আন্তর্জাতিক

হর্ন অব আফ্রিকায় বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে ইরিত্রিয়া

হর্ন অব আফ্রিকা বা আফ্রিকার শৃঙ্গ ইরিত্রিয়া, ইথিওপিয়া, জিবুতি ও সোমালিয়া নিয়ে গঠিত। গত পাঁচ বছরে এই অঞ্চলে অস্থিরতা আরও বেড়েছে।

Advertisement

পাঁচ বছর আগে হর্ন অব আফ্রিকার রাজনীতিতে নতুন ভোর আসছে বলে মনে হয়েছিল। এই অঞ্চলের বৃহত্তম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশ ইথিওপিয়ায় বিক্ষোভের জেরে প্রধানমন্ত্রী হন আবি আহমেদ। তার ক্ষমতায় আসার পর একটি গণতান্ত্রিক ভাবধারার উন্মেষ ঘটেছিল এই অঞ্চলে। আফ্রিকার সবচেয়ে নিভৃতে থাকা ও স্বৈরাচারী প্রতিবেশী দেশ ইরিত্রিয়ার সঙ্গে আবি দ্রুত শান্তি স্থাপন করেছিলেন।

২০১৯ সালে আবি আহমেদের প্রচেষ্টাতেই ইরিত্রিয়ার সঙ্গে ইথিওপিয়ার পুরোনো বৈরিতার অবসান ঘটে। ১৯৯৮ সালে শুরু হওয়া সীমান্ত যুদ্ধে দুদেশের প্রায় ৭০ হাজার মানুষ নিহত হয়। ইথিওপিয়ার এই নেতা তার প্রচেষ্টার জন্য ২০১৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারেও ভূষিত হন।

এরপর সুদানেও আসে পরিবর্তন। নানাবিধ কারণে বিক্ষোভকারীরা ২০১৯ সালে ওমর আল-বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করলে তার ৩০ বছরের দীর্ঘ শাসনের অবসান ঘটে। সুদানও তার নিজস্ব একটি আশাব্যঞ্জক গণতান্ত্রিক উত্তরণ শুরু করে। সেখানেও আবি কাজ করেছেন। তিনি দেশটির বেসামরিক লোক ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে একটি চুক্তির জন্য আলোচনায় সহায়তা করেছিলেন।

Advertisement

২০২৩ সালে এই অঞ্চলের চিত্রপট আরও স্পষ্ট হচ্ছে। ইথিওপিয়ার সরকার ও তাইগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের (টিপিএলএফ) নেতারা অবশেষে সমঝোতায় পৌঁছেছে। প্রায় দুই বছর ধরে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলছিল। সেই ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় গত ২ নভেম্বর। তবে সেই চুক্তি এখন নড়বড়ে। এ ছাড়া সংঘাতও লেগে আছে। ফলে এটি এখনও ছড়িয়ে পড়তে পারে অন্যত্র, এমনকি ইথিওপিয়ার সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতেও।

সুদানে সশস্ত্র বাহিনী ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে নেয় এবং ক্ষমতা ছাড়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সুদানের ডি ফ্যাক্টো প্রেসিডেন্ট আবদেল-ফাত্তাহ আল-বুরহান ২০২৩ সালের জুলাইয়ে বা তার আগে নির্বাচন করার লক্ষ্য ঠিক করে রেখেছেন। তার এসব কার্যক্রম মিশর ও উপসাগরীয় অঞ্চলে তার পৃষ্ঠপোষক ছাড়া আর কাউকেই সন্তুষ্ট করবে না। তবুও বুরহান এবং তার সাবেক প্রতিদ্বন্দ্বী মুহাম্মদ হামদান দাগালোর মধ্যে উত্তেজনা বাড়াতে পারে এটি। দাগালো, একটি কুখ্যাত আধাসামরিক ইউনিটের প্রধান। এই ইউনিটকে বুরহান জাতীয় সেনাবাহিনীতে একীভূত করতে চান।

এই অঞ্চলের একমাত্র সম্ভাব্য উজ্জ্বল জায়গা হলো সোমালিয়া, যেখানে নতুন প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মোহাম্মদ আল-শাবাবের জিহাদিদের নিয়ন্ত্রণ করেন।

যদিও এই অঞ্চলের সাম্প্রতিক দুর্ভোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ইরিত্রিয়া। ২০২০ সালে দেশটির স্বৈরশাসক, ইসাইয়াস আফওয়ারকি, তাইগ্রেতে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আবিকে সাহায্য করার জন্য তার বিশাল বাহিনীকে পাঠান। শুধু তাই নয় স্বেচ্ছায় তাদের ফিরিয়ে নেবে না ইরিত্রিয়ার সরকার। ইসাইয়াস তাইগ্রিয়ান পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট যারা ইরিত্রিয়ার দক্ষিণ সীমান্ত বরাবর তাইগ্রে অঞ্চল পরিচালনা করে তাদেরকে অস্তিত্বের হুমকি হিসাবে বিবেচনা করেন। আবি তাদের সঙ্গে যে শান্তি চুক্তি করেছেন তার কারণে ভেসতে যেতে পারে।

Advertisement

ইসাইয়াসের বিপদ তাইগ্রে ছাড়িয়ে অন্যত্রও। গোপন প্রশিক্ষণের জন্য ইরিত্রিয়ায় পাঠানো কয়েক হাজার সোমালি সৈন্য এখনও দেশে ফিরেনি। সুদানের নেতারা আশঙ্কা করছেন, যদি ইরিত্রিয়ান বাহিনী তাইগ্রেতে জয়লাভ করে, ইসাইয়াস তার দৃষ্টি পূর্ব সুদানের দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারেন। সুদানের বিদ্রোহীদের সমর্থন করার ইতিহাসও রয়েছে ইরিত্রিয়ার।

পশ্চিমা দেশগুলো ২০২৩ সালে ইসাইয়াসকে ঘনিষ্ঠভাবে নজরে রাখবে এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা বাড়াতে পারে। কিন্তু রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কও একটি জটিল সমীকরণে রয়েছে দেশটির। চীন ইরিত্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি আর্থিক সহায়তাকারী দেশ এবং দেশটির গুরুত্বপূর্ণ খনিতে তার নিয়ন্ত্রণ প্রসারিত করছে। রাশিয়া লোহিত সাগরে একটি নৌ ঘাঁটি খুঁজছে, যেন অস্ত্র পাঠাতে পারে। তবে হর্নের স্পয়লার ইন-চিফের আচরণ পরিবর্তন করার সম্ভাবনা ক্ষীণ যখন শক্তিশালী বন্ধুদের সমর্থন উপভোগ করে।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

এসএনআর/জিকেএস