জাগো জবস

বিসিএস হচ্ছে ধৈর্য আর পরিশ্রমের ফল

মো. আনিসুর রহমান ৪০তম বিসিএসে কৃষি ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার শৈশব ও বেড়ে ওঠা টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার গয়হাটা ইউনিয়নের বনগ্রামে। তিনি সরকারি যদুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে এসএসসি এবং উত্তরা সায়েন্স কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি বিজ্ঞানে স্নাতক এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

Advertisement

বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় ‘কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা’ হিসেবে কর্মরত। সম্প্রতি তার বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া, সফলতার গল্প ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—

জাগো নিউজ: ৪০তম বিসিএসে কৃষি ক্যাডার পেয়েছেন, আপনার অনুভূতি কেমন?মো. আনিসুর রহমান: খুবই ভালো লাগছে। আল্লাহ আমার পরিশ্রমকে সার্থক করেছেন। সেজন্য আলহামদুলিল্লাহ। ভবিষ্যতে সবার দোয়া ও ভালোবাসা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাই।

জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?মো. আনিসুর রহমান: বিসিএস নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের তৃতীয় বর্ষ থেকে। বন্ধুদের প্রিলির বই পড়া দেখেই আগ্রহ ও ভালো লাগা তৈরি হয়েছে। এই নিয়ে বাবা-মায়ের সাথে আলোচনা করলে তারা খুবই খুশি হন। আমাকে ভরসা দেন। পাশাপাশি অনুপ্রেরণা দেন। খুবই ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছি বলে অভিবাদন জানান। পরবর্তীতে ভার্সিটির বড় ভাইদের কাছ থেকে সাহস ও অনুপ্রেরণা নিয়ে বই কিনে প্রস্তুতি নিতে শুরু করি।

Advertisement

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, পাশাপাশি প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?মো. আনিসুর রহমান: আমি মূলত পড়াশোনা শুরু করি ৩৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি সার্কুলার হওয়ার পর। ২০১৫ সালের শুরুর দিকে তখন আমি মাস্টার্সে পড়াশোনা করি। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) দুজন বড় ভাই রুমমেট ছিলেন। তাদের একজন (লাজু ভাই) ৩৪তম বিসিএসে মৎস্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় আমার ভেতর আরও পড়াশোনার আগ্রহ বেড়ে যায়। সেই থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন না হওয়ায় ৩৬-৩৭তম বিসিএস প্রিলি ফেল করি। ৩৮তম বিসিএসে প্রিলি, রিটেন ও ভাইভা পাস করলেও নন-ক্যাডার আসে। অবশেষে ৪০তম বিসিএসে এসে সফলতার দেখা পেলাম।

জাগো নিউজ: পর্দার আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?মো. আনিসুর রহমান: আমার সব সময়ের অনুপ্রেরণা আমার বাবা, মা এবং স্ত্রী। তারা আমার খারাপ সময়ে পাশে থেকেছেন। পাশাপাশি সাহস জুগিয়েছেন। তাদের কাছে আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।

জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএস প্রিলির জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?মো. আনিসুর রহমান: নতুনদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, নিজের প্রতি বিশ্বাস রেখে সর্বোচ্চ সময় পড়াশোনার টেবিলে কাটানোর চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিসিএস হচ্ছে ধৈর্য আর পরিশ্রমের ফল। ধৈর্য ধরে সঠিকভাবে নিয়মিত পড়াশোনা করলে তার সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ৮-১২ ঘণ্টা পড়তেই হবে এমনটা নয়। তবে ধৈর্য ধরে যত বেশি সময় নিয়ে পড়বেন; প্রস্তুতি ততই ধারালো হবে। গণিত, ইংরেজি, বাংলা, বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তিতে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। সাধারণ জ্ঞান নিয়ে বেশি মাথা ঘামানোর দরকার নেই। তবে গুরুত্ব কম দেওয়া যাবে না আবার বেশিও দেওয়া যাবে না। নিয়মিত গণিত চর্চা করতে হবে। গণিত আর ইংরেজিতে খারাপ করলে প্রিলি পাস করা কঠিন হয়ে পড়বে।

জাগো নিউজ: প্রিলি শেষ করার পর বিসিএস লিখিত প্রস্তুতি নিয়ে আপনার পরামর্শ কী?মো. আনিসুর রহমান: প্রিলি শেষে আপনার যদি মনে হয় আমি পাস করতে পারি, তাহলে কাট মার্ক নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে লিখিত প্রস্তুতি শুরু করতে পারেন। গণিত, ইংরেজি আর বিজ্ঞান বেশি গুরুত্ব বহন করে। নিয়মিত গণিত চর্চার পাশাপাশি ইংরেজি পত্রিকা পড়তে পারেন ট্রান্সলেশন অংশে ভালো করার জন্য। এ ছাড়া বাংলা দৈনিক পত্রিকা থেকে বিভিন্ন ডাটা ও ইনফরমেশন সংগ্রহ করতে হবে। লিখিত পরীক্ষায় ভালো নাম্বার পেতে হলে গৎবাঁধা না লিখে তথ্যমূলক লিখলে বেশি নাম্বার আসবে।

Advertisement

জাগো নিউজ: বিসিএস ভাইবার প্রস্তুতি কেমন হতে হয়?মো. আনিসুর রহমান: ভাইবা হচ্ছে সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ। এখানে অনেকেই নার্ভাস হয়ে পড়ে বলে জানা জিনিসগুলো বলতে পারে না। কিংবা সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারে না। ভালোমতো পড়াশোনা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলে। মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, সংবিধান, নিজ জেলা, নিজ সাবজেক্ট আর সরকারের চলমান কার্যক্রম সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে যেতে হবে। ভাইবা বোর্ডে ভালো করতে হলে মক ভাইবা দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বন্ধুদের হেল্প নিতে পারেন। তাদের ২-৩ জনকে পিএসসি যেভাবে ভাইবা নেয় ওইভাবে ডেমো ভাইবা দিলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। কিংবা কোনো কোচিংয়ে ভাইবা কোর্সে ভর্তি হতে পারেন।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?মো. আনিসুর রহমান: একজন ভালো মানুষ ও দেশপ্রেমিক হতে চাই। দেশের মানুষকে কৃষি বিষয়ক যে সেবা দেওয়ার ব্রত নিয়ে চাকরিতে জয়েন করেছি, তা বাস্তবায়ন করতে চাই। কৃষক ও কৃষিবিদ একত্রিত হয়ে দেশের খাদ্য উৎপাদন ও কৃষি বিষয়ক অন্যান্য বিষয়ে অবদান রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

এসইউ/এএসএম