দেশজুড়ে

পরিযায়ী পাখির কিচিরমিচিরে মুখরিত বিষখালী নদী তীর

ঝালকাঠির ভাটারাকান্দা ও দিয়াকুল গ্রামের বিশখালী নদী তীরবর্তী এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে অসংখ্য পরিযায়ী পাখি। এসব পাখির আগমনে বেড়েছে প্রকৃতির শোভা। পাখির কিচিরমিচিরে মুখরিত বিষখালী নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো। প্রতিবছর শীতে দূর-দূরান্ত থেকে পরিযায়ী পাখিরা আসে আমাদের দেশে। ভ্রমণপিপাসু মানুষ পাখি দেখতে ভিড় করে নদী তীরের বিভিন্নস্থানে। পাখিদের কলকাকলি প্রকৃতির শোভা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে।

Advertisement

আবাসিক ও পরিযায়ী পাখি মিলে আমাদের দেশে প্রায় ৬৫০ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এর মধ্যে ৩৬০ প্রজাতির পাখি আবাসিক। বাকি ৩০০ প্রজাতি পরিযায়ী পাখি। সব পরিযায়ী পাখি শীতের সবসময় আসে না। ৩০০ প্রজাতির মধ্যে ২৯০টি শীত মৌসুমে আসে ও ১০টি প্রজাতি থেকে যায়।

পাখিপ্রেমি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শামসুল হক মনু বলেন, শীত এলেই জলাশয়, নদীর তীরের নিরাপদস্থানসহ বিভিন্ন হাওর, বিল ও পুকুর পাড়ে দেখা মিলে নানা রং-বেরংয়ের নাম জানা, অজানা পাখির। অথচ বেআইনিভাবে শিকার হচ্ছে এসব পাখি। পরিযায়ী পাখি আমাদের বন্ধু, আমাদের ঐতিহ্য, গর্ব ও প্রেরণা। এ পাখিগুলোকে অচেনা পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আমাদের বন্ধুসুলভ আচরণ করা দরকার। এ পাখিগুলো রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।

তিনি আরও বলেন, অতিথি পাখিদের বিচরণভূমি ক্রমশ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। বন-জঙ্গল কেটে উজাড় করে ফেলায় পাখিরা হারাচ্ছে তাদের নিরাপদ আশ্রয়। আবার ফসলি জমিতে কৃত্রিম সার এবং মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের কারণে বিষে আক্রান্ত কীটপতঙ্গ খেয়ে মারা যাচ্ছে অতিথি পাখিরা।

Advertisement

বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী পরিযায়ী পাখি হত্যার দায়ে অপরাধীকে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ একলাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। একইভাবে কোনো ব্যক্তি যদি পরিযায়ী পাখির মাংস, দেহের অংশ সংগ্রহ করেন, দখলে রাখেন কিংবা ক্রয়-বিক্রয় করেন বা পরিবহন করেন, সেক্ষেত্রে তার সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার আইন প্রচলিত রয়েছে। অতিথি পাখি নিধন এবং বাজারে বিক্রি নিষিদ্ধ জেনেও আইনের ফাঁকে এক শ্রেণির পেশাদার এবং শিকারি কাজগুলো করে চলেছে।

ঝালকাঠি সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জেবুন্নেছা বলেন, পাখিদের বাসস্থান সংকট, বিষটোপ ব্যবহার করে খাদ্য সংকট, জীবন বিপন্ন করা, শিকার, পাচারসহ ইত্যাদি কারণে আশঙ্কাজনক হারে আমাদের দেশে শীতে পাখি আসার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আইন প্রয়োগে কঠোর হতে হবে। তবে আমরা সচেতন না হলে আইন প্রয়োগে খুব একটা সফলতা পাওয়া যাবে না। প্রশাসনের সঙ্গে আমাদেরও সহযোগিতা করতে হবে।

আতিকুর রহমান/জেএস/এএসএম

Advertisement