়তো আগের বছরের কথা ভুলতে থাকি আমরা। এমনি করে বিদায় নিতে যাচ্ছে ২০২২ সাল। বছরটিতে সবার মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত তরুণ শিক্ষার্থীদের মাঝেও ছিল নানা জল্পনা-কল্পনা। তাদের ব্যক্ত করা অভিমত তুলে ধরেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ।

বাইশের হতাশা তেইশে আসুক জাগরণ হয়েরিদুয়ান ইসলাম, বাংলা বিভাগএকুশের সমাপ্তির শেষে বাইশ সালটা আমাদের এনে দেয় প্রাপ্তির ছোঁয়া। একটি ঝামেলাপূর্ণ বছরের শেষে ২০২২ সালের নতুন সূর্যকে স্বাগত জানানোর সময় বাংলাদেশ বেশ দৃঢ় অবস্থানে ছিল। দেশের অর্থনীতি করোনা মহামারির নেতিবাচক প্রভাবকে পেছনে ফেলে নতুন উদ্যমে সামনে এগিয়ে যেতে পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল। প্রাপ্তি, হতাশা এবং শেষ সময়ের হাসি বা আনন্দ এই তিনে সুন্দর এক কম্বিনেশনে বিদায় জানাতে হচ্ছে বাইশকে। এই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাধাগ্রস্ত হয়। এই সংকটকে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সময় বলেও অভিহিত করা যায়। যাইহোক প্রত্যাশা থাকবে প্রাপ্তিগুলো নতুন মোড়কে নতুনভাবে প্রেরণা জোগাবে তেইশে এবং হতাশা, গ্লানিগুলো যাবে ঘুচে। বছর শেষ হওয়ার পথে সবাই নতুন আলো ও সম্ভাবনার আশায় বসে আছে। সুন্দর হোক ২০২৩।

ভয়-জয়ের সম্মিলিত প্রয়াস ২০২২শতাব্দী রায়, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগঘড়ির কাঁটা থেমে নেই। প্রতিটি মুহূর্তেই জীবন থেকে একটি একটি করে সেকেন্ড হারিয়ে যাচ্ছে। ঠিক তেমনি পরিসমাপ্তির পথে ২০২২। বছরের প্রতিটি মুহূর্তকে রাঙিয়ে জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই সংগ্রাম। সাফল্য কিংবা ব্যর্থতার মাঝেই অতিবাহিত হলো ২০২২। ২০২২ সালে বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন বাঁক নেওয়া বড় রাজনৈতিক ঘটনা, যা বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে নতুন রূপ দিয়েছে। বিদায়ী বছর দাগ কেটেছে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু, ইরানের বিক্ষোভ, মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব, বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি, ব্রিটেন, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক উত্থান পতনের ঘটনা। এরই মধ্য দিয়ে কেটে গেল ২০২২। এ বছর কোভিড-১৯ এর উচ্চ সংক্রমণ ক্ষমতার ওমিক্রন ধরনটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। তবে করোনা মহামারির দাপট অনেকটা কমে আসে। যাইহোক আবার আমরা এখন একটা নতুন পৃথিবী চাই, তা আমরা পাব না, কিন্তু তার স্বপ্ন যেন না মরে। তার জন্য একক এবং সম্মিলিত প্রয়াস যেন থেমে না যায় এটাই প্রত্যাশা।

Advertisement

২২-এর শেখা, ২৩-এর প্রত্যয়আবু সুফিয়ান সরকার শুভ, সমাজকর্ম বিভাগএইতো এলো ২০২২, আবার বিদায়ের ঘন্টা বাজিয়ে ছুটছে তার গতিতে নতুন বছরের দিকে। ২২ এর ঝুলিতে যা দেখেছি তা হলো সংগ্রাম আর সংগ্রাম, চোখের সামনে ও টেলিভিশনের পর্দায় মানুষের একটুখানি বেশী বাঁচার সংগ্রাম, একটুখানি বেশি ভালো থাকার সংগ্রাম। বছরের শুরুতে অনেক জল্পনা-কল্পনা থাকলেও তা সঠিকভাবে সম্পন্ন করা হয়ে উঠেনি। তবে ২০২২ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্বরণীয় বছর। এ বছরে অনেকগুলো প্রাপ্তি চোখে পড়ার মতো। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয়, মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে নজির স্থাপন, শিশু মৃত্যুহার হ্রাস, সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের মঞ্চে শিরোপা অর্জন। এতসব প্রাপ্তির পরও কিছু বিষয় যা পুরো বিশ্বের জন্য নেতিবাচক প্রভাব যেমন করোনার কারণে পৃথিবী স্থবির হয়ে যাওয়া, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক অবনতি লক্ষ্য করা গেছে। সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো বছরের শেষ দিকে এসে করোনা সংক্রমণের ধারা নিম্নমুখী হয়। নতুন বছরে পৃথিবী পরিপূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এটাই প্রত্যশা ভবিষ্যতে।

বিষণ্নতার ২০২২ কাটিয়ে ওঠার প্রত্যয়শারমিন আক্তার আয়শা, পরিসংখ্যান বিভাগএকটি বছর শেষ হয় নতুন বছরে, নতুন উদ্যমে কিছু শুরু করার প্রত্যাশায়। ঠিক সেভাবেই শুরু হয়েছিল ২০২২। প্রাপ্তি যেটুকুই হোক, অনাগত ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু প্রত্যাশা থাকবেই। তেমনি বছরটিতে শিক্ষাখাতে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষা, প্রাথমিকে বড় আকারে শিক্ষক নিয়োগ, দুই হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওকরণ, এইচএসসিতে বিতর্কিত প্রশ্নপত্রে পরীক্ষাসহ শিক্ষা খাতে ২০২২ সালে অনেক কিছুই ঘটেছে। এছাড়াও বিশ্বের বৈশ্বিক বাজারে আসে নানা পরিবর্তন। সামাজিক বিশেষ করে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আসে ব্যাপক পরিবর্তন। এছাড়াও ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ জয় সহ বছরটিতে ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ মানুষের মনে উন্মাদনার সৃষ্টি করেছে। তবে এত কিছুর পরেও বছরের শেষে দেশবাসী সব দুঃখ, কষ্ট, গ্লানি দূর করার শপথ নিয়ে সুন্দর দেশ গড়ার প্রত্যাশায় সবাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই। নতুন বছরে ভালো কিছুর আশায় দিন গুনছি, আসছে বছর সকল বাধা বিপত্তি পেরিয়ে ভালো কিছু করার প্রত্যয়ে।

সম্ভাবনার বছর ছিল ২০২২ইকরা ফুরকান ড্যাফোডিল, আইন বিভাগনতুন বছরের আগমনী বার্তার সঙ্গে বছর শেষ হওয়ার সুরও বেজে উঠেছে। করোনা মহামারিতে বিধ্বস্ত জীবন-জীবিকার ২০২১ সাল থেকে নতুন তিক্ত সফলতা-বিফলতা, উন্নয়ন-অনুন্নয়নের অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০২২ সালের যাত্রা শুরু হয়েছিল একটু বুক ভরা আশার আলোর স্বপ্ন নিয়ে। তবে বছরটি ছিল সম্ভাবনার। যতটুকু সম্ভব অর্জনের চেষ্টা করেছি তবুও কেন জানি কোথায় একটা আটকে যাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গন জুড়ে মুখরতা, ক্যাফেটেরিয়ার বন্ধুদের আড্ডাটাই ছিল বছরজুড়ে সম্বল। আমাদের জীবন থেকে আরও একটি বছর অতিক্রম করে চলে গেল। প্রতিটি বছর শেষে আমাদের সামনে প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী করোনার মধ্যেও বিশ্বের যে তিনটি দেশ মাছ উৎপাদনে সাফল্য দেখিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। এছাড়াও নিজেদের অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, দারিদ্র্যের হার হ্রাসসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে কালোত্তীর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

হতাশার মাঝেও প্রাপ্তির থলি অনেকটাই পূর্ণমো. আফজাল হোসেন, মনোবিজ্ঞান বিভাগ২০২২ সালের যাত্রা শুরু হয়েছিল একটু বুক ভরা আশার আলোর স্বপ্ন নিয়ে। এখন ২০২২ এর শেষ মুহূর্তে এসে বলা যায় স্বপ্ন পূরণ হয়েছে অনেকাংশেই। শুরু থেকে বললে বলতে হবে ২২ সালটি একটি প্রত্যাশার বছর। হাজারটা কালো মেঘের ছায়াকে সরিয়ে দিয়ে এসেছে সূর্যের দিন কমেছে মৃত্যুর দাপট। রোদের পরশে ফ্যাকাশে চারাগাছের মতো মাথা তুলে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে পৃথিবীর মানুষ। হয়তো মেঘ ঘনাবে আবার, তবু সাহসের পতাকা উড়াতে শিখেছে তারা। মৃত্যুর গন্ধমাখা, আতঙ্কের তীব্রতা বা ক্লান্তিভরা শিথিলতা এমন টানাপড়েনের মধ্য দিয়েই আমরা, বিধাতার করুণা পাওয়া মানুষগুলো পৌঁছে গেছে ২২ এর শেষের দিনগুলোতে। এই বছরকে ঘিরেও কিছু প্রত্যাশা সকলের ছিল। সব আশা পূরণ না হলেও প্রাপ্তির থলিটা একেবারেই খালি থেকে যায়নি। এছাড়া অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষার হার বৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষণীয়। এভাবেই যেন দেশের সার্বিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন হতে থাকে এবং এই সোনার বাংলাদেশ যেন একদিন উন্নয়নের চরম শিখরে পৌঁছে এটাই প্রত্যাশা। কুয়াশা ঘেরা আগামীর পথ হয়তো দেখাবে নতুন দিগন্ত এই আশা সকলের।

Advertisement

প্রত্যাশা-প্রাপ্তির বছর ২০২২আঁখি আক্তার বন্যা, ইতিহাস বিভাগবহমান সময়ের পরিক্রমা ও প্রকৃতির নিয়ম মেনে মহাকালের অতল গহ্বরে হারিয়ে গেল আরও একটি বছর। হারিয়ে যাওয়া বছরের মতো হারিয়ে যাবে আমাদের দেয়ালে ঝোলানো ক্যালেন্ডার। বারবার এটাই হয়, ক্যালেন্ডার বদলালেও বদলায় না দেয়াল ও দেয়ালে ঠোকানো পেরেকটা। তেমনভাবে আমাদের জীবনে বছর যায়, নতুন বছর আসে কিন্তু বদলায় না রোগ-শোক আর দুর্দশা। সবকিছু মিলিয়ে পুরোনো বছরটা খারাপ যায়নি। পুরোনো বছরের সকল দুঃখ-দুর্দশাকে ভুলে সব বাধাকে দূরে রেখে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে নতুন উদ্যমে নিজেকে ও নিজের দেশকে বিশ্বদরবারে পরিচিত করে তুলতে হবে। দুর্নীতি আর ধর্ষণমুক্ত দেশ হোক আগামীর বাংলাদেশ। আমাদের জন্মভূমিকে বিশ্বের বুকে আধুনিক রাষ্ট্রের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত করার স্বপ্নে এগিয়ে যেতে আমাদের। দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নতি অব্যাহত থেকে একটি ভালোবাসার বাংলাদেশ গড়ে উঠুক।

সুখী-সমৃদ্ধির বছর ২০২২সানজিদা মাহমুদ মিষ্টি, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটঅতীতের ব্যর্থতার গ্লানি মুছে নতুনভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখি। ২০২২ সাল যেমনি কাটয়েছি নতুন বছর যেন সবার কাছেই আশা আকাঙ্ক্ষার বার্তা নিয়ে আসে। সুখ-সমৃদ্ধির বছর ছিল ২০২২। সাফল্য ও অর্জনের খাতাটা শেষ করেছে বছরটি। বছরটির সব অপশাসন ও আগ্রাসী দুর্নীতিকে ধবংস করে দেশ ও জাতির উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধি আমাদের কাম্য। স্বপ্ন দেখি সামনের দিনগুলো অনেক বেশি ভালো যাবে। কিন্তু আমাদের এই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। স্বপ্ন যেন দুঃস্বপ্ন না হয়-এমন প্রত্যাশা করি। আমরা নতুন করে পথ চলতে পারব। নতুন স্বপ্নের কথা বলতে পারব। সব ধরনের প্রতিকূলতা ছাড়িয়ে এগিয়ে যেতে পারব সামনে। দেশের মানুষের প্রত্যাশা এরকমই। সবার চাওয়া ভবিষ্যৎ যেন ভালো হয়। নতুন বছরে মনুষ্যত্ববোধের সূচনা হোক মানুষের মধ্যে। যাতে সবাই একে অন্যের দুঃখে-কষ্টে পাশে থাকতে পারে। ২০২৩ সালে সব হৃদয়ে মানবতার উৎপত্তি হোক।

কেএসকে/এমএস