পাবনার মরা কমলা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ৮ বছর পরও তৈরি হয়নি কোনো সংযোগ সড়ক। এতে করে এলাকাবাসীর কোনো কাজেই আসছে না সেতুটি। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাজার হাজার মানুষকে। পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের বেতবাড়িয়া ও রামনাথপুর গ্রামের মধ্যবর্তী মরা কমলা নদীর ওপর ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে নির্মাণ করা হয়েছে একটি সেতু। যার ব্যয় ছিল চার কোটি ১১ লাখ ৬১ হাজার ৬৮২ টাকা। ১৬ ফুট দৈর্ঘ্য এ সেতুর দুই পাশে সরু পায়ে হাঁটা পথ থাকলেও নেই কোনো সংযোগ সড়ক।
Advertisement
বেতবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা শামসুর রহমান সুমন বলেন, এ সেতুটি নির্মাণ করা হলেও জনগণের কোনো উপকারে আসছে না। সেতুর দুপাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এখন পায়ে হেঁটে চলাচল করা গেলেও বর্ষা মৌসুমে সেতুর দুই পাশে পানি থাকে ফলে তখন কেউ চলাচল করতে পারে না। এ সেতুর একপাশে সড়ক নির্মাণের জায়গা ছিল না স্থানীয় বাসিন্দা আজাদ প্রামাণিক ছয় শতাংশ জমি রাস্তার নির্মাণের জন্য দিয়েছেন তবুও রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে না। ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছে বহুবার গিয়েছি তারা কোনো পদক্ষেপ নেননি। প্রতিবার নির্বাচনের আগে সড়ক নির্মাণের জন্য মাপামাপি করা হলেও নির্বাচনের পর আর কেউ খোঁজ নেয় না।
লুৎফর রহমান নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, বেতবাড়িয়া ও রামনাথপুর গ্রামের মধ্যে এ সেতুটি নির্মাণ হলেও শুধুমাত্র সংযোগ সড়ক না থাকায় কৃষি পণ্য নিয়ে দুই তিন কিলোমিটার ঘুরে হাট বাজারে যেতে হয়। অথচ সেতুর ওপর দিয়ে গিয়ে পাকা সড়কে উঠতে মাত্র পাঁচ মিনিট সময় লাগে। অন্য সড়ক দিয়ে ঘুরে গেলে এক ঘণ্টার বেশি সময় ব্যয় করতে হয়।
ভুক্তভোগী মোমেনা খাতুন বলেন, এ সেতুটি আট বছর আগে নির্মিত হলেও কোনো সুফল পাচ্ছেন না গ্রামের মানুষ। শুধু দুইপাশে সড়ক না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রামবাসীর। আমরা গ্রামের সাধারণ মানুষ। কে শুনবে আমাদের দুঃখ-কষ্টের কথা।
Advertisement
চম্পা বেগম নামের আরেকজন বলেন, সেতু আছে রাস্তা নাই। এ দুঃখ কাকে বলবো? আবাদের সবজি বাজারে নিয়ে যেতে কষ্ট হয়। বর্ষা হলে সেতুর দুপাশে মাজা সমান পানি হয়। সেতু দিয়ে তখন হেঁটেও যাওয়া যায় না। এ গ্রামের রাস্তা কাঁচা, বৃষ্টি-বর্ষায় চলাচল করা কষ্টকর। গ্রামের ছেলে-মেয়েদের বিয়ের কথা বার্তা হওয়ার পর বাড়িতে দেখাদেখির জন্য এলে রাস্তা নেই এ অজুহাতে বিয়ে ভেঙ্গে যায় এমন ঘটনাও একাধিক ঘটেছে।
মুলাডুলি ইউপি সদস্য (মেম্বার) নাজিম উদ্দিন বলেন, সংযোগ সড়ক না থাকার বিষয়টি আমি জানি। এ সড়কের পূর্ব পাশে ব্যক্তি মালিকানা জায়গার কারণে সে সময় সড়ক নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে জমির মালিক সড়ক নির্মাণের জন্য জায়গা দিয়েছে। সেতুর দুই পাশে মাটি ভরাটের পাশাপাশি এ রাস্তাটি পাকাকরণের জন্য চেষ্টা করেছি। ইউপি চেয়ারম্যান সেতু পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। আশাকরি শীঘ্রই সংযোগ সড়ক নির্মিত হবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। দুই একদিনের মধ্যেই খোঁজখবর নিবো। সংযোগ সড়ক দ্রুত নির্মাণের ব্যবস্থা নিব।
মুলাডুলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক মালিথা বলেন, সেতু নির্মাণের পরে এখানে সংযোগ সড়ক নির্মাণ হয়নি এটি আমি জানি। মাত্র এক বছর হয়েছে আমি চেয়ারম্যান হয়েছি। এরই মধ্যে সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। এ সেতুটি কমলা নদীর ওপর নির্মিত। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই কমলা নদীর খনন কাজ শুরু হবে। খননের মাটি দিয়েই এখানে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে।
Advertisement
শেখ মহসীন/জেএস/এমএস