বিশ্বব্যাপী প্রায় ৭০ লাখ মানুষের অকালমৃত্যু হয় বায়ুদূষণ তথা পরিবেশ দূষণের কারণে। বাংলাদেশে এ পরিসংখ্যানটির ছবি আরও করুণ। বিশেষ করে শীতকাল এলে শুষ্ক-রুক্ষ আবহাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায় বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ। বাতাসে ভেসে বেড়ানো অদৃশ্য কণাগুলো আমাদের নিঃশ্বাসের সঙ্গে খুব সহজেই শরীরের বিভিন্ন অংশ ও কোষে পৌঁছে যেতে পারে।
Advertisement
এতে মানবদেহ অ্যাজমা, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও ডিমেনশিয়ার মতো কঠিন ও দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হতে পারে। দূষিত বাতাসে নিয়মিত শ্বাস নেওয়ার কারণে মানুষ শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ ও মৌসুমি অ্যালার্জিসহ নানা রকম কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। তা ছাড়া শুরু থেকেই দূষিত বাতাসে শ্বাস নেওয়ার কারণে শিশুরাও দীর্ঘস্থায়ী জটিল সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে।
সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, বিশ্বব্যাপী আবহাওয়ার মান পর্যবেক্ষণে জনপ্রিয় ও স্বীকৃতি প্ল্যাটফর্ম ‘এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স’ (একিউআই) বলছে, বাংলাদেশ (বিশেষ করে ঢাকা) তাদের মানদণ্ডে ‘অস্বাস্থ্যকর’ অংশে অবস্থান করছে। একই কারণে এরইমধ্যে ঢাকা বেশ কয়েকবার ‘বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর’গুলোর তালিকায় উপরের দিকে উঠে এসেছে।
ডব্লিউএইচও’র (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) বার্ষিক এয়ার কোয়ালিটি গাইডলাইন ভ্যালুতে প্রায়ই ঢাকার বাতাসে পিএম২.৫ (২.৫ মাইক্রন বা তার চেয়ে ছোট ধূলিকণা, যা নানা রকম ভয়ংকর স্বাস্থ্যঝুঁকির অন্যতম কারণ) এর উপস্থিতির কথা বলা হয়, যা শহরের বাসিন্দাদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
Advertisement
আমাদের মনে হতে পারে, ঘরের ভেতর তো আমরা নিরাপদই আছি। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে ঘরের ভেতরের বাতাসের মান বাইরের বাতাসের চেয়েও খারাপ হতে পারে। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, নানা ধরনের পরজীবী, পোষাপ্রাণীর পশম ও খুশকিসহ বিভিন্নরকম জৈব দূষণকারী পদার্থ ঘরের বাতাসে মিশে থাকতে পারে।
ঘরের ভেতরের বাতাসেও কার্বন মনোঅক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাস ও রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া যেতে পারে, যা হতে পারে স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য ব্যক্তিগত ও সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি প্রয়োজন নিত্যনতুন প্রযুক্তিগত অনুষঙ্গের ব্যবহার। বাইরের বায়ুদূষণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সময়সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য হলেও ঘরের ভেতরের বাতাসকে নিরাপদ রাখতে এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্নরকম এয়ার পিউরিফায়ার।
ব্র্যান্ড, কার্যক্ষমতা ও ফিচারভেদে বিভিন্ন দামে পাওয়া যাচ্ছে হালের জনপ্রিয় এ গৃহস্থালি অনুষঙ্গটি। ভিশন, স্যামসাং, ওয়ালটন ও শাওমিসহ বেশকিছু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন মডেলের এয়ার পিউরিফায়ার নিয়ে এসেছে। যা ঘরে ও অফিসে অনেক বড় নিরাপত্তা বলয় তৈরি করতে সক্ষম।
Advertisement
এগুলোর ডিজিটাল ডিসপ্লের মাধ্যমে ঘরের বাতাসের মান যাচাই করা যাবে খুব সহজেই। এর লেজার পিএম সেন্সর অতিক্ষুদ্র ধূলিকণা ও গ্যাসীয় বস্তু শনাক্ত করতে সক্ষম। এটি ঘরের ভেতরের বাতাসকে পরিশুদ্ধ করতে বড় কণা থেকে ছোট ধূলিকণা আলাদা করে বিষাক্ত গ্যাস ও জীবাণুকে কয়েক স্তরের পিউরিফিকেশন প্রসেসের মাধ্যমে নিরাপদ করে।
এ ছাড়া ঘরের ভেতরের দূষিত গ্যাসকেও বের করে দেয়। ডাস্ট ফিল্টারের মাধ্যমে ধূলিকণা পরিশুদ্ধ করতে সক্ষম। তার ওপর মুহূর্তেই বাতাসকে জীবাণুমুক্ত করে। বাতাসের দূষণের মাত্রাকে পরিমাপ করতে পারে। এমনকি বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে পারে। জীবনকে আরও সহজ করতে এ যন্ত্রটি ব্যবহার করাই যেতে পারে।
এসইউ/জেআইএম