জামতলার অষ্টাদশী কন্যা সানজিদার আজ বিয়ে। বিয়ে উপলক্ষে সপ্তাহজুড়েই আলো ঝলমল করছে ভূইয়া বাড়ি। ভূইয়ারা এলাকায় প্রভাবশালী। ঐতিহ্য ধরে রাখতে জাঁকজমক তো হতেই হবে। তিনদিন আগে থেকেই আত্মীয়-স্বজনের হইচই আর আড্ডায় গমগম করছে পুরো বাড়ি।
Advertisement
গত রাতে হয়ে গেছে সানজিদার গায়ে হলুদ। গায়ে হলুদ উপলক্ষে অনেক রাত পর্যন্ত গানের তালে তালে নেচেছে শহর থেকে আসা একদল নৃত্যশিল্পী। সানজিদার বাবা বিত্তশালী। জামতলা বাজারে বড় ব্যবসা তার। একমাত্র মেয়ের বিয়ের আয়োজনে তাই কমতি রাখেননি কোনো।
আজ শুক্রবার। সব ঠিকঠাক করে জুমার নামাজে যতে হবে। তাই সকাল থেকেই সবার ব্যস্ততা বেড়েছে। বরযাত্রীর বসার জায়গা, মেহমানদের বিশ্রামের জায়গা ও রান্নার তদারকি করছে কেউ কেউ। সকাল থেকেই বাড়ির শিশুরা উদগ্রীব হয়ে আছে, ‘কখন আসবে বর?’
অপেক্ষার প্রহর শেষে জামতলা বাজার মসজিদ থেকে জুমার নামাজ পড়ে দুপুরের দিকে চলে আসে বরযাত্রী। বিয়ের গেটের সামনে টেবিল নিয়ে বসেছে ছেলে-মেয়েরা। মিষ্টি, ফুল, পান, সুপারি, জর্দা দিয়ে সাজিয়েছে সুন্দর করে। গেট পেরোতে হলে কম করে হলেও দশ হাজার টাকা দিতে হবে। এটাই তাদের দাবি।
Advertisement
বরের পরিবারও গ্রামীণ ঐতিহ্য রক্ষা করেছে। তিনটি প্রাইভেটকার ও একটি বাসে করে এসেছে বরযাত্রী। বাসের ছাদে করে একটা পালকিও এনেছে। বাস থেমেছে জামতলা বাজারে। সেখান থেকে পালকিতে চড়ে বিয়ে বাড়ি পর্যন্ত এসেছে বর।
পালকি থেকে নামতেই বরকে দেখে অবাক সবাই। এ আবার কে? ছেলে প্রবাসী ছিল জানে সবাই। তারপরও ছোট-বড় সবাই তো তার ছবি দেখেছে। যে ছেলের সঙ্গে বিয়ের কথা ছিল, সেই ছেলে তো তাহলে আসেনি। এ তো ভারী গণ্ডগোল!
শুরু হয়ে গেল কানাগুসা। মেয়ের আত্মীয়-স্বজনরা পড়লেন দুশ্চিন্তায়। উত্তেজিত হয়ে ঘটককে ধরে উত্তম-মাধ্যম দিতে গেলেন। অবস্থা বেগতিক দেখে হঠাৎ ভিড়ের মধ্য থেকে একটি ছেলে বলে উঠল, ‘আপনারা শান্ত হোন। আমি বর’।
পরে জানা গেল, বর সাজা ছেলেটি বরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারা শুধু পোশাক বদলে এসেছেন। চমকে দিতে চেয়েছিলেন সবাইকে। এ যাত্রায় তো তারা সফল। চারিদিকে হাসির রোল পড়ে গেল। আনন্দ পেলেন সবাই। এবার বরকে তো তৈরি হতে হবে। কনের মামার সহযোগিতায় বরকে আর তার বন্ধুকে পাঠানো হলো পোশাক পরিবর্তন করতে।
Advertisement
এসইউ/এএসএম