মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় গড়ে উঠেছে হোগলা পাতা, খেজুর পাতা, সন্ধ্যা পাতা, কলাপাতা, খড় ও পাটের তৈরি বিভিন্ন কারুপণ্যের শিল্প। তৈরি এসব পণ্য দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে রপ্তানি হচ্ছে যুক্তরাজ্য-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে। এতে ভাগ্য বদলে গেছে উপজেলার নয়ানগর, ষোলআনি, ফুলদী, চরকিশোরগঞ্জ গ্রামের শতাধিক পরিবারের। অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে হাতে তৈরি এসব পণ্য বিক্রির মাধ্যমে বাড়তি আয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে বহু মানুষের।
Advertisement
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ‘মা-বাবার দোয়া হ্যান্ডিক্রাফট’ নামে প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করে আসছেন তারা। যার স্বত্তাধিকারী উপজেলার নয়ানগর গ্রামের মো. আহসান উল্লাহ ভূঁইয়া। মূলত তার অনুপ্রেরণাতেই এ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়েছেন গ্রামগুলোর ১১৫টি পরিবার। তাতেই ভাগ্য বদলেছে পরিবারগুলোর।
আহসান উল্লাহর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পোশাক কারখানায় ৪৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতেন তিনি। ২০১৪ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে হ্যান্ডিক্রাফটের ওপর ঢাকায় প্রশিক্ষণ নেন। এরপর ২০২০ সালে ৫ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে নিজ গ্রামে শুরু করেন হোগলা পাতা, খেজুর পাতা, সন্ধ্যা পাতা, কলাপাতা, খড় ও পাটের তৈরি হ্যান্ডি ক্রাফটের পণ্য তৈরি। পরবর্তীতে তিনি ‘মা-বাবার দোয়া’ নামে প্রতিষ্ঠানে গড়ে তোলেন।
তার এই প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি নয়ানগর ছাপিয়ে পৌঁছে যায় ষোলআনি, ফুলদী ও চরকিশোরগঞ্জ গ্রামেও। এখন গ্রামগুলোর শতাধিক পরিবারের নারী-পুরুষের হাতে তৈরি হচ্ছে ফলের ঝুড়ি, ফুলের ঝুড়ি, চামচ রাখার ঝুড়ি, বিভিন্ন প্রকার শোপিস ও হাত ব্যাগসহ নানা পণ্য।
Advertisement
আহসান উল্লাহ জানান, দেখতে নান্দনিক ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এসব পণ্যের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আমেরিকা, লন্ডন, রাশিয়া, চীন, জাপান, ইতালি, সিঙ্গাপুর, কানাডাসহ বিশ্বের ৪৫টি দেশে রফতানি করছেন।
তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজে কিছু করার স্বপ্ন ছিল। এসএসসি পাস করার পর আর লেখাপড়া করা হয়নি। ২০১৪ সালে চাকরি ছেড়ে মামার সহায়তায় ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি হ্যান্ডিক্রাফট তৈরি প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ শেষে বেশ কিছুদিন চাকরি করি। তারপর প্রথমে গাজীপুরে কারখানা তৈরি করি। কিন্তু আমার গ্রামের মানুষকে নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন রয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০২০ সালে প্রথমে নিজ গ্রামের নারী-পুরুষদের নিয়ে কাজ শুরু করি। বর্তমানে প্রতিমাসে ২ লাখ টাকার পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়। মূলত পলিথিনের ব্যবহার এড়িয়ে চলা দেশগুলোতে এসব পণ্যের বেশি চাহিদা।
একই গ্রামের সোফিয়া বলেন, আমার স্বামী কৃষিকাজ করে সংসার চালাতেন। এখন হোগলা পাতা, খেজুর পাতা, সন্ধ্যা পাতা, কলাপাতা দিয়ে পণ্য তৈরি করে বাড়তি রোজগার হচ্ছে আমাদের। পরিবারের ৩ সদস্য আমাকে এ কাজে সহযোগিতা করে থাকে। এতে আমার পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
এ শিল্পের মাধ্যমে অবসরে আয়ের পথ খুঁজে পেয়েছেন নয়ানগর গ্রামের হালিমা বেগম। তিনি জানান, ৩ বছর আগে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এ কাজ শুরু করি। অবসর সময়ে ঘরে বসেই এ কাজ করছি। এতে মাসে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা রোজগার হয়। আবার কোনো মাসে বেশিও হয়। এতে পরিবারের বাড়তি রোজগার হচ্ছে।
Advertisement
এ পেশায় জড়িত আরো কয়েকজন জানান, সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা ও সরকারি সহযোগিতা পেলে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে পারবেন বলে আশা তাদের। তবে প্রচারের অভাব এখন প্রথম প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করেন তারা। মানুষের ব্যবহার বাড়লে এ পণ্য তৈরি আরো বিস্তার হবে বলে জানান তারা।
মুন্সিগঞ্জ বিসিকের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানলাম। বিসিক এসব ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ ও ঋণ সহযোগিতা দুইটি বিষয়ে সহযোগিতা করে থাকে। তারা যেহেতু ভালো পণ্য তৈরি করে তাই প্রশিক্ষণের প্রয়োজনিয়তা নেই। তবে ঋণ সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমরা তা করবো। এছাড়া দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মেলায় যেখানে বিসিক অংশগ্রহণ করে সেখানে যদি এসব পণ্য নিয়ে অংশগ্রহণ করতে চায় আমরা সে সুযোগ তৈরি করে দিবো।
এফএ/এমএস